গ্রামীণ কৃষিসারা ভালুকা

হারিয়ে যাচ্ছে মাছ ধরার চাঁই

ভালুকা নিউজ ডট কম:- কথায় আছে, মাছে-ভাতে বাঙালি। খাল-বিল-নদী নির্ভর বাংলাদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মত্স্যসম্পদ আহরণের জন্য শৌখিন শিল্পীরা তৈরি করেছেন নানা দেশীয় মাছ শিকারের যন্ত্র।বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।এমনই কয়েকটি মাছ ধরার যন্ত্র হলো—চাঁই,টইয়া ও পোলো।তবে ময়মনসিংহের ভালুকায় এসব মাছ ধরার বিশেষ যন্ত্রকে বাইন্নাপাতি বলা হয়।গ্রামবাংলায় যখন খাল-বিলে পানি কমে যায়, তখন বাঁশের তৈরি এসব যন্ত্র ব্যবহার করে লোকজন মাছ ধরে। চাঁই হচ্ছে আড়াই-তিন ফুট লম্বাকৃতির গোলাকার যন্ত্র এবং টইয়া চ্যাপটা আকৃতির। মাছ ধরার ক্ষেত্রে চাঁই ও টইয়ার ব্যবহার একই রকম। উঁচু জমি থেকে পানি যখন সাধারণত নিচু জমিতে পড়ে, তখন বাঁধ দিয়ে ছোট একটি জায়গা করে চাঁই বা টইয়া ব্যবহার করা হয়, যাতে চাঁইয়ের ভেতর দিয়ে ও টইয়ার উপর দিয়ে পানি যায়। এতে বড়-ছোট সব ধরনের মাছ চাঁই-টইয়ায় আটকে যায়। জায়গা এবং পানির প্রকারভেদে চাঁই-টইয়ার সাইজও বিভিন্ন আকৃতির ব্যবহার করতে হয়। পোলো হচ্ছে আড়াই-তিন ফুট লম্বাকৃতির গোলাকার যন্ত্র। কম পানির জায়গায় পানির ওপর ফেলে উপর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মাছ শিকার করা হয়। সাধারণত রাতের বেলায় এই যন্ত্রের ব্যবহার হয় বেশি। একসময় গ্রামবাংলার বিভিন্ন স্থানে চাঁই-টইয়া ও পোলো দিয়ে মাছ ধরার প্রচলন ছিল। কিন্তু এখন আর পোলোর প্রচলন দেখা যায় না।হারিয়ে যাচ্ছে মাছ ধরার বিশেষ এই যন্ত্রগুলো।তবে বর্ষাকালে এসব বাঁশজাত পণ্যের চাহিদা এখন গ্রামাঞ্চলে আছে।সহজলভ্য বাঁশ দিয়ে বাড়িতে সহজেই এসব যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব।মাছ ধরার বিশেষ যন্ত্র চাঁই, টইয়া ও পোলো তৈরি করে অনেকে এখনও জীবিকা নির্ভর করছেন।সম্প্রতি উপজেলার বাটাজোর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে হাটবারে- বাঁশের তৈরী নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে সাথে-চাঁই, টইয়া ও পোলো,কুলা,টুকরি,খালই,খাচাসহ বিভিন্ন বাঁশেল তৈরী পণ্য এনেছেন বিক্রির জন্য। তবে তা আগের চেয়ে অনেকাংশে চাহিদা কম জানান এই পেশার সাথ জড়িত তামাট গ্রামের মো: শাহজাহান।এ এলাকায় উল্লেখযোগ্য নদী বা খাল না থাকলেও বাইদের(নিচু)জমিতে এই মৌসুমে ছোট-বড় মাছ পাওয়া যায়।এসব ধরার জন্য হাটবারে প্রায় ১০০ পিছ মাছ ধরার যন্ত্র বিক্রি হয়।আগেকার সময়ে বর্ষার আগে পুরো বাজার ছেয়ে যেত চাঁই, টইয়া ও পোলোতে। বাঁশ দিয়ে তৈরীকারক মো: আ: অালীম জানান, একেকটি চাঁই ১২০/১৫০/২০০ সাইজ বড় হলে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। টইয়া ও পোলো বড়-ছোট আকারে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়। চাঁই কিনতে আসা নয়ন নামে একজন জানান- আগে প্রতি বছর দু-তিনটি চাঁই, টইয়া বা পোলো কিনতেন, কিন্তু এখন আগের মতো খাল-বিলে মাছ মিলছে না। খাল বা নিচু জমিতে মাছ কমে যাওয়ার পাশাপাশি এসব যন্ত্রের ব্যবহারও দিন দিন কমে যাচ্ছে।বাঁশজাত পণ্য বিক্রেতা শাহজাহান প্রতিনিধিকে বলেন-তার এই কুটির শিল্পে দেড় লাখ টাকা পুঁজি খাটাতে হয়েছে।শুধু মাছ ধরার যন্ত্রের সোথে এসব কারিগররা প্রতি পিছ কুলা-৮০ টাকা,টুকরি-১২০টাকায় বিক্রি করছেন।খালে-বিলে আগের মতো মাছ পাওয়া গেলে চাঁইয়ের কদর বাড়বে বলে মনে করে চাঁইয়ের কারিগররা। মৌসুম শুরুতে সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাল ও ডোবা-নালায় পানি কম থাকায় মাছের অাকাল দেখা দিয়েছে। এতে চাঁইয়ের চাহিদা বিগত বছর গুলোর চেয়ে অনেক কমছে। এবছর মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় এসব মাছ ধরার যন্ত্র ভালই বিক্রি হচ্ছে বলে জানান-আরেক বিক্রেতা লাল মাহমুদ।তাছাড়াও বাঁশ, সুতা ও অন্যান্য উপকরনের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে লাভের পরিমাণও কমছে। বিক্রেতারা জানান মাঝারি আকারের একটি বাঁশের মুল্য-১৫০-২০০ টাকা।অতি ক্ষুদ্র এই শিল্প হাজার পরিবারের আয়ের অবলম্বন হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারনা। আমাদের ঐতিহ্যের অংশ বাঁশ শিল্পকে রক্ষায় সরকারী উদ্যোগ ও বেসরকারী-ব্যাক্তি উদ্যোগ কাজে আসতে পারে।আর এ শিল্পকে রক্ষায় আমাদের সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি ।মাছে-ভাতে বাঙালীর দেশে মাছ ধরার উপকরন সংরক্ষন জরুরী।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button