ইদানিং পাঠক এবং পাঠাগার l সফিউল্লাহ আনসারী
বইয়ের বিপুল পরিমান সংগ্রহশালা মানেই লাইব্রেরী বা পাঠাগার।একসময় বই পড়ুয়াদের আড্ডা এবং পাঠের নেশার স্থান এই পাঠাগার।সময়ে সাথেই যেনো এই ঐতিহ্য হারাতে বসেছে তার গৌরব।বই পড়ার জন্য বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা শহর-গ্রাম-মহল্লায় সরকারি-বেসরকারি,ব্যাক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত হতো নানা স্বাদের পাঠের বই নিয়ে পাঠাগার। এখনো ব্যক্তিগত বা কোনো দেশী-বিদেশী সংস্থার সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে পাঠাগার,যা মফস্বল এলাকার পাড়া-মহল্লার পাঠককে করে বই পড়ার সুযোগ তৈরিতে প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছে।কিন্ত ইদানিং সময়ে প্রযুক্তি নির্ভর জীবন এবং পাঠাগার স্থাপনে ব্যাপক উদ্যোগ না থাকায় এবং নতুন বইয়ের সংগ্রহ আগের মতো না থাকায় পাঠাগারগুলো পাঠকের কাছে হারাচ্ছে তার জনপ্রিয়তা। ফলশ্রুতিতে কমছে বই পড়ুয়াদের সংখ্যা।ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির আগমনের সাথে সাথে বই প্রকাশের হিড়িক পড়ে যায়।বাংলা একাডেমি চত্বরে বাঙালীর প্রাণের মেলা একুশে বই মেলাকে ঘিরে লেখক-পাঠকের মধ্যে সৃষ্টি হয় নতুন উন্মাদনার।কিন্তু সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও পাঠক বৃদ্ধিতে কর্মসুচি গ্রহন না করায় ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে কমতে থাকে বই প্রকাশ ও বই প্রেমিদের সংখ্যা,সাথে কমতে থাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাঠকের সংখ্যাও।বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারগুলোর বেহাল দশা কারন সরকারি বা ব্যাক্তি উদ্যোগে এসব বইয়ের অসাধারণ সংগ্রহ রক্ষার কোন পদক্ষেপ নেই।বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় গড়ে উঠা লাইব্রেরীতে নেই আগের সেই শিক্ষার্থীদের মুখর পদচারনা।এক ধরনের অনীহা শিক্ষার্থীদের বই থেকে দুরে ঠেলে দিচ্ছে তা উপলদ্ধির সময় এখনি।সংরক্ষনের অভাবের সাথে আর্থিক সংকট,নতুন নতুন বই সংগ্রহ ও সংযোজন করতে না পারায় লাইব্রেরীতে আগের মতো পাঠকেরা ভীড় নেই।বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাবহারের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ব্যাপক হারে ব্যবহারও বই পড়ার প্রতি অনীহার একটা বড় কারন।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তরুণ-যুব সমাজ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।লাইব্রেরি মুখি না হয়ে তারা ঝুকঁছে ফেসবুক,টুইটার,ব্লগের মতো মাধ্যমগুলোতে।এসব নানা কারনে জীর্নশীর্ন পাঠাগারগুলো পাঠক ধরে রাখতে পারছেনা,টানতেও পারছেনা নবীন পাঠক।বই একদিকে জ্ঞানের ভান্ডার অপরদিকে মনে আনন্দেরও খোরাক।নি:সংগতার সাথী।লেখক হয়ে উঠার সবচেয়ে বড় মাধ্যম।
চিন্তার বিষয় হলো-সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমেই প্রযুক্তির প্রতি নির্ভরতা বাড়ছে,তার সাথে দুর্ভাগ্যজনক হারে কমছে বই পড়ুয়াদের সংখ্যাও।বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যাচ্ছে সর্বস্তরে মানুষের মধ্য থেকে।প্রযুক্তির বহুবিদ ব্যাবহারে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে জ্ঞাণ-বিজ্ঞাণ আর যুক্তি-বুদ্ধির রসদ যোগানো বইয়ের সংগ্রহ পাঠাগার।বই পড়াকে অর্থহীন না ভেবে বরং মানুষিকতার পরিবর্তনে পাঠক তৈরিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশেষ করে পারিবারিক উৎসাহ ও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি শহর ও গ্রামাঞ্চলের গুরুত্বপুর্ণ স্থানে পাঠাগার স্থাপন করা প্রয়োজন।অযত্ন অবহেলায় নষ্ঠ হওয়ার পথে পাঠাগারগুলো প্রাথমিক ভাবে সংস্কারের ব্যাবস্থা করে পাঠক বাড়ানো যায়।
মূল কথা হচ্ছে-সত্যিকারের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে একটা বই।আর এর জন্য নতুন পাঠাগার স্থাপন ও পুরাতনগুলো সংরক্ষন জরুরী।