লাইফ স্টাইল

কিশোরী পতিতাদের জীবনকাহিনী

বাংলাদেশের কিশোরী পতিতা রানু। তার মতো অনেক মেয়ের স্কুলের গন্ডি পেরোনোর বয়স হয় নি। কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়ে, ফাঁদে পা ফেলে তারা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে অন্ধকার গলির পথ। পরিণত বয়স না হলেও তাদেরকে ‘মাসিরা’ রাতারাতি বড় করে তুলছে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত ওষুধ খাইয়ে। এর ফলে খুব দ্রুত রানুদের শরীরের বৃদ্ধি ঘটে। তাতে আকৃষ্ট হয় খদ্দের। বাংলাদেশের কিশোরী পতিতাদের নিয়ে এমন অনেক রিপোর্ট স্থানীয় পর্যায়ে তো আছেই, বিদেশী মিডিয়ায়ও সয়লাব। এ পেশায় আসা কিশোরীদের শরীর মোটাতাজা করলে তাদের চাহিদা বেশি। খদ্দের পায় সহজে। আয় উপার্জনও ভাল হয়। এ জন্য তারা জীবন ঝুঁকির কথা জেনেও ব্যবহার করে ওই ট্যাবলেট। দিনি তাদেরকে প্রায় ১০ জন খদ্দেরকে সামাল দিতে হয়। কখনো তারও বেশি। প্রতিজন খদ্দের থেকে তারা আয় করে প্রায় ১০০ টাকা। এ পেশা থেকে তাদের বেরিয়ে আসায় মানা নেই। কিন্তু সমাজ ও পরিবার তাদেরকে মেনে নিতে চায় না। ফলে পতিতাপল্লীর অন্ধকারেই জীবন কেটে যায় তাদের। এক সময় নারায়ণগঞ্জের টানাবাজারে পতিতাপল্লী ছিল। সেখানেই বেড়ে উঠেছেন জিএমবি আকাশ। তিনি শিশু অবস্থা থেকে বড় হতে হতে দেখেছেন কিভাবে ওই পতিতালয়ে বালিকারা প্রবেশ করে, বেড়ে ওঠে, তারপর শরীর বিকিয়ে অর্থ উপার্জন করে। পতিতাদের জীবন ধারণের ওপর তিনি ক্যামেরায় ছবি ধারণ করেছেন। ফটোজার্নালিজমের জন্য তিনি পুরষ্কারও জিতেছেন। জিএমবি আকাশের বয়স এখন ৩৮ বছর। তিনি ১২ বছর ধরে সিরিজ ফটো ধারণ করে চলেছেন। এর নাম দিয়েছেন ‘লাইফ ফর রেন্ট’। তিনি কিশোরী যৌনকর্মীদের জীবন দেখেছেন খুব কাছ থেকে। তার ওপর ধারণ করেছেন ছবি। তার এসব ছবি নিয়ে অনলাইন কোয়ার্টজ একটি ফটোফিচার প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখনও যেসব পতিতাপল্লী রয়েছে তার সবগুলোর চেহারাই এক। ঘনবসতিপূর্ণ। একটির সঙ্গে আরেকটি মিশিয়ে গড়ে উঠেছে টিনের ছাউনি। তার মধ্যে ছোট্ট ছোট্ট প্রকোষ্ঠে কোনমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই। সেখানেই শরীর বিকিকিনির হাট বসে। এই ব্যবসার সঙ্গে গড়ে উছেছে কিছু দোকানপাট। তাতে চায়ের আড্ডা। বিস্কুট বিক্রি হয়। খদ্দেরদের আনাগোনা। একপাশে একটি সেলুন। এর চারপাশে খদ্দের ধরার জন্য নানা অঙ্গভঙ্গি কিশোরী পতিতাদের। তাদের আশেপাশেই খেলা করছে শিশুরা। এরা পতিতাদের সন্তান। পয়ঃনিষ্কাশনের ক্যানেলে পড়ে আছে ব্যবহৃত জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রি। তাতে বন্ধ হয়ে আছে কোন কোন নালা পথ। এসব পতিতালয়ে যারা থাকেন তাদের বয়স ১৮ বছরের ওপরে হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার চেয়ে অনেক কম বয়সী মেয়ে এ পেশায় নেমেছে। তাত্ত্বিক অর্থে তারা চাইলে যেকোন সময় পতিতালয় ছেড়ে চলে যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটে না। আছে মাসির নজরদারি। আছে নানা দেনা। সব মিলিয়ে পতিতালয় যেন তাদের কাছে একটি জেলখানা। খদ্দেররা শারীরিক সম্পর্ক গড়ে খুব বেশি টাকা দেয় না। তাই প্রতিদিন তাদেরকে বেশি বেশি খদ্দের ধরতে হয়। খদ্দের ধরা নিয়ে তাদের মধ্যে চলে এক রকম প্রতিযোগিতা। কখনো তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। আবার নিজের শারীরিক সৌষ্ঠব প্রকাশে তারা নানা পন্থা অবলম্বন করে। তাদেরই একজন রানু। তিনি শরীর মোটাতাজাকরণের ট্যাবলেট খেয়ে বেমালুম পাল্টে গিয়েছেন। নিজেই বলেন, আমার শরীরের বৃদ্ধি ঘটেছে। এখন আমাকে দেখে খদ্দেররা আগ্রহী হয়ে ওঠে। আমি ভাল খদ্দের পাই। তাই আমি ওরাডেস্কন ট্যাবলেট খাই। জানি, এটা শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাতে আমার কোন ভয় নেই। আমার একটি ছেলে আছে। তাকে লালন পালন করতে হয়। আমাকে টিকে থাকতে হয়। তার জন্য এ ওষুধ সেবন করতেই হয়। যদি তাতে মারাও যাই তাহলে শান্তি পাব যে, আমি ছেলের জন্য কিছু করে রেখে যেতে পেরেছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button