মতামত

নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস এবং কিছু কথা

মোঃ কায়ছার আলী

“আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে, কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাইরে, পাহাড় শিখায় তাহার সমান হই যেন ভাই মৌন- মহান” আকাশের মত ঔদার্য,ক্লান্তিহীন বায়ুর মত কর্মীদের প্রেরণা এবং পাহাড়ের মত উচ্চতা নিয়ে যিনি আজও মাথা উঁচু করে বেঁচে ছিলেন, তিনি হলেন পৃথিবীর আপামর জনগণের অবিসংবাদিত নেতা এবং দুনিয়া কাঁপানো মাহাত্ব্যের মুকুট নিয়ে দেশে দেশে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে জাতীয় সংহতির বীজ বপন ও পূনর্জ্জীবন বাস্তবায়ন করেছেন ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী ও মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিং এর জীবনীর প্রতি যার আগ্রহ বেশি তিনি হলেন অহিংস বর্ণবাদ বিরোধী দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ঊহষরমযঃবহবফ ্ খবমবহফ  নেলসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিন আফ্রিকার মানুষ তাঁকে আদর করে মাদিবা নামে ডাকে। এছাড়াও কিছু মহান ব্যক্তিত্বের পদচারণায় পৃথিবীর ইতিহাসে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করেছেন শত্রুকে অর্থাৎ রাজা পুরুকে হাতের কাছে পেয়ে বিজয়ী হয়ে প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে উদাহরণ স্থাপন করেছেন এজন্যই তো তিনি মহাবীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট।  ক্ষমতার রাজনীতি থেকে নতুনদের হাতে নেতৃত্ব দিয়ে স্বেচ্ছায় অবসর নেন আধুনিক মালয়েশিয়ার উন্নয়নের রুপকার কিংবদন্তি প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। ভারতের পশ্চিম বঙ্গের আলোকিত মুখ্যমন্ত্রী বর্ষিয়ান প্রয়াত জননেতা জ্যোতিবসু। ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে নিজেই অন্যজনকে সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে স্বেচ্ছায় সরে আসেন বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তবে আজকে লেখার কেন্দ্রবিন্দু হলেন মহত্ব এবং উদারতা অর্জনকারী এবং সাদা কালোর মৈত্রীর সেতুবন্ধনকারী, শান্তি আর সম্প্রীতির দাঁড়িয়ে থাকার স্তম্ভ বিশ্ববরেণ্য নেলসন ম্যান্ডেলা। কেন এবং কি জন্য একজন মানুষের জন্ম দিন কে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিল। আজকে (১৮ জুলাই) নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন তাই তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং ইন্টারনেট সার্চ করে  লিখছি । ২০০৯ সালের ২৭শে এপ্রিল কনসার্ট ৪৬৬৬৪ এবং নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস প্রতিষ্ঠা ও পালনে বিশ্ব জনগোষ্ঠির সহায়তা ও সমর্থন কামনা করেন। তদপরিপ্রেক্ষিতে  গত ২০০৯ সালে নভেম্বরে সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন আফ্রিকার স্থপতি এই মহান নেতা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিনকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন। জাতিসংঘের ১৯২ সদস্য মহাসচিবের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে প্রস্তাবটি গ্রহন করে। তাই ২০১০ সাল জাতিসংঘ দিনটিকে নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস (১৮ জুলাই) হিসেবে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে যথাযথ মর্যাদার সাথে সারা বিশ্বের মত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও পালন করছে। ১৯১৮ সালে ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার উমটাটায় কৃষ্ণাঙ্গ রিজার্ভ ট্রান্সকিই শহরের রাজধানীতে মুভিজোর নামক গ্রামে পিতা হেনরি গাডলাও মাতা- নোসিকেনী দম্পতি ঘরে তিনি জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা ছিলেন গ্রাম্য মোড়ল। তবে ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরাগ ভাজন হওয়ার পরে তারা তাঁর পিতাকে পদচ্যুত করেন। তিনি তখন তাঁর পরিবার সহ কুনু গ্রামে বসতি স্থাপন করেন।