স্বাস্থ্য চিকিৎসা

দেশে প্রথমবারের মতো পাকস্থলিতে বাইপাস অপারেশন সম্পন্ন

ভালুকা নিউজ ডেস্ক : মানুষের শরীরের স্থুলতা এক প্রকারের রোগ। এর কারনে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সার, অনিদ্রাসহ নানা রোগ শরীরে দানা বেঁধে জীবন অতিষ্ট করে তোলে। ব্যক্তির জীবন-যাপন কঠিন হয়ে ওঠে অস্বাভাবিক। সরকারী কর্মকর্তা রিজিয়া পারভিনের বয়স ৫১, ওজন ১২০ কেজি। দিনদিন তিনি অস্বাভাবিক মুটিয়ে যাচ্ছিলেন। তার স্বামী ব্যবসায়ী ইকবাল জানালেন, এ অবস্থায় ডায়াবেটিস অনেক বেড়ে গিয়েছিলো। এক পর্যায়ে তিনি হাটতেও পারছিলেন না। ইন্টারনেট ঘেটে তিনি তথ্য পেলেন অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার যুগান্তকারী এক চিকিৎসা বেরিয়াট্রিক সার্জারি যা দেশেই হচ্ছে। তিনি ভর্তি হলেন জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ (জেবিএফএইচ) হাসপাতালে।

আজ প্রথমবারের মতো জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালে সম্পন্ন হলো রিজিয়া পারভিনের ‘ল্যাপারোস্কপিক গ্যাস্ট্রিক বাইপাস’ পদ্ধতিতে পাকস্থলির অপারেশন। অপারেশন টিমে নেতৃত্ব দেন হসপিটালের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশের বিশিষ্ট ল্যাপারোস্কপিক সার্জন অধ্যাপক ডা. সরদার এ নাঈম। এই টিমে ছিলেন ভারতের বেলভিউ ক্লিনিকের সার্জন ডা. সরফরাজ জলিল বেগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ বেরিয়াট্রিক সার্জন ডা. আবুল কালাম চৌধুরী, ডা. সরদার এ বাকী, ডা. মো: শহিদুল্লাহসহ এনেসথেশিওলজিস্ট, এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্ট, প্লাস্টিক সার্জন ও নিউট্রিশনিস্টসহ বিশেষজ্ঞ সার্জারি টিম। এই অপারেশনের মধ্য দিয়ে ওই হাসপাতালে ‘ল্যাপারোস্কোপিক বেরিয়াট্রিক ও মেটাবলিক সার্জারি সেন্টার’ চালু হয়।

জেবিএফএইচ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সরদার এ নাঈম জানালেন, অতিরিক্ত ওজন বা ওবেসিটিতে যারা ভুগছেন, এই অপারেশনের মাধ্যেমে তাদের পাকস্থলি ছোট করে খাদ্যের শোষন (Absorption) কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রন করা হয়। এতে খাদ্য পাকস্থলিতে বেশিক্ষন অবস্থান না করে ক্ষুদ্রান্তে চলে যায়, ফলে ওজন বাড়তে পারে না এবং মুটিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। এটা বর্তমানে স্বীকৃত, নিরাপদ ও আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি যা জাপান-বাংলাদেশ হসপিটালে সম্পন্ন হচ্ছে।

ভারতের বেলভিউ ক্লিনিকের সার্জন ডা. সরফরাজ জলিল বেগ জানান, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই সার্জারি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সঠিক ও সফলভাবে অপারেশন সম্পন্ন হলে এরপর থেকে ওজন কমতে থাকে। আস্তে আস্তে সে স্বাভাবিক জীবনে আসতে পারে। তিনি জানান, এই অপারেশন একদিকে যেমন স্থুলতা নিরসন করে অপরদিকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সার, অনিদ্রা, হরমোনজনিত সমস্যারও সমাধান করে।

১৯৯৩ সাল থেকে গলব্লাডার, এপেন্ডিক্স, হার্নিয়া, ওভারিয়ান সিস্ট, জরায়ু অপসারন ও অন্যান্য নানাবিধ অপারেশন ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে সাশ্রয়ী প্যাকেজে সফলতার সঙ্গে করে আসছে জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হলো আরো আধুনিক পদ্ধতির পাকস্থলির ল্যাপারোস্কপিক বাইপাস অপারেশন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button