চলচ্চিত্রজাতীয়মিডিয়া দেশ-বিদেশ

বনানীতে চিরনিদ্রায় শায়িত নায়করাজ

ঢাকা: সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক। আজ বুধবার রাজধানীর বনানীতে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

এ সময় তার বড় ছেলে বাপ্পারাজ, মেজো ছেলে বাপ্পি, সম্রাটসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও চলচ্চিত্র জগতের অনেকে উপস্থিত ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার তার দাফন হওয়ার কথা থাকলেও মেজো ছেলে বাপ্পির জন্য আজ বুধবার দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দাফনের পর সম্রাট বলেন, আপনারা আমাদের পাশে সব সময় ছিলেন। সেজন্য ধন্যবাদ। আমরা মেজ ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। তিনি এসেছেন। আমরা তিন ভাই মিলে দাফন করেছি। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। তিনি বলেন, আগামী শুক্রবার বাদ আসর গুলশান আজাদ মসজিদে রাজ্জাকের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত, সোমবার বিকেলে হৃদরোগে আক্রান্ত রাজ্জাককে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়। সেখান থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে তার মরদেহ শেষবারের মতো নিয়ে যাওয়া হয় গুলশানের বাসভবন ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’-তে। মরদেহ সেখানে পৌঁছতেই স্বজনদের কান্না-আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আশপাশ। সেখান থেকে বেলা ১১টায় মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার প্রিয় কর্মস্থল এফডিসিতে।

শেষবারের মতো নায়করাজের এফডিসিতে আগমনে শোকার্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। লাশবাহী গাড়ি খোলা রেখেই শেষবারের মতো সবাই দেখেন নায়করাজকে। এরপর একে একে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ।

তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র পরিবার, সিনেম্যাক্স মুভি পরিবার, আওয়ামী সাংস্কৃতিক লীগ, বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাব, চলচ্চিত্র গ্রাহক সংস্থা, চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, সিনে স্থিরচিত্রগ্রাহক সমিতি, জাসাসসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

ব্যক্তিগতভাবে রাজ্জাককে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, অভিনেতা আলমগীর, চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী, সুচন্দা, ববিতা, চম্পা, শাবনূর, চিত্রনায়ক শাকিব খান, ফেরদৌস, আমিন খান, রুবেল, আহমেদ শরীফ, ওমর সানি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি অভিনেতা মিশা সওদাগর, চলচ্চিত্র পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, চলচ্চিত্র পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম প্রমুখ।

শ্রদ্ধা জানানোর পর সেখানেই তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ নেওয়া হয় হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে তার ভক্ত-অনুরাগী ও সহকর্মীরাসহ সর্বস্তরের মানুষ কিংবদন্তি এই অভিনেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর গুলশানের আজাদ মসজিদে বাদ আসর নায়করাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়ে।

এরপর রাজ্জাকের মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমাঘরে রাখা হয়। সেখান থেকে  তার লাশ আজ বুধবার সকাল ১০ টায় বনানী কবরস্থানে নিয়ে আসা হয়।

উল্লেখ্য, রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ওখানেই তার বেড়ে ওঠা। স্কুল জীবনে থাকা অবস্থায় তার অভিনয়ের হাতেখড়ি। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা স্কুলের মঞ্চনাটক বিদ্রোহীতে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়ক রাজের অভিনয়ে সম্পৃক্ততা। পাকিস্তানেও তিনি অভিনয় নিয়ে কাজ করেছেন। এরপর ১৯৬৬ সালে বেহুলা চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ঢাকাই ছবিতে সদর্পে উপস্থিত হন দর্শকনন্দিত এই নায়ক।

কয়েক দশকের অভিনয় জীবনে তিনি জীবন থেকে নেয়া, অবুঝ মন, রংবাজ, আলোর মিছিলসহ প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। অভিনয় জীবনের বাইরে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছা দূত হিসেবেও কাজ করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button