উপ-সম্পাদকীয়

ইভটিজিং প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন-সফিউল্লাহ আনসারী

ইভিটিজিং আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় অসহনীয় ব্যাধি হিসেবে দ্রুত এর কুপ্রভাব ছড়াচ্ছে অনেকটা মরনব্যাধি ক্যানসারের মতো।দেশে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,বাড়ছে শিক্ষার হার।গতানুগতিক এই শিক্ষা আমাদের ছাত্র ও তরুন সমাজকে কতটুকু আদর্শবান করে তুলছে তা আজ ভাববার বিষয়।শিক্ষা কি শুধুই সনদ আর ক্লাস পাড়ি দেওয়ার বিষয়?এখানে নীতি নৈতিকতার বিষয়টি কেনো গুরুত্ব পাচ্ছেনা?একেবারেই যে পাচ্ছেনা তা নয়।তবে যতটুকু প্রয়োজন সে অনুপাতে আমাদের সন্তানরা নৈতিকতা শিক্ষায় বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে ব্যার্থ হচ্ছে।এই সময়ে উত্যক্ত করার মতো জগন্য বিষয়টি সমাজে সকর স্তরের মানুষকেই ভাবাচ্ছে।প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থোনে ইভটিজিং এর শিকার হয়ে দেশের আমাদের সন্তানদের দ্বারা আমাদেরই সমাজের বিপরিত লিঙ্গ- কিশোরী ও নারী সমাজ। ইভটিজিং নামক এই সামাজিক ব্যাধির দৌরাত্বে সভ্য সমাজ ব্যাবস্থা কলুষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।এই ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি নির্মুলে আমাদের সরকার আইন করেছে।ইভটিজিং প্রতিরোধে সব সময় সোচ্চার সরকার ও প্রশাসন !তারপরও কিছুই হচ্ছে না চাহিদার তুলনায়।বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী “নারী বা কিশোরীদের প্রতি কটুক্তি, অশালীন মন্তব্য বা অঙ্গভঙ্গি, তাদের কর্মক্ষেত্রে বা চলার পথে কোনরুম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ইত্যাদি ইভ টিজিং হিসাবে আখ্যায়িত হয়।”শুধু আইনে এই সমস্যা নির্মুল করা অসম্ভব।কারন পরিবার ও সামাজিকভাবে নারীর প্রতি দৃস্টি ভঙ্গির পরিবর্তন ও ধর্মীয় অনুশাসন এক্ষেত্রে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে।ইভটিজিং নামক ব্যাধি মুলত যৌন হয়রানিই।নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বখাটেদের উৎপাত বা ইভটিজিং। রাস্তা-ঘাটে বখাটেরা ছাত্রীদের প্রেমের প্রস্তাব দেয়,নোংরা কথাবার্তা বলে এমনকি প্রকাশ্যে শারিরিক ও মানিসিক যৌন হয়রানী করে থাকে।ইভটিজিং বিষয়টি এখন আর গন্ডিবদ্ধ নেই,এখন বিষয়টি জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে ।এ সমস্যা থেকে আমাদের বেড়িতে আসতেই হবে।সাধারনত কিশোর,তরুন, যুবকরাই ইভ টিজিং করলেও কোন কোন ক্ষেত্রে নারী ও বয়স্ক পুরুষেরাও ইভটিজিং করে থাকেন।নৈতিক মূল্যবোধের অভাব ও অবক্ষয় ইভটিজিং এর মূল কারন হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া সুস্থ্য চিত্ত বিনোদনের অভাব,বেকারত্ব,সুশিক্ষার অভাব,স্যাটেলাইট সংস্কৃতির দৌরাত্নসহ লিঙ্গ বৈষম্যও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।প্রায়ই পত্রিকা বা টিভির পদার্য় দেখা যায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা ও দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে,শিক্ষার্থীদের চলাচলের পথে কখনো এলাকার বখাটেদের উৎপাতে ইভটিজিং এর মতো অনাকাংখিত ঘটনায় আহত বা নিহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।বেপরোয়া জীবন যাপন ও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যে,পারিবারিক কলহের সুযোগে আমাদের সন্তানরা নিয়নত্রনের বাইরে চলে গিয়ে বিপথগামী হয়।