উপ-সম্পাদকীয়

সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানোর যৌক্তিকতা

সামিউল ইসলাম:

কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অথচ বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে অধিকাংশই বেকারত্ব সমস্যাই ভোগছে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করেও তাদেরকে বেকার থাকতেই হচ্ছে। তাহলে এ উচ্চ শিক্ষার লাভ কী? বেকারত্ব সমস্যার অন্যতম কারন হচ্ছে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর। যা কি না বিশ্বের কোথাও নেই।

এদেশের  শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীকে মাস্টার্স পাশ করতে ২৭-২৮ বছর লেগে যায়। তারপর ২-৩ বছর চাকরির পরীক্ষার  প্রস্তুতি নিতে না নিতেই তার বয়স শেষ হয়ে যায়। পড়াশুনা করার জন্য খুব বেশি সময় পায় না। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় পাঠ্য বই থেকে খুব কম প্রশ্নই আসে। এ জন্য অনেক পড়াশুনা করতে হয়। তারপর আবার কোঠা পদ্ধতি। ৫০ শতাংশের অধিক কোঠা রয়েছে। যাদের কোঠা রয়েছে তাদের অধিকাংশের প্রবেশাধিকার বয়স আবার ৩২ বছর। একদিকে কোঠা অন্যদিকে ৩২ বছর। এতে অনেক মেধাবীরা চাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের গড় আয়ু প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গড় আয়ু যখন ৪৫ বছর ছিল তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর, গড় আয়ু যখন ৫০ বছর হলো তখন ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত হলো। আর এখন গড় আয়ু ৭১ বছর। তবুও কি বয়স বাড়ানো যুক্তি সঙ্গত মনে হয় না? মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও উপজাতীয় কোটার প্রার্থীদের বয়স ৩২ বছর। এছাড়াও জুডিসিয়াল ও ডাক্তারদের ৩২ বছর এবং নার্সদের ৩৬ বছর। তাহলে মেধাবীদের কেন ৩০ বছরের বেশি নয়? মেধাবীরা কি দেশের বোঝা?

স্বাধীনতার পর সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা ছিল ৫৭ বছর। গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১১ সালে ৫৭ থেকে ৫৯ বছরে উন্নীত করা হয়।মুক্তিযোদ্ধাদের ৬০ বছর, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬০ থেকে ৬৫ বছর,বৈজ্ঞানিকদের ৫৯ থেকে ৬৭ বছর এবং  বিচারপতিদের ৬৫ থেকে ৬৭ বছর করা হয়।দেশের মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাওয়ায় বয়সসীমা অবসরের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেলে প্রবেশের ক্ষেত্রেও বৃদ্ধি পাওয়া যুক্তি সঙ্গত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৩০ বছরের কোনো পরিবর্তন এখনও হয়নি। এখন যুগের ও বাস্তবতার দাবি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ করা।

বিশ্বের কোথাও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছরের নিচে নেই। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ৪০, অন্যন্য প্রদেশে ৩৮-৪০, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৫, শ্রীলংকায় ৪৫, ফ্রান্সে ৪০, ইতালিতে ৩৫, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯, কানাডায় ৫৯, সুইডেনে ৪৭, নরওয়েতে ৩৫,কাতারে ৩৫, তাইওয়ানে ৩৫ এবং ফিলিপাইন, তুরস্ক ও সুইডেন, রাশিয়া, দক্ষিন কোরিয়া, হংকং ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু দেশে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত।

আমরা উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। কিন্তু উন্নত বিশ্বের কোথাও তো সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাই। দেশের লক্ষ লক্ষ উচ্চ শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি না করে দেশকে কি আদৌ উন্নত ও ডিজিটাল করা সম্ভব? আজ দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারদের হাহাকার শোনা যাচ্ছে।   বহুদিন যাবৎ জল্পনা কল্পনা শোনা যাচ্ছে  সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানোর। ঢাকার শাহবাগ, টিএসসি সহ সারা দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর জন্য আন্দোলন চলছে।

সরকারের পক্ষ থেকে তাদের কোনো রকম সহযোগিতা না করে বরং তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করা  হচ্ছে এবং আন্দোলনকারীদের ধরে থানায় নিয়ে পুলিশ কতৃক  নির্যাতন করা হচ্ছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া,প্রিন্ট মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও এ বিষয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে।  জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনেও জাতীয় সংসদের বেশ কয়েকজন সদস্য সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে এ বিষয়ে সুপারিশ করেছেন।

দেশে বর্তমানে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। তারা মানসিক যন্ত্রনায় দিনাতিপাত করছেন। দেশের বেকারত্ব সমস্যা কমাতে অবশ্যই সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বৃদ্ধি করতে হবে।

 

সামিউল ইসলাম,

সহকারি শিক্ষক (ইংরেজি),

আলহাজ্ব আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা

e-mail: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button