কবিতাসাহিত্য সাধনা

ভৈরব-একটি নদীর নাম

——--মুরাদ দাস্তগীর

হে ভৈরব,
তোকে বড্ড মনে পড়ে যেন তুই
উর্বশী, আমার কবিতার পঙক্তি-
উদাস দুপুরে ঝরোকা দিয়ে দেখতাম-
তোর বুকে দুষ্টু ঢেউ খেলা করে
উতল হাওয়ার সাথে
আর ওদের দুষ্টামিগুলি আছড়ে পড়ে
পূর্ব চরায় আলতো করে।
তোর পাশে ঠিক জরঠ গাব গাছটার নীচে
জৈষ্ঠের সবক’টি দুপুর পার করেছি এবং দেখেছি-
বজরার পালে বাওড়া বাতাসের টান,
উর্মির বজ্জাতি, নীলিমায় মেঘের বটখেরা।
চৈত্রের শেষ বিকেলে-
তোর টলমলে জোয়ার উঠে আসতো
ঢোষকলির ডগায়,
বুনো হাওয়ায় জমে উঠা ঝুঁটি আর ভাত শালিকের আড্ডা ঝরাত টুকটুকে শিমুল
তোর আবিল জলে।
আশ্বিণে রাঙা গোধুলির অবগাহন
জাগাত কাঁপন তোর ডহর বুকে,
আর থৈথৈ ভালবাসা ছুঁয়ে যেত
আমার আবেগী নয়ন।
শ্রাবণ ঢলে তোর ভরা বুক,
নবিন জলে উপচে পড়া সুখ,
বয়ে যেত আমার উটজ ঘেঁষে
আর আমি দেহলীদারে আনমনে
তোকে দেখতাম দুচোখ ভরে।
ওরে গাঙ তোর কি মনে আছে-
উজগার থেকে চন্দ্রস্নান করেছি
তোর বুকে ভেসে,
পানসির ছইয়ের তলে দুলেছি
পটুয়া পলাশ, মিন্টু দে আর আমি।
এখনও কি শরতের নিজেল জল বহে ধীরে
বুকে করে কয়া আধোডোবা কলমির লতি
অথবা পূবালী বাতাসে ঝরা খোয়েবাবলার ফুল।
হে আমার ভালবাসার নদী,
তোকে ভালবাসবো অনন্তকাল;
একটা ছোট্ট অনুরোধ তোর কাছে-
যেদিন চলে যাব মহাকালের ডাকে
শেষ স্নান হয় যেন তোর পবিত্র জলে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button