বিষমুক্ত ফল চাই -সফিউল্লাহ আনসারী
ষড়ঋতুর এই দেশে আবার এলো বাঙালির মধুমাস ।বাংলা বর্ষপঞ্জিতে মধুমাস হিসেবে জৈষ্ঠ অন্য মাসের চেয়ে আলাদা ও গুরুত্বপূর্ন।জ্যৈষ্ঠ মাস বাঙালির কাছে মধুমাস হিসেবেই পরিচিত,কারন রসালো ফলের রসে মৌ মৌ চারপাশ।এই মাসে গ্রীষ্মকালীন ফল আম,জাম,লিচু,কাঠালসহ অন্যান্য ফলের সমারোহ ঘটে দেশজুড়ে।আবহমানকাল থেকে বাঙালি রসনা মেটায় এসব রসালো ফল ভক্ষন করে।এসব দেশী ফল আমাদের দেহের জন্য খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পরিন করে। যেমন শর্করা,ভিটামিন,পটাশিয়াম,আয়রন,জিংক ইত্যাদির অভাব দুর করে।কিন্তু উপকারের বদলে বর্তমানে অপকার ডেকে আনছে মৌসুমি ফল।এক সময় জৈষ্ঠ্য মাসের এসব ফল কোন রকম ভাবনা ছাড়াই খাওয়া যেতো।অথচ বর্তমানে মৌসুমি ফল খাওয়াতে অজানা শংকা-ভয় ও আতংক কাজ করে।কারন ফরমালিনসহ রাসায়নিক বস্তু ব্যাবহারের ফলে এসব ফল ভক্ষনে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে বেশী।মধু মাসের মধু ফল স্বাস্থ্যের জন্য কতটা নিরাপদ ?এমন প্রশ্ন আজ প্রতিটা বাঙালীর মনে।
ফলকে তাজা রাখতে এবং সময়ের আগেই পাঁকাতে ফরমালিনের অপপ্রয়োগ করছে একটি দুষ্টচক্র।কিছু অসাধু ফল ব্যবসায়ীদের ফলের মধ্যে দেয়া ফরমালিন-কার্বনডাইসহ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এমন সব রাসায়নিক পদার্থ দেয় যার দরুন মানব দেহের ক্ষতি হয়ে থাকে।প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব ক্ষতিকারক দ্রব্য ব্যবহারে ফল দীর্ঘদিন সতেজ অবস্থায় সংরক্ষণ হয় ।বিষমিশ্রিত ফল বিক্রির সাথেই সুযোগ সন্ধানি অনেক ব্যাবসায়ী মধুমাসের ফলগুলো চড়া দামে বিক্রি করছেন,এতে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতা সাধারন।তবে বেশী দামে ক্রেতা হয়রানি হলেও যদি আসল ও রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রন ছাড়া ফল পেতেন তাতেও স্বস্থি ছিল।ভেজাল বিরোধী অভিযান থাকলেও প্রতিনিয়ত আমরা বিষযুক্ত ফল খাচ্ছি।অসচেতনতা ও আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবে।
চিকিৎসকদের মতে-“ফরমালিন,কার্বাইডসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক বস্তু ব্যবহারের ফলে পেটের পীড়া,মাথাব্যথা,বুক ধড়ফড় করা,হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট,বদহজম-বমি-ডায়রিয়া, গ্যাস্টিক-আলসার,নানা ধরনের চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে”।
“ধীরে ধীরে এসব রাসায়নিক পদার্থ লিভার,কিডনি,হার্ট,ব্রেন সব কিছুকে ধ্বংস করে দেয়।কমে যায় স্মৃতিশক্তি।ফরমালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে।এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে।গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে।সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে,প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে এসব রাসায়নিক ব্যাবহৃত ফল বা খাদ্য গ্রহনের ফলে।”
অসাধু কতিপয় লোকের অসৎ উদ্যেশ্যের কারনে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে দেশের জনগন।সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি কোনভাবেই কাম্য নয়।প্রয়োজনে আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা ও রাজধানীরসহ সারা দেশে নিয়মিত ভেজাল ও ফরমালিন বিরোধী অভিযান চালিয়ে অর্থদন্ডের ব্যাবস্থা করা দরকার।আমাদের বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্যহানিরোধে ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং প্রজন্মের মেধা সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগী হওয়া খুবই জরুরী।
আমরা চাই মানব শরীরের জন্য নিরব ঘাতক,কেমিকেল দিয়ে ফল না পাকিয়ে প্রাকৃতিকভাবে যেনো পাকানো ফল বাজারে বিক্রি হয়।আমাদের সবার দায়িত্ব জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করা।ফল উৎপাদনকারী কৃষক, ফল ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতাদের ফল পাকানোর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায় বিষয়ে সচেতন করে তোলা এবং সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে উৎসাহীত করা।ভোক্তা ও ক্রেতা সাধারণের দাবী মধু মাসের ফল যেনো হয় বিষমুক্ত,ভেজালমুক্ত
ফলের মৌসুমে দাবী একটাই…বিষমুক্ত ফল চাই…।