সম্পাদকীয়

বিদায় ১৪২২ স্বাগত ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

আবার এসেছে বৈশাখ চির নতুনের কেতন উড়িয়ে দিকে দিকে রোমাঞ্চ জাগিয়ে। চিরায়ত ঐতিহ্যের ধারায় বাঙালি আজ বরণ করবে নতুন বছরকে।
পহেলা বৈশাখ মূলত উদযাপিত হতো ব্যবসায়ীদের হালখাতা, শুভেচ্ছা বিনিময়, গ্রামীণ মেলা এ সবের মাধ্যমে। যদিও বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি কাজকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা সব দাপ্তরিক ক্ষেত্রে ইংরেজি তারিখই প্রাধান্য পাচ্ছে, তবুও এ দেশের প্রকৃতি, জলবায়ু, ঋতুবৈচিত্র্য ও কৃষিকে বুঝতে আমাদের ফিরে যেতে হয় বাংলা সনের কাছে। তাই দেখা যায়, এ যুগে এসে বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের বৈচিত্র্য ও ব্যাপ্তি দুই-ই বেড়েছে। জাতীয় ঐক্য ও সংহতির ভিত্তি রচনা এবং ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির বিকাশে এ সবের গুরুত্ব অপরিসীম। অনাকাক্সিক্ষত হলেও পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে নানা সময়ে নানা বিতর্কের জন্ম দেয়া হয়েছে। পাকিস্তান আমলে বলা হতো- বাংলা নববর্ষ হিন্দুদের উৎসব, মুসলমানের জন্য নাজায়েজ। সেই ধারা অনুযায়ী প্রতিক্রিয়াশীল মহল এখনো সক্রিয় আবহমান বাঙালিত্ব ধ্বংস করে ধর্মের ধুয়া তুলে কায়েমি স্বার্থে ক‚পমণ্ডূক ব্যবস্থা কায়েমে। অশুভ শক্তি রমনার বটমূলে ছায়ানটের ১৪০৮ সনের বর্ষবরণ উৎসবে ঘটিয়েছে নারকীয় বোমা হামলা। তাতে ঝরে গিয়েছিল কয়েকটি তাজা প্রাণ। সেই শোকাবহ ঘটনার স্মৃতি ভোলার নয়। এখনো মৌলবাদী অশুভ শক্তি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ মারা থেকে শুরু করে হেন কোনো অপকর্ম নেই যে তারা করছে না। এ অপতৎপরতা এখনো চলছে। ধর্ম রক্ষার কথা বলে দেশে একের পর এক খুন করা হচ্ছে মুক্তচিন্তার লেখকদের।
বাঙালি সংস্কৃতির, তার উৎসবের উদার সম্প্রীতি-চেতনাকে বিনষ্ট করার জন্য বারবার আঘাত হানা হলেও বাঙালির উৎসবে মানুষের মহাসম্মিলনকে রুদ্ধ করা যায়নি, যাবেও না। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সব অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে জাগ্রত সংস্কৃতিই আমাদের শক্তি জোগাবে। শত দুর্বিপাকে, শত বিপর্যয়ে মানুষের এই হার না মানা সংগ্রাম বৈশাখেরই রুদ্র চেতনার বহিঃপ্রকাশ যেন। এই চেতনার কাছে তাবৎ উৎপীড়ক, অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটবেই। এই পহেলা বৈশাখে মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা আর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হয়ে আমাদের নতুন শপথে দাঁড়াতে হবে। একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও সম্প্রীতিময় সমাজ আমাদের লক্ষ্য। ১৪২৩ বঙ্গাব্দের আজকের এই সূর্যোদয় সব অন্ধকার কেটে আমাদের নিয়ে যাক এমন এক সকালের দিকে যেখানে থাকবে না প্রতিক্রিয়াশীলতার অন্ধকার, অশিক্ষার অন্ধকার, দারিদ্র্য আর অনটনের অন্ধকার। ১৪২৩ সনের শুভাগমনকে ঘিরে সব উৎসব আয়োজন আনন্দময় হোক, নির্বিঘ্ন হোক। নতুন বছর হোক সবার জন্য সুসময়ের উদ্বোধন। ভালুকা নিউজ ডট কম পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে নব বর্ষের শুভেচ্ছা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button