ম্যান্ডেলার বাবার মৃৃত্যুর পর দালিন্দ্যেবো তাঁকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহন করেন। সেখানেই তিনি আস্তে আস্তে বেড়ে উঠেন। আর নেতৃত্বের গুণটা পারিবারিক ভাবে তাঁর মধ্যে প্রবেশ করে। ম্যান্ডেলা ছিলেন তাঁর পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলে পড়ার সময় তাঁর শিক্ষিকা এমদিনগান ম্যান্ডেলার ইংরেজি নাম রাখেন নেলসন। ম্যান্ডেলা রাজপ্রাসাদের কাছের একটি মিশনারী স্কুলে পড়াশোনা করেন। থেম্বু রীতি অনুযায়ী ১৬ বছর বয়সে তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর গোত্রে বরণ করে নেয়া হয়। এরপর তিনি ক্লার্কবারি বোর্ডিং ইন্সটিটিউট থেকে তিন বছরের জায়গায় মাত্র দুই বছরেই জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাশ করেন। স্কুল পাশ করার পর ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এ কোর্সে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষের শেষে ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্র সংসদের ডাকা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এরপর তাকে ফোর্টস হেয়ার থেকে চলে যেতে বলা হয়। শর্ত দেয়া হয় কেবল ছাত্র সংসদে নির্বাচিত হতে পারলেই তিনি সেখানে ফেরত আসতে পারবেন। জীবনের পরবর্তী সময়ে কারাগারে বন্দী অবস্থায় তিনি ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা দুরশিক্ষণ কার্যক্রমের অধীনে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি অব   উইটওয়াটার্সরান্ডে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শুরু করেন। ছাত্র অবস্থায় সাদা কালোর ভেদাভেদ তাঁকে মানসিক ভাবে উৎপীড়িত করত। সাদারা পরিধান করতো দামি কাপড় আর খেত দামী খাবার। কালোদের দৈন্য অবস্থা জরাজীর্ণ পোশাক আর দীনহীন জীবন , একই দেশে দুই সমাজ ব্যবস্থা । এসব দেখে এক ধরনের আক্রোশ জন্ম নিয়েছিল মনের ভিতরে। বস্তিবাসী শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্য দারিদ্র , ক্ষুধা ও পুলিশের অবিরাম হয়রানি নিত্য দিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে তিনি বিপদে ছিলেন ধীরস্থির এবং ন্যায়ের সংগ্রামের অটল। তিনি বলতেন,‘সংগ্রামই আমার জীবন। আমি স্বাধীনতার জন্য আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাব’। তাঁর জীবন ছিল জনগণের জন্য উৎসর্র্গীকৃত। ১৯৫৮ সালের ১৪ জুন উইনি ম্যান্ডেলাকে বিয়ে করেন মোথাডিস্ট চার্যে। ঐ বছরেই ১ লা আগষ্ট তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা হয় পিটোরিয়ার আদালতে । ১৯৬২ সালের ৫ই আগষ্ট রবিনসন দ্বীপ কারাগারে প্রেরণ করা হয়। বন্দি জীবনের অধিকাংশ সময়েই তিনি ছিলেন রোবন দ্বীপে। ১৯৬৪ সালের ১২ই জুন বর্ণবৈষম্য বিরোধী সংগ্রামে সক্রিয় আন্দোলন , অর্ন্তঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে জাতিসংঘের ১০৬ ভোটের রায় বিবেচনায় এনে ফাঁসির পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। পরবর্তীতে দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে , কারাগার থেকে কারাগারে নির্যাতন  ও কারাদন্ড ভোগ করেন। তরুণ ম্যান্ডেলা দীর্ঘ ২৭ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী