জাতীয়

‘হত্যার পর প্রতিটি লাশের পেট ফুটো করা হয়’-ডা. মো. আসাদুজ্জামান

নিউজ ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারে সাতজনকে শ্বাসরোধ করে হত্যার আগে মাথা ও বুকে আঘাত করা হয়। এবং হত্যার পর পাঁচজনের পেটে একটি করে এবং দুইজনের পেটে দুটো করে ফুটো করা হয়। নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্নকারী ৩ সদস্যের চিকিৎসক বোর্ডের আহ্বায়ক এবং নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আসাদুজ্জামান নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে এসব কথা বলেন।-মানবজমিন।

পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে স্বামী হত্যার ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেছেন নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের স্ত্রী অর্চনা সরকার। ২৩ জন আসামির উপস্থিতিতে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে সাক্ষী শুনানি হয়।

বিচারক পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আগামী ১৬ই মে। গতকাল আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করা ১১ জন সাক্ষী হলেন- নিহত আইনজীবী অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার সরকারের স্ত্রী অর্চনা সরকার, ভাগ্নে মাধব কুমার দেব, নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ আসাদুজ্জামান, ডা. জলিল আহমেদ, ডা. শেখ ফরহাস এবং ডা. মাঈন উদ্দিন, কনস্টেবল আবদুল লতিফ, নারায়ণগঞ্জ ‘এ’ সার্কেলের সাবেক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বর্তমানে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিমুল আহসান, আক্তার হোসেন, নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের এবং নিহত সিরাজুল ইসলাম লিটনের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম মিন্টু। কনস্টেবল আবদুল লতিফ ঘটনার সময় তৎকালীন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ‘এ’ সার্কেল আজিমুল আহসানের দেহরক্ষী ছিলেন।

কনস্টেবল আবদুল লতিফ এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিমুল আহসান আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে বলেন, ঘটনার দিন রাত পৌনে ৪টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার কিল্লারপুল এলাকায় তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জগামী একটি সাদা রঙয়ের হাইএস মাইক্রোবাস থামান। পরে আজিমুল আহসান এগিয়ে গিয়ে মাইক্রোবাসের যাত্রীদের কোথা থেকে আসছেন জানতে চাইলে সামনে বসা ব্যক্তি নিজের নাম তারেক সাঈদ মোহাম্মদ এবং র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক বলে পরিচয় দেন।

ওই সময় তারেক সাঈদ মোহাম্মদ পুলিশকে জানিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট এলাকায় একটি দায়িত্ব পালন শেষে তারা র‌্যাব-১১’র সদর দপ্তরে ফিরছেন। উভয়ই তখন আসামির কাঠগড়ায় থাকা তারেক সাঈদ মোহাম্মদকে শনাক্ত করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে অপহৃত হন। পরে ৩০শে এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয় জনের ও ১লা মে আরো একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে গত বছরের ৮ই এপ্রিল কাউন্সিলর নুর হোসেন এবং র‌্যাবের চাকরিচ্যুত ৩ কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় পুলিশ। এরমধ্যে ২৩ জন গ্রেপ্তার হলেও এখনও ১২ জন পলাতক রয়েছে। অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয়েছে ১২৭ জনকে। এবং ১৬২ প্রকারের আলামত জমা দেয়া হয়।

গত ৮ই ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দুটি মামলায় নুর হোসেনসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। পলাতক ১২ জনের অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ চলছে। তাদের পক্ষে রাষ্ট্র ৪ জন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button