উপ-সম্পাদকীয়

হিজড়া সম্প্রদায়ের অকথ্য অত্যাচার সম্পর্কে প্রশাসন নিরব কেন ?

মাহমুদুল বাসার

হিজড়া সম্প্রদায়ের জুলুম, চাঁদাবাজী অকথ্য অত্যাচার ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি খান সেনাদের পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের নিরবতা হিজড়াদের অত্যাচারকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। সারা বাংলাদে=শে হিজড়া সম্প্রদায় আছে এবং সারা দেশেই ওরা দলবদ্ধ হয়ে চাঁদাবাজি করে। চাঁদা আদায় করে ওরা অকথ্য জুলুমের মাধ্যমে।
একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদনে এসেছে, রাজধানী পুরানা পল্টনে একটি বাসায় পুলিশের উপস্থিতিতে ১ মাসের শিশুকে জিম্মি করে ৩ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়। এ সময় তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায় পরিচয় দানকারীরা ১১ হাজার টাকার চাঁদার দাবিতে ওই বাসায় ব্যাপক ভাঙচুর ও গোলমাল শুরু করে দেয়। এ ঘটনায় ঐ পরিবারের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দেয়।
স্থানীয়রা জানায়, পুরানা পল্টনের হাউজিং গলিতে ৪১/৩ ভবনের ৬ তলা ভবনের ৪ তলায় একটি বাসায় বসবাসকারী এক দম্পতির ১ মাস আগে এক সন্তান জন্ম দেয়। হঠাৎ করে মতিঝিল পুরানা পল্টন এলাকার কিছু তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা এসে ওই বাসায় হানা দেয়। কলিং বেল চাপ দেয়ার পর দরোজা খোলার পরই কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের লোক পুরো বাসা ঘেরাও করে। এক পর্যায়ে একমাসের শিশুকে জিম্মি করে ১১ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে তারা।

এ সময় বাসার মধ্যে দরোজা জানালা সহ আসবাব পত্র লাথি মারে এবং জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে তারা। নাম পরিচয় হীন এসব হিজড়া ১ঘন্টা ধরে ওই বাসায় ব্যাপক হৈচৈ শুরু করে। পরে তারা নিরুপায় হয়ে পুলিশকে খবর দিলে পল্টন থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু পুলিশ গেলেও কোন লাভ হয়নি। বরং পুলিশের উপস্থিতিতে হিজড়ারা ১১ থেকে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে ধার করে পুলিশের সামনেই ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
ওই বাসার দারোয়ান জানান, কয়েকদিন আগে এক দম্পত্তি ৪ তলায় উঠে। তাদের এক মাস আগে এক নবজাতক জন্ম নেয়। কারো মাধ্যমে খবর পেয়ে হিজড়ারা টাকা নিতে আসে। তখন বাসায় কোন লোক নেই বলে বিদায় করলেও গত জুমার নামাজের সময় এসে টাকার জন্য দাঙ্গা হাঙ্গামা শুরু করে। দরোজা জানালায় ভাঙচুর করে। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হলে পুলিশ আসলেও কোন লাভ হয়নি। বরং পুলিশের সামনে আরো বেশি দাঙ্গা-হাঙ্গামা করলেও পুলিশ কিছুই না করে চুপচাপ থাকে। এদিকে এর আগে খিলগাঁত এলাকায় এক সাংবাদিকের বাসায় হানা দিয়ে শিশু জিম্মী করে ৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে নেয় হিজড়ারা।
পুরোনো ঢাকার ধূপখোলা মাঠের কোনায়, ৩৯/৪ নং ভবনের ৭তলা থেকে একজন অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক,গবেষক, কলাম লেখকের মেয়ের ঘরের ২ মাসের শিশুকে জিম্মি করে ৫ হাজার টাকা আদায় করে নিয়েছে হিজড়া সম্প্রদায়।

অধ্যাপক সাহেবের ছেলে হিজড়াদের বুঝিয়ে ১ হাজার টাকা রফা করেছিলো। এর মধ্যে পুলিশ এসে হাজির হয়। পুলিশ দেখে হিজড়ারা তেলেবেগুনে জ্বলে যায়, অধ্যাপক সাহেবের ছেলেকে পুলিশের সামনে বেইজ্জত করে। বাধ্য হয়ে পরে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়।
এই প্রতিবেদককে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, হিজড়াদের সঙ্গে পুলিশের চাঁদাবাজির চুক্তি আছে। হিজড়াদের অত্যাারের ব্যাপারে পুলিশের নিরবতা দেখে মনে হয় তারা হিজড়া সম্প্রদায়কে মানুষের উপর জুলুমবাজি, চাঁদাবাজি করার অবাধ লাইসেন্স দিয়েছে।
আরেকটি জাতীয় দৈনিকের খবরের শিরোনাম হয়েছে, ‘চাঁদাবাজ হিজড়াদের হাতে জিম্মি ঢাকা ময়মনসিংহ রেলপথ।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজড়াদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে ঢাকা ময়মনসিংহ রুটের ১২১ কিলোমিটার রেলপথ। ময়মনসিংহ থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ৭টি আন্তঃনগর ট্রেনে প্রকাশ্যে হিজড়ারা চাঁদাবাজি করলেও তা দেখেও না দেখার ভান করছেন রেল কর্তৃপক্ষ। অনেক সময় হিজড়াদের নানা ধরনের আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গিতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে পরিবার পরিজন সহ ভ্রমনকারীদের।