এবং কঠোর নির্মম নিঃসঙ্গ কয়েদি জীবন যাপন করলেও বর্ণবাদের সঙ্গে কখনো আপোষ করেননি। শুধু ম্যান্ডেলাকেই নয়, তাঁর স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলাকে বেশ কয়েকবার কারাগারে এবং কন্যাদ্বয়কে শ্বেতাঙ্গ সরকার স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে নানা রকম বিধি-নিষেধ আরোপ করেন। গভীর রাতের শেষে  যেভাবে ভোর হয় ঠিক সেভাবে দক্ষিন আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এফ ডাবলিউ ডি ক্লার্ক ১৯৮৯ সালে বর্ণ-বৈষম্য নীতির অবসান ঘটান। ১৯৯০ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস এর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় এবং দীর্ঘ ২৭ বছর পর অবশেষে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী তিনি মুক্তি পান । মুক্তির পরদিন ১২ফেব্রুয়ারী তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষনে বলেন , ‘আমাদের সংগ্রাম চুড়ান্ত পর্যায়ে- আমি স্বপ্ন দেখি এমন এক সমাজের যেখানে সমঅধিকার নিয়ে সবাই সম্প্রীতিতে বসবাস করবে। বর্ণবাদের কোনো ভবিষ্যত নেই। এই বর্ণবাদের অবসান ঘটাতে হবে। এ্ই দেশ সাদাকালোর দেশ। আমাদের আন্দোলন ছিল সাদাদের বিরুদ্ধে নয়, তাঁদের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ” । পরবর্তীতে তিনি তাঁর দলের হয়ে দক্ষিন আফ্রিকার সরকারের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। ফলশ্রুতিতে দক্ষিন আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং এরই ধারাবাহিকতায় সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহনে ১৯৯৪ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ সালে দক্ষিন আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন এবং উপরাষ্ট্রপতি করেন  শ্বেতাঙ্গ নেতা পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি ডি- ক্লার্ককে। ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক উপদেষ্টারা – বললেন, আমরা শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ক্ষমতায় এসেছি। আর এখন তাদেরই ক্ষমতায় বসানো হচ্ছে। দেশপ্রেমিক এবং দূরদর্শী সম্পন্ন দেশ এবং সমাজের ঐক্য রাখার স্বার্থেই তিনি উত্তরে বললেন “ সাদারা অনেক দিন ক্ষমতায় ছিল। দেশ পরিচালনায় তাঁরা অনেক অভিজ্ঞ। আজ দেশের স্বার্থে তাদের অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের বরই প্রয়োজন। ব্যক্তিগত বিদ্বেষ যতই থাকুক না কেন”? তিনি ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালন করে রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো যাঁরা তাকে রাজদন্ড দিয়েছিল আবার তারাই তাঁকে বাধ্য হয়ে সম্মানিত করেছেন। চমৎকার বিষয়টি হলো ইংল্যান্ডের লৌহমানবী খ্যাত প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ম্যান্ডেলার মুক্তির নয় বছর আগে দম্ভোক্তি করে উক্তি করেছিলেন “কেউ যদি ভেবে থাকে এ. এন.সি কখনো দক্ষিন আফ্রিকায় সরকার গঠন করতে পারবে তবে সে এক অন্ধকার অলিক রাজ্যে রাজ্যে বাস করছে”।কিন্তু নয় বছর পর থেচারকেই দেখতে হলো সেই অন্ধকারের অলিক রাজ্য স্বয়ং ওয়েস্টমিনিস্টার হলে। আর ঠিক গ্র্যান্ড অপেরার দৃশ্যের মত রাজকীয় রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা পায়ে পায়ে সারি বেঁধে আর হলের পেছনে হেলমেট পরা প্রহরীরা ঠায় দাঁড়িয়ে। লর্ড চ্যান্সেলর , লর্ড ম্যাকি, অব ক্লার্সফার্ন তাদের রাষ্ট্রীয় পোশাক পরে উপস্থিত হলেন। তারপর সবশেষে লম্বা ও খানিকটা হেলে পরা দেহ সৌষ্টবের অধিকারী নেলসন ম্যান্ডেলা হাজির হলেন এবং খানিকটা বিচলিত ভাবে হাউজের স্পিকার