অপরাধ অনুসন্ধাননারী ও শিশু

কান্নার অপরাধে শিশু হত্যা: নূপুর গ্রেফতার, ফাঁসির দাবি এলাকাবাসীর

ভালুকা নিউজ ডট কম, ডেস্ক: বানারীপাড়ায়  ‘কান্নার অপরাধে’ নিষ্পাপ দুধের শিশু হাফিজুলকে নির্মমভাবে আঁছাড় মেরে হত্যার ঘটনায় ঘাতক বাড়িওয়ালী নূপুর বেগমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজার এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বানারীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

নূপুরের স্বামী বাবলা মৃধা পশ্চিম রাজাবাজারের অদূরে স্কয়ার হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। জানা গেছে নূপুর বেগমকে গ্রেফতারের ব্যপারে তার ভাসুর বানারীপাড়া পৌর বিএনপির সম্পাদক রিয়াজ মৃধা পুলিশকে সহায়তা করেন। ঘটনার মাত্র ৪৪ ঘন্টার মধ্যে ঘাতককে গ্রেফতার করতে পারায় বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জিয়াউল আহসানকে ৫ হাজার টাকা পুরুস্কারের ঘোষনা দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার এসএম আক্তারুজ্জামান।

এদিকে শনিবার দুপুরে স্থাণীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বানারীপাড়ায় নিহত শিশু হাফিজুলের বাসায় গিয়ে তার পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে শিশু হত্যাকারী নূপুরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের ব্যপারে আইনীসহ সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা, পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন ও ওসি জিয়াউল আহসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে শুক্রবার বাদ জুমা জানাজা শেষে বাদ আসর পৌর শহরের ৯নং ওয়ার্ডে উপজেলা বিএনপির সাবেক সম্পাদক মীর সহিদুল ইসলামের পারিবারিক কবরস্থানে শিশু হাফিজুলের লাশ দাফন করা হয়। হাফিজুলের বাবা দরিদ্র রিক্সা চালক রিপন শেখ ভূমিহীন হওয়ায় মীর সহিদুল ইসলাম মানবিক কারণে ওই শিশুর লাশ দাফন করতে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে জায়গা দেন।

এর আগে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে হাফিজুলের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়না তদন্তে তার মাথায় ও ঘাড়ে আঘাতের চিহৃ পাওয়া যায় বলে পুলিশ জানায়। থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়াউল আহসান জানান, ঘটনার পর থেকে ঘাতক নূপুর বেগমকে গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযানে নামে পুলিশ। শুক্রবার উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের জিরারকাঠি গ্রামে নূপুরের বোনের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। সর্বশেষ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার স্কয়ার হাসপাতালের কাছ থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বানারীপাড়া পৌর শহরের ৯ নং ওয়ার্ডে টিএন্ডটি মোড়ে বাড়িওয়ালা বাবলা মৃধার স্ত্রী বিউটিশিয়ান নূপুর আছাঁড় মেরে হত্যা করেন ভাড়াটিয়া রিক্সা চালকের ৩ বছর ৪ মাস বয়সী ছেলে হাফিজুলকে। পহেলা বৈশাখ যখন গোটা বাঙালী তার প্রাণের উৎসব বর্ষবরণ নিয়ে মেতে ওঠে ঠিক তখন কান্নার শব্দে ঘুমাতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে ‘ফেয়ারী কুইনের’ পরিচালক নূপুর তার ভাড়াটিয়া রিক্সা চালক রিপনের ঘরে ডুকে শিশু পুত্র হাফিজুলকে খাটের ওপর আঁছাড় মেরে ঘাড় মটকে দেয়।

গুরুতর আহত অবস্থায় হাফিজুলকে তার বাবা-মা প্রথমে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে হাফিজুলকে ঢাকায় রেফার করলে অর্থাভাবে তাকে আবার বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পরে রাত সাড়ে ১১টায় কতর্ব্যরত চিকিৎসক ডা. নাঈম হাসান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত হাফিজুলের বাবা রিক্সাচালক রিপন জানান, পৌর শহরের ৯ নং ওয়ার্ডে ফেয়ারী কুইন বিউটি পার্লারের পিছনের বারান্দায় দেড় মাস আগে ঘর ভাড়া নিয়ে স্ত্রী ও দুই শিশু পুত্রকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। ঘর ভাড়া নেওয়ার পর থেকেই তার শিশু পুত্রদের কান্না নিয়ে ঘর মালিক নূপুর বিরক্ত হয়ে শিশুদের উচ্চস্বরে বকাঝকা ও ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি তাকে ঘর ছেড়ে দিতে বলত। বকাঝকা ও মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ায় শিশু হাফিজুল ভয়ে সবসময় আঁতকে থাকতো। এ কারণে রিপন ঘর ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নেয়। শুক্রবার তার নতুন বাসায় ওঠার কথা ছিল। এর একদিন পূবেই তার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ব্যপারে নিহত হাফিজুলের বাবা রিপন বাদী হয়ে শুক্রবার নূপুরকে আসামি করে বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

এদিকে শিশুপুত্রকে হারিয়ে তার বাবা রিপন ও মা লাভনী বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাদের কান্না ও আহাজারীতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। দুই বছর বয়সী মিরাজুল বড় ভাই হাফিজুলকে খুঁজে ফিরছে। এদিকে দুই শিশু পুত্রকে লেখাপড়া শিখিয়ে একদিন মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে অভাবের সংসারে সুখ সাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনার রিপন-লাভনী দম্পতির লালিত স্বপ্ন তাদের বড় ছেলে হাফিজুলকে হত্যার মধ্য দিয়ে ম্লান করে দিয়েছেন নূপুর বেগম। তার নিজের তিন শিশু কন্যা লামিয়া, জিনিয়া ও অনু থাকার পরেও কিভাবে মা হয়ে অন্যের শিশু সন্তানকে হত্যা করতে পারল সে এ বিষয়টি হতবাক করেছে এলাকাবাসীকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button