উপ-সম্পাদকীয়নারী ও শিশু

নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস

 

২৮ মে আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাতৃত্ব


দিবস।বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত দিবসগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।পৃথীবিতে মায়ের চেয়ে কষ্ঠ সহ্য করার মতো আর কেউ নেই।সেই মায়ের নিরাপত্তার বিষয়টিও অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ণ।নারীর চিরন্তন পরিচয় ‘মা’ এবং মা পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন ও ডাকের মধ্যে সবচেয়ে মমতা জড়ানো সুন্দর শব্দ।মাতৃস্বাস্থ্য,নিরাপদ প্রসব, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি স¤পর্কে মা,পরিবার ও সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সকল মায়ের প্রতিশ্র“ত অধীকার নিশ্চিত করাই এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য।“মা ও শিশুমৃত্যু রোধ এবং তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করার পাশাপাশি এসব সমস্যা প্রতিরোধ করার প্রত্যয়ে ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’ পালন শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সাল থেকে।”আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় আজো স্বাস্থ্যসেবা জনগনের দোড়গোঁড়ায় শতভাগ পৌছুঁয়নি,কারন-একদিকে অপ্রতুল চিকিৎসা সেবা, অপরদিকে কুসংস্কার।এই আধুনিককালেও বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় গোঁড়ামী অকালে ঝরে যায় অনেক প্রসূতি মায়ের প্রাণ।সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে বিষয়গুলি দারুনভাবে পীড়া দেয়।তবে আশার কথা হচ্ছে-নানা প্রতিকুলতার মাঝেও নারী অধীকার ও গর্ভবতি মায়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে।এই দিবসটির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে-শিশুর জন্মদান ও মাতৃত্ব স¤পর্কিত সমস্যাগুলি চিহ্নিত ও এগুলির সুষ্ঠু সমাধান করা।সেই সঙ্গে নিরাপদ মাতৃত্বকে নারীর অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং নবজাতকের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার মতো বিষয়গুলি হচ্ছে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।উন্নত দেশগুলোতে মায়েদের দায়িত্ব সরকার নিলেও,আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিষয়টি ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় হিসেবে আজো অনেকাংশে অবহেলিত।এই অবহেলা আর অসচেতনতা দুরিকরনের জন্যই দিবসটির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে খুব দ্রুত।“১৯৯৭ সালে তৎকালীন সরকার মাতৃস্বাস্থ্য স¤পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও মাতৃমৃত্যু রোধকল্পে ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের ঘোষণা দেয় ।”নিরাপদ মাতৃত্ব বিষয়টি শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে,শিক্ষিত সমাজের চেয়ে অশিক্ষিতদের মধ্যে সচেতনতার অভাব বেশী।কর্মজীবী মায়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ঝুঁকিপুর্ন হলেও বর্তমানে ছ‘মাসের দ্বীর্ঘ ছুটি প্রসবকারী মা ও সন্তান উভয়ের জন্যই মঙ্গলজনক।মাতৃত্বজনিত ছুটি থাকায় এখন মায়েদের সন্তান লালন পালনের অন্তরায় দুর হয়েছে।মা ও সন্তানের কথা চিন্তা করে পিতৃত্ব ছুটির বিষয়টিও জোড়ালে হচ্ছে।দিবসটির মূল উদ্দেশ্য মা ও নবজাতকের মৃত্যুহার কমিয়ে আনা এবং নারীর অধিকার হিসেবে একজন মাকে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নিরাপদ মাতৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করা ।একজন গর্ভবতী মহিলা গর্ভকালীন সেবা,নিরাপদ প্রসবের জন্য যাবতীয় সেবা এবং প্রসব-পরবর্তী সেবা পাওয়ার সব অধিকার রাখেন।কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীই এখনো উপরোক্ত কোনো অধিকারই পুরোপুরি ভোগ করতে পারেন না।নারী মাত্রেই সন্তান জন্মদান একটা বিশেষভাবে জীবনের ঝুঁকিপুর্ণ। এই সংকটময় ঝুঁকিপুর্ণ মুহুর্তে প্রত্যেক নারী যাতে নিরাপদ ও প্রসবের সময় ঝুঁকিমুক্ত থাকেন সে ব্যাবস্থা করা সকল ক্ষেত্রেই অত্যান্ত জরুরী। পরিবারের গুরুত্বপুর্ণ সদস্য হিসেবে একজন নারীর পূর্ণতা আসে তার মাতৃত্বে।এই মাতৃত্বকে নিরাপদ করার প্রয়াস হিসেবে এই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস গুরুত্বের দাবীদার।একটি পরিসংখ্যানমতে-“প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২১ কোটি নারী গর্ভবতী হয় এবং দুই কোটিরও বেশি নারী গর্ভজনিত স্বাস্থ্য-সমস্যায় ভোগে।এদের মধ্যে আবার ৮০ লাখের জীবনে আশঙ্কা দেখা দেয়। অত্যন্ত গরিব জনগোষ্ঠীর মধ্যে জটিলতায় ভোগার আশঙ্কা অপেক্ষাকৃত ধনীদের তুলনায় প্রায় ৩০০ গুণ বেশি। মূলত: গর্ভকালীন জটিলতা, দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা দানকারীর অনুপস্থিতি, প্রয়োজনীয় যতেœর অভাব, এ বিষয়ে পরিবারের অসচেতনতা,প্রসব-পরবর্তী সেবাযতেœর অপ্রতুলতায় একজন মাকে ঠেলে দিচ্ছে সীমাহীন অনিশ্চয়তা,দুর্ভোগ আর কষ্টের মুখে।সময়ের সাথে সাথে নারী স্বাধীনতা,নারীর প্রতি সহিঞ্চু আচরনের অভ্যাস দিন দিন বাড়ছে।”তথ্যমতে-গর্ভকালীন সময় শতকরা ১৫ জন নারীই নানা রকম ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতায় ভোগেন,যা মাতৃমৃত্যুর জন্য দায়ী। এসব মোকাবেলা করতে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও জেলা হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব জরুরী প্রসূতি সেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে”।(তথ্য:সংগৃহীত)আমাদের দেশে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকেন্দ্রের সংখ্যা কম হওয়া ও সেবার চেয়ে ব্যাবসায়িক দিক গুরুত্ব দেয়ায় সমাজের নারীসহ সব শ্রেণীর মানুষ কাংখিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যেমন সত্যি তেমনি সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ চিকিৎসা সেবাকে জনগনের দোরগোঁড়ায় পৌছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।আনুষ্ঠানিকতা আর দিবস পালনেই শুধু স্বার্থকতা নেই,প্রয়োজন নিরাপদ মাতৃত্বকে নিশ্চিত করে এই অধিকার সকলস্তরে পৌছে দেয়া তাহলেই আমরা পাবো সুস্থ্য মা ও সন্তান আর নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনও সার্থক-সফল হবে। #সফিউল্লাহ আনসারী


 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button