বুথ্রোয়েডের হাত ধরে এগিয়ে এলেন। ভদ্র মহিলা পরে বলেছিলেন সেই পাঁচ মিনিট ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মৃতিবহ ক্ষণ। আর উচ্চ কক্ষে বসা লেবার পার্টির সদস্যদের গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু । গ্রেনেডিয়র গার্ডদের বাদক দল -“নকোসি সিকেলেল আফ্রিকা”বাজাতে শুরু করে। সে সংগীতটি কয়েক দশক ধরে আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গদের সংগ্রামের প্রেরণা জুগিয়েছিল । সেদিন লর্ড চ্যান্সেলর উষ্ণভাবে এই মহান নেতাকে এই বলে পরিচয় করিয়ে দেন , যাকে দেখতে প্রায় সুহৃদ একজন ইংরেজ ভদ্র লোকের মত মনে হচ্ছে। ম্যান্ডেলা ধীরে লয়ে এমন কঠিন বক্তব্য রাখেন যা লেডি থ্যাচারকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। রাণীর সঙ্গে নৈশভোজের আগে ম্যান্ডেলা রাণীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তিনি কেবল একটি গাঁয়ের ছেলে। বৃটেন সমাজের সকল দরজা খুলে দেয়ার জন্য এবং সকালে তাঁর বাগানে পায়চারী করতে দেওয়ায় রাণীকে ধন্যবাদ জানান। তাঁর সংস্পর্শে রাণীও যেন সেদিন  প্রাণ খুঁজে পান। শোবিজ -আইডল এবং পপস্টারদের বন্ধু হিসেবে । তিনি ছিলেন রাজকীয় পরিবারের বড় একটি অংশ সহ প্রিন্স চার্লসের অতিথি। সেন্ট আলবার্ট হলে ৫ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে কনসার্ট শুরু হয় ফিল কলিন্সের গান দিয়ে, আর শেষ হয় দক্ষিন আফ্রিকার ট্যাম্পেট বাদক হাগ ম্যাসকেলার নেতৃত্বে, ট্রাম্পেটের ঝঙ্কার এর মধ্য দিয়ে। দর্শকদের হর্ষধ্বনিতে মেতে  ওঠে আলবার্ট হল। তাদের পাশে ম্যান্ডেলা দেখে মনে হয়েছে কল্পরাজ্যের এক সম্রাট। তাঁর জন্ম, ত্যাগ ,ধৈর্য, আন্দোলন, সংগ্রাম এবং চুড়ান্ত সাফল্য তাঁকে জীবনের পরিপূর্ণতায় ভরে দিয়েছে এবং মহান বিশ্ব বরেণ্য নেতায় পরিণত করেছে। তিনি যাদের কাছ থেকে সহ্য করেছেন নির্যাতন কিন্তু রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নীতি গ্রহন না করার জন্য পৃথিবীর সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর অসীম সাহস  দক্ষ নেতৃত্ব ও নিঃস্বার্থ নীতির জন্য সারা বিশ্বের মানুষ তাঁর প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। বিশ্বব্যাপী একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যরকম উচ্চতায়। শান্তির স্বপক্ষে কাজ করা এবং আফ্রিকার নবজাগরনে ভূমিকা রাখার জন্য গত চার দশকে তিনি ২৫০টির ও অধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার এছাড়াও মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট সদস্যদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে  মর্যাদাপূর্ণ কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক বিশ্ববরেন্য এ্ই মহান নেতাকে প্রদান করা হয়।১৯৯৩ সালে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্মান নোবেল শান্তি পুরস্কারে ম্যান্ডেলাকে ভূষিত করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ই ডিসেম্বর তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। পরিশেষে জাতিসংঘ তাঁর মত দূরদর্শী ও বীর রাষ্ট্রনায়ক নীতির প্রতি চির অবিচল সফল ও কষ্টসহিষ্ণু নেতা তথা কোনো প্রকার লোভ প্রবঞ্চনা ও প্রতারণার কাছে নিজেকে জড়াননি এমন মহামানবের জন্মদিনকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ,কৃতজ্ঞতা এবং অভিনন্দন জানিয়ে এদেশের সাধারণ মানুষের মত অধির আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুণছি,  সে সব যুগন্ধর নেতা পৃথিবীতে আর কবে জন্মাবে “ যারা কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button