ভালুকায় মা ও ছেলে এক সাথে এইচ.এস.সি পাশ করেছে
বিশেষ প্রতিবেদক : ইচ্ছা শক্তি আর অদম্য চেষ্টার কাছে বয়স যে হার মানায় তার প্রমাণ দিলেন এক মা। মা তার নিজ সন্তানের সাথে পরীক্ষা দিয়ে এ বছর এইচ.এস.সি পাশ করে, ভালুকা উপজেলার মেদিলা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মাহাবুবুল আলমের স্ত্রী লিমা আক্তার (৪০) স্বামী সংসার বজায় রেখেও সে এবারের এইচ.এস. সি পরীক্ষায় উপজেলার শহীদ স্মৃতি মহিলা কলেজের কারিগরি শাখায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩.৭৮ পেয়ে পাশ করেছেন। অপরদিকে তার একমাত্র ছেলে শাহ আলম উপজেলার বাটাজোর ডিগ্রি কলেজ থেকে অংশ নিয়ে পেয়েছেন জিপিএ ৪.২৫। মা ছেলে একসাথে পাশ করায় পরিবার সহ এলাকার সকল মানুষ খুশীতে আটখানা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উথুরা গ্রামের নুরুল হক মন্ডলের ছয় ছেলে মেয়ের মধ্যে লিমা আক্তার সবার বড়। ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাসে উথুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়। যার ফলে তার লেখাপড়া থেমে যায়, কিন্তু ভেতরে থেকে যায় লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছাটুকু। এদিকে বিয়ের পরের বছর তিনি সন্তানের মা হন। তার স্বামী কিছু দিন পর একটি এনজিও তে চাকুরী নিয়ে টাঙ্গাইলে চলে যান। ওই সময় সংসারের কাজ শাশুরী কে দেখাশুনা আর সন্তানের লালন পালনের মধ্যে অবসরে বই পড়েন লিমা আক্তার। এক পর্যায়ে পাশের বাড়ীর সপ্তম, অষ্ঠম, নবম শ্রেনীর ছাত্র ছাত্রীদের বই এনে নিজে নিজেই পড়াশুনা করতেন। ২০০৩ সালে বাড়ীর পাশে মেদিলা মুসাফির মঞ্জিল দাখিল মাদ্রাসায় ৯ম শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে ২০০৫ সালে দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে জিপি এ ২.৫৫ পেয়ে পাশ করেন। মাদ্রাসায় পড়ার সময় লিমা আক্তার কে আশপাশের লোকজন বিদ্রুপ ও হাসি তামাসা করতো, তবুও থেমে থাকেনী লিমা। নানা সাংসারিক কাজে তার লেখাপড়া আবারও থেমে যায়, পরবর্তীতে ২০১২ সালে সে আবারও উপজেলা বান্ধিয়া গ্রামে স্মৃতি মহিলা কলেজের কারিগরী শাখায় ভর্তি হয়। লিমা ১২ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে প্রতিদিনই কলেজে যেত, কলেজের অন্যান্য ছাত্রীরা লিমাকে নানী বলে ডাকতো, সব শিক্ষকরা তাকে সবসময় উৎসাহ দিতো, পরে ২০১৪ সালে লিমা এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে ইংরেজী বিষয় বাদে সব বিষয়ে পাশ করেন। পরে এই বছর সে ইংরেজী পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে এইচ.এস.সি তে কৃর্তকার্য হয়।
অন্যদিকে তার ছেলে শাহ আলম বাটাজোর ডিগ্রি কলেজের বি.এম শাখা হতে এইচ.এস.সি পাশ করে। নতুন পাশ করা লিমার কাছে কেমন লাগছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন আমি খুবই খুশী, আমার ইচ্ছা শক্তির কারণে এ রকম একটা অসাধ্য কাজ করতে পেরেছি, আমার পরিবার আমাকে সবসময় সাহস ও শক্তি দিয়ে আসতে ছিলো এজন্য আমি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
এ খবরে এলাকার সাধারণ মানুষদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। আনন্দ বিরাজ করছে লিমার কলেজেও।