উপ-সম্পাদকীয়

সাদা কাপড়ের মতো সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. প্রমোদ মানকিন

এম এ মান্নান

সাদা কাপড় পরার কারণে উপরে যেমন সুন্দর লাগছে আমাদের ভিতরটাও তেমন সুন্দর করতে হবে বলে গেলেন সদ্য প্রয়াত সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন। ২০১৫ সনের ১৮ জুলাই শনিবার হালুয়াঘাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন। তার অন্তরে কি ছিল জানা নেই তবে বাহ্যিকভাবে একজন আধ্যাত্মিক গুরুর মত করে কথা বলতেন তিনি। চলতি মাসের ১০ তারিখ দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ভারতের মুম্বাইয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে ২০১৫ সনের ১৮ জুলাই শনিবার দিনটিকে খুব মনে পড়ছে। সেদিন হালুয়াঘাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করছিলাম। খ্রীষ্টান ধর্মের অনুসারী আমাদের সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে যা শুনিয়ে গেলেন তা হাজার বছর মনে রাখার মত। আধ্যাত্মিক জগতের পীরের ন্যায় তিনি কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, সাদা কাপড় পরার কারণে উপরে যেমন সুন্দর লাগছে আমাদের ভিতরটাও তেমন সুন্দর করতে হবে। এর আগের ঈদে মাঠে না আসার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অসুস্থ্যতার কারণে আমি গত মাঠে আসতে পারিনি। এবার কালো টুপি ও সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী পরে মাঠে এসে টুপির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আফ্রিকা থেকে এক মুসলমান ভাই আমাকে এ টুপিটি হাদিয়া দিয়েছেন। আজ ঈদের দিন তাই টুপিটা পরে আসলাম।  আমাকে এখন কেমন লাগছে বলুন তো? উপস্থিত মুসল্লীরা তখন বলেন, খুব সুন্দর লাগছে, স্যার। মুসলমানের মতই মনে হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন- সাদা কাপড় পরার কারণে উপরে যেমন সুন্দর লাগছে আমাদের ভিতরটাও তেমন সুন্দর করতে হবে। উপরে যেমন সুন্দর পোশাক পরেছি তাতে সুন্দর লাগছে, ভিতরেও তেমন পোশাক রয়েছে। সেটা হল দিল, আত্মা, অন্তর। ঐ অন্তরটাকেও এমন সাদা ও সুন্দর রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন- মুসলমান মন্ত্রী থাকলে তো আজ আপনাদের সাথে এসে নামাজ পড়ত। আপনাদের পাশে এসে দাঁড়াত। আপনারা আনন্দ পেতেন। আমিও আপনাদের একটু আনন্দ দিতে এসেছি। আপনারা সবাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমার পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। বর্তমান সমাজে আমাদের মুসলিম নেতাদের পক্ষ থেকেও এমন বক্তব্য পাওয়া বিরল। দুনিয়াবি দৃষ্টিতে তিনি একজন যোগ্য জননেতা ছিলেন। তিনি মানুষকে কাছে টানতে পারতেন। তার বক্তব্যে অসন্তোষ্ট হয়েছে এমন ২/৪জন থাকলে থাকতেও পারেন তবে আমার জানা নেই। আমি মন্ত্রীর কোন কাছের লোক ছিলাম না। দূর থেকে তাকে যতটুকু অবজারভেশন করেছি তাতে আমার এমনই মনে হয়। ফুলপুর থানার নতুন বিল্ডিং উদ্বোধনের দিন ঢাকা থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আ খ ম মহি উদ্দিন আলমগীরের সাথে তিনিও এসেছিলেন। তখন দৈনিক তথ্যধারার একজন সামান্য সাংবাদিক হিসেবে সেদিন ঐ অনুষ্ঠানে খুব কাছে থেকে মন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের বক্তব্য শোনার সুযোগ হয়েছিল। তিনি যে কত বড় মাপের নেতা ছিলেন, কত ভাল মানুষ ছিলেন, মানুষকে কত হাসাতে পারতেন তা এর আগেও আমি জানতাম না।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানাতে মাননীয় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. প্রমোদ মানকিন বরাবরই ঈদগাহ মাঠে ছুটে আসতেন। বক্তব্য রাখতেন। মুসলমানদের শুধু সুখে নয় দুঃখের দিনেও তিনি পাশে থাকতে চেষ্টা করতেন। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে কাদা থাকার কারণে ঢাকা-হালুয়াঘাট মহাসড়কের উপর বেশ কয়েকবার ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়েছে। মাঠ উন্নয়নে মন্ত্রী সেদিন নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। মাঠে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান রাখার পর ইমামতি করেন ছারছীনা দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা মোয়াজ্জেম হুসাইন। এর আগে হালুয়াঘাট দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আতিকুল্লাহর পরিচালনায় ও নির্দেশনায় সংক্ষিপ্ত বয়ান রেখেছিলাম পূর্ব নড়াইল গ্রামের আব্দুল জাব্বার জবর আলীর ছেলে ফুলপুর এক্সিলেন্ট স্কুল এন্ড মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আমি অধম এম এ মান্নান। ঐদিন নামাজ শুরু হওয়ার পূর্ব মূহুর্তে আয় ব্যয়ের হিসাব প্রদানপূর্বক বক্তব্য রাখেন মাঠ কমিটির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আজগর। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবিরুল ইসলাম বেগ,  কর্ণেল সিরাজুল ইসলাম ও অধ্যক্ষ মাওলানা আতিকুল্লাহসহ কয়েক হাজার মুসল্লী মহাসড়কের উপর নির্মিত অস্থায়ী ঈদগাহ মাঠে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের মৃত্যু শুধু হালুয়াঘাট নয় বরং পুরো বিশ্বকে নাড়া দিয়ে গেছে। দেশ বিদেশ দল ও দলের বাইরের অনেককে ব্যথাতুর অনুভূত হয়েছে। একটি দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। ভারাক্রান্ত অবস্থায় তিনি বলেন, মন্ত্রী মহোদয়কে ভুলতে পারব না। তিনি এতই ভাল মানুষ ছিলেন যে, বিগত ২৩ বছরের যিন্দেগীতে কখনও কোন কাজে তিনি আমাকে আটকাননি। ফাঁদে ফেলেননি এমনকি ফাঁদে ফেলার চেষ্টাও করেননি। তার অমায়িক ব্যবহার ভুলার মত নয়। আরেকজন আলেম মানুষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ঢাকায় গিয়ে মন্ত্রীর বাসায় দেখা করলে কাজ করে দিয়ে  তিনি তাকে খাওয়া দাওয়া ও  আদর আপ্যায়ণ করে ভাড়াসহ বাড়িতে পাঠান। এমন মন্তব্য এখন মানুষের মুখে মুখে। কারও অন্তর সম্বন্ধে আমাদের কারও জানা নেই। আমার বাহ্যিক মূল্যায়ণে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন। আর সাদা কাপড়ের মতো সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. প্রমোদ মানকিন। আমি তার বিদেহী আত্মার মঙ্গল কামনা করি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button