কুষ্টিয়ায় থানায় অভিযোগের অপরাধে গাছের সাথে বেঁধে প্রকাশ্যে কাটা হলো গৃহবধুর চুল

আব্দুম মুনিব, কুষ্টিয়া: স্বামী ইটভাটায় কাজ করায় বাড়িতে থাকে না। সেই সুযোগে উত্যক্ত করতো পাড়ার বখাটেরা। উত্যক্ত বন্ধে গৃহবধূ থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ আটকও করে প্রভাবশালী দুইজনকে।
রাতে আটকের পর সকালে সবাই ছাড়া পেয়ে অভিযোগ করার অপরাধে ঐ গৃহবধূকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে মাথার চুল কেটে মুখে চুন-কালি মাখিয়েছে। এখানেই খান্ত হয়নি, গৃহবধূকে রাস্তার পাশে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। পরে দুই শিশুপুত্রও তাদের খেলার সাথী আহত মাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। এসব ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার খোকসার হিলালপুর গ্রামে।
জানা গেছে, সোমবার সকালে থানা থেকে ছাড়া পাওয়া প্রভাবশালী তৈহিদ ও সুমন এবং তার আরো ছয় সহযোগি উপজেলা সদরের হিলালপুর গ্রামের হতদরিদ্র গৃহবধূ তিন সন্তানের জননী সামেলা খাতুনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। সকাল নয়টার সময় কয়েক’শ লোকের সামনে গৃহবধূর বাড়ির পাশের মুশুরির ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে গিয়ে গৃহবধূর উপর নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে তার মাথার চুলও কেটে দেওয়া হয়। পরে সাবেক মেম্বর আশকার আলীর বাড়ির সামনে একটা গাছের সাথে প্রায় এক ঘন্টা বেঁধে রাখা হয়। প্রায় এক ঘন্টা পর দশটার দিকে গৃহবধূর দুই শিশু ছেলে স্বাধীন, রাকিব ও তাদের খেলার সাথী সীমা খাতুন নামের এক শিশু গৃহবধূকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। গৃহবধূর স্বামী মিন্টু শেখ যশোরের একটি ইট ভাটায় কাজে রয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধু সামেলা জানায়, গত কয়েকদিন আগে হামলাকারী তৈহিদ,সুমনসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে সে। এ ঘটনার পর রবিবার রাতে পুলিশের এসআই কার্তিক চন্দ্র দুই আসামীে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পর দিন সোমবার সকালে আসামীরা থানা থেকে ছাড়া পেয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায়। তাকে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে মাঠের মধ্যে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালায়। পরে তার মাথার চুল কেটে দেয়। এ ছাড়া তার সমস্ত শরীরে চুন ও কালি মাখিয়ে নগ্ন করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে সদর রাস্তার পাশে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়। পরে শিশুরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
তিনি আরো জানান, থানার ওসি তাকে থানায় নিয়ে যায় মামলার কথা বলে। সেখানে একটি কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়েছে। ওসি তাকে সাফ জানিয়ে দিয়ে এ নিয়ে মামলা করে লাভ হবে না।
ঘটনা স্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয় কিন্তু প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। তবে গৃহবধূকে উদ্ধারকারী সীমা খাতুন জানান নির্যাতনের কাহিনী। সে জানায় ঘটনার সময় শুধু তৈহিদ শরিফুল নয় স্থানীয় ইউপি সদস্য জিয়া ঘটনা স্থলে উপস্থিত ছিলেন। হামলা কারীদের ভয়ে কেউই গৃহবধূকে উদ্ধারে আসতে সাহস পায়নি।
ঘটনা স্থলে গিয়ে পুলিশের এসআই কার্তিক চন্দ্রের সাথে দেখা হয়। তিনি আসামীদের ছেড়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এখন আবার মামলা নিয়ে তিনি আসামীদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানায়।
এ ব্যাপারে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী দাউদ হোসেন বলেন, এটা মারামারির ঘটনা না। সম্প্রতি মহিলা পরকীয়া করে চলে গেছিলো। সেকারনে ঐ এলাকার মহিলাদের সাথে তার চুলছেড়া ছিড়ি হয়েছে।