পারিবারিক বোঝাপড়ার অভাবে অনেক সময় ছেলেমেয়েরা ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনার জন্ম দিচ্ছে।ইভটিজিং প্রতিরোধে সর্ব প্রথম আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।তার আরো কিছু উদ্যোগ হয়তো এই ব্যাধি সারাতে কাজ দেবে।যেমন-সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি গুরুত্ব বাড়াতে নৈতিক শিক্ষার প্রতি,ইভটিজিং এর কুপ্রভাব সর্ম্পেকে ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সকলকে সচেতন করে তুলতে হবে,সুস্থধারা ও দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে নৈতিক শিক্ষা সমৃদ্ধ চিত্ত-বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে,অপ্রাপ্তদের হাতে মোবাইল ফোন,ইন্টারনেটে পর্ণোগ্রাফি মুক্ত রাখতে হবে,ফেসবুক আসক্তি ,ডিস সংস্কৃতির মাধ্যমে যাতে বিদেশী অনুষ্ঠান দেখা থেকে বিরত রাখা যায়,পাঠ্যবইয়ে ইভটিজিং সংক্রান্ত বিষয়গুলি সংযোজন করা,ছেলেমেয়ে কার সঙ্গে মেলামেশা করছে সে সম্পর্কে নিয়মিত খোজ খবর রাখা,নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরন,পরিবার ব্যাবস্থায় পারস্পরিক বোঝাপরার মাধ্যমে সহনশীল আচরনে উদ্ভোদ্ধ করাসহ ধর্মীয় মুল্যবোধে সন্তানদেরকে আদর্শ শিক্ষা দিয়ে ইভটিজিং অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে ইভটিজিং প্রতিরোধে হল দন্ডবিধি,১৮৬০(ধারা-২৯৪ এবং ধারা-৫০৯),ঢাকা মহানগরী পুলিশ অধ্যাদেশ,১৯৭৬ (ধারা ৭৬)থাকলেও সঠিক কার্যকর আর অসচেতনতার কারনে খুব বেশী প্রভাব ফেলছেনা।ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে অকালে ঝরে যায় অনেক সম্ভাবনাময় প্র্রাণ।আবার এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে পরিবারের সদস্য,শিক্ষক বা সচেতন অনেককে মৃত্যুবরন করতে হয়েছে,ইভটিজারদের হামলায়।এ বিষয়গুলি অত্যান্ত লজ্জাজনক ও আতংকের ।সচেতন মহলের দাবী ইভটিজিং প্রতিরোধে বিভিন্ন সরকারী উদ্যোগে ও বেসরকারী কর্মসূচীর মাধ্যমে তরুন-যুব প্রজন্মকে সচেতন করার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এবং কঠোর শাস্তির মাধ্যমে অভিযুক্তকে বিচারের কাঠগড়ায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।সাধারণভাবে-রাস্তাঘাটে মেয়েদেরকে উত্ত্যক্ত বা হয়রানি করাকে ইভটিজিং মনে করা হলেও এই অপরাধের শেকড় অনেক সময় অনেক গভীরে গিয়ে সামাজিক হিংসা-হানাহানিতে রুপ নিতে পারে।উত্ত্যক্ত ও যৌন-হয়রানির ঘটনায় বাংলাদেশে মেয়েদের আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।যা অদুর ভবিষ্যতে নারীর সম্মানহানীর বড় কারন হয়ে দাড়াতে পারে।এতে নারী স্বাধীনতায় বড় ধরনের ক্ষতির আশংকাও রযেছে।নারীর প্রতি পরিবার ও সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারনেই মূলত উত্ত্যক্ত করা,ইভটিজিং বা হয়রানির মতো ঘটনা ঘটে।ইভটিজিং নি:সন্দেহে একটি ঘৃণ্য অপরাধ ।আর এই অপরাধ প্রবনতাকে রোধ করা জরুরী একটা বিষয়।কালক্ষেপন না করে সম্মিলিতভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে ইভটিজিং এর মতো সামাজিক অবক্ষয়কে প্রতিরোধের এখনই উপযুক্ত সময় । পরিশেষে বলতে চাই-ইভটিজিং বন্ধে চাই সামাজিক আন্দোলন;চাই নৈতিকতাবোধ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button