শবেবরাত বা ভাগ্য রজনী-সফিউল্লাহ আনসারী

আল্লাহর কাছে প্রত্যেকটা দিন-রাত সমান।তারপরও কিছু কিছু দিন ও রাতের রয়েছে আলাদা গুরত্ব ও মর্যাদা।তেমনি পবিত্র ও বরকতময় রাতের নাম শবেবরাত,যাকে ভাগ্য রজনী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।শা’বান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাত হচ্ছে-লাইলাতুল বারায়াত বা শবে বরাত। আরবীতে এ রাতকে লাইলাতুল বারায়াত বলা হয়। অন্যদিকে পবিত্র মাহে রমজানের পূর্বের মাস হওয়ায় শাবান মাসকে বলা হয়েছে রমজান মাসের প্রস্তুতির মাস।এ রাতে মুমিন-মুসলমানের আগত বছরের ভাগ্য লিখা হয় বলে বিশ্বাস রয়েছে।মহান প্রভুর কাছে পাপের বিচার থেকে পরিত্রানের জন্য ক্ষমা ও আল্লাহর করুনা লাভের আশায় সারারাত ইবাদত বন্দেগী করা হয়।পূণ্যময় এ রাতে-নফল নামায,কুরআন তেলাওয়াত,যিকির আযকার,তাসবিহ তাহলিল ইত্যাদি পুণ্যময় কাজগুলো প্রত্যেক মুসলমানগন করে থাকেন।বিভিন্ন কারনে এই শবে বরাতের রয়েছে অনেক ফজিলত।নবীকরীম(সাঃ)এ মাসেও দোয়া করতেন যেভাবে রজব মাসেও দোয়া করতেনঃ“আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রজব ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রামাযান।”অর্থঃ“হে আল্লাহ!আমাদের জন্য রজব ও শা’বান মাসকে বরকতময় করে দিন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌছেঁ দিন।” শা’বান মাসে নবীজি (সা.) নফল রোজা রাখতেন।আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ “আমি প্রিয় নবী (সাঃ) কে রমজান ছাড়া আর কোন পূর্ণ মাসের রোজা রাখতে দেখিনি।আর শা’বান মাস ছাড়া আর কোন মাসে এত অধিক পরিমাণ নফল রোজা রাখতে দেখিনি।”(বোখারি ও মুসলিম)।এ বিষয়ে মহানবী (সা:) এরশাদ করেনঃ শাবান মাস হল আমার মাস আর পবিত্র রমজান মাস হল মহান আল্লাহ তাআলার মাস।তিনি আরও বলেন-তোমরা শাবানের চাঁদ সঠিকভাবে হিসাব রাখ।কেননা শাবানের চাঁদের হিসাব ঠিক হলে,রমজানের চাঁদের হিসাব সঠিক হতে সহায়ক হবে।(মিশকাত শরীফ-১১৫পৃ:)”।শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীজ তথা প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।(ইসলাহী খুতুবাত, ৪র্থ খন্ড-২৬৬পৃ:)(সংগৃহীত)শবে বারাত রাতের ইবাদতের বিষয়ে নিদিষ্ট কোন নিয়ম বা নির্দেশনা না থাকলেও অধীক সওয়াবের আশায়-সন্ধ্যার পর গোসল করা,বিভিন্ন তাসবি-তাহলীল পাঠ,এশার নামাজ পড়ে দুই রাকাত নিয়তে নফল নামাজ পড়া,কিছুক্ষণ পর পর দোয়া-মোনাজাত করা,বেশী বেশী দরুদ শরীফ পড়া,ক্বোরআন তিলাওয়াত করা,বেশি বেশি করে কাজ্বা নামাগুলো আদায় করার মাধ্যমে অনেক সওয়াব পাওয়া যায় বলে মুমিন মুসলমানগণ বিশ্বাস করে থাকেন।কায়মনো বাক্যে সারারাত আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থেকে জীবনের পাপ মুক্তি ও ভবিষৎ দিনগুলি মঙ্গলময় হয় সে আশা ও বিশ্বাস থাকলে শবেবরাতের পূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবে বিজ্ঞ আলেম সমাজ নসিহত করেন।শবেবরাতের ইবাদত,নিয়ম-কানুন,বাড়াবাড়ি ধরনের কার্যকলাপ-যেমন আতশবাজি,লাইটিং,রুটি-হালুয়ার আয়োজন,অপচয়কারী সাজসজ্জাসহ বিদা‘ত ধরমী কর্মকান্ড কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।কারন শবেবরাতের ভাগ্য লিপিবদ্ধকরনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে কথা প্রচলিত বা যইফ(দুর্বল)হাদিস দ্বারা বর্নণাগুলোর উপর আমল করার ব্যাপারে বিজ্ঞ(অনেক) আলেমগন সন্দেহ পোষন করেছেন।আমাদের দেশে এ রাতটিকে- লাইলাতুল বরাত,লাইলাতুল দোয়া,ইরান ও আফগানিস্তানে নিম শা’বান,আরবী ভাষাভাষীরা বলেন নিসফ্ শা’বান,মালয় ভাষাভাষীরা বলেন নিসফু শা’বান,তুর্কি ভাষাভাষীরা বলেন বিরাত কান্দিলি,ভারতীয় উপমহাদেশে শবে বরাত নামে পালন করা হয় এ বরকতময় রাতটি।শবে বরাতের পুণ্য রজনীতে যাতে আমাদের ইবাদতের নামে গোমরাহী না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে মহান প্রভুর রহমত-দয়ায় যেনো সকলের জীবন পরিচালিত হয় সেই দোয়া করবো। ইবাদত-বন্দেগীর দ্বারা সকলের উদ্যেশ্য যেনো হয়-প্রভুর সান্যিধ্য,ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তির জন্যই।