এতে একদিকে রেলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে, অপর দিকে লাভজনক এই রুটে যাত্রীর সংখ্যাও কমে আসছে।
অভিযোগ রয়েছে, রেলের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও জিআরপি পুলিশের সহযোগিতায় এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে হিজড়ারা।
ওই দৈনিকের প্রতিবেদক সম্প্রতি ময়মনসিংহ রুটের বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে ভ্রমন করে হিজড়াদের অবর্নণীয় অত্যাচার ও চাঁদাবাজির বর্ণনা দিয়েছেন। কমলাপুর থেকে এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে গেলেই হিজড়াদের দেখা পাওয়া যায়। একযোগে ৪ জন হিজড়া ট্রেনের বগিতে উঠে পড়ার পর কেবিনের দরোজা ঠেলে যাত্রীদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়ায়। কেউ টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তাদের দিকে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে।

মেয়ে হিজড়ারা ছেলেদের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়ার চেষ্টা করলে সম্মান বাঁচাতে অনেকেই চাহিদা অনুযায়ী ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করেন। ছেলে হিজড়ারা একই ভাবে মেয়েদের দিকে এগিয়ে গেলে তারা বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হিজড়াদের হাতে তুলে দেয়। এভাবে তারা ট্রেনের প্রতিটি বগিতেই অবাধে টাকা তুলতে থাকে। তাদের টার্গেট থাকে পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমনকারী ও একাকী নারীরা। নিরীহ প্রকৃতির লোকজনও তাদের অত্যাচারের শিকার হয়।
ঢাকা শহরের বাসেও হিজড়ারা চাঁদাবাজি করে। সামান্য তর্কের ছলে তারা অনেক নিরীহ যাত্রীকে মারধর, গালিগালাজ করে থাকে। বাস থেকে টেনে নামিয়ে যাত্রীদের চিৎ করে শুইয়ে মারধর করার দৃশ্য আমি নিজে চোখে দেখেছি।
জাতীয় দৈনিকটি আরো একটি শিরোনাম করেছে, ‘হিজড়াদের পেছনে এনজিও সিন্ডিকেট’। বলা হচ্ছে, হিজড়াদের পেছনে রয়েছে একাধিক এনসিও সংগঠন। এইসংগঠনের সদস্যরা চিকিৎসার ও পুনর্বাসনের নামে তাদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করে থাকে। পাশাপাশি হিজড়ারা কোন অপকর্ম করে বিপদে পড়লে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এনজিওদের এমন তৎপরতার কারণে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে হিজড়ারা। এতে এনজিও প্রতিষ্ঠান লাভবান হলেও বিপদে পড়তে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের।
এলাকার সাধারণ লোকজনদের সঙ্গে এই উৎপাত প্রসঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সন্ত্রাসী, মাস্তান, চাঁদাবাজরা হিজড়াদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ। তারাই হিজড়াদের দিয়ে এভাবে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করাচ্ছে। এর সঙ্গে পুলিশও জড়িত। গেন্ডারিয়ার অধ্যাপক সাহেব আমাকে জানালেন, ‘আমার যৌবন প্রাপ্ত ছেলেটিকে অমন ভাবে প্রায় উলঙ্গ করে অপদস্ত করেছে, তারপর ৫ হাজার টাকাও নিয়েছে, এর প্রতিক্রিয়ায় আমার ছেলেটি নির্বাক হয়ে গেছে।’
অনেক বয়স্ক লোক বলেছেন, মনে হয় হিজড়াদের মাধ্যমে ১৯৭১ এর পাকি খান সেনাদের আবির্ভাব ঘটেছে। অনেকে আমার কাছে চোখের পানি ফেলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।
এর প্রতিকার একমাত্র পুলিশ প্রশাসন করতে পারে। কিন্তু তা করছে না। তাহলে মানুষ হিজড়াদের জুলুম থেকে কীভাবে মুক্তি পাবে? লোকজন আমার কাছে সরকারকে দোষারোপ করে বলেছে, ‘সরকারই হিজড়াদের লেলিয়ে দিয়েছে।’ প্রশাসনের কাছে আমরা এর প্রতিকার দাবি করছি।
মাহমুদুল বাসার
কলাম লেখক, গবেষক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button