তুরস্কের সেনাঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হলো যেভাবে
ভালুকা নিউজ ডট কম; আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শুক্রবার রাতে যখন তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ে তখন মনে হচ্ছিল দেশটির নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহী সেনাদের হাতেই চলে গেছে। তুরস্কের আঙ্কারা আর ইস্তানবুলের প্রধান স্থাপনাগুলোতে তারা অবস্থান নেয় এবং ট্যাংক দিয়ে ইস্তানবুলের বোসফোরাস স্টেট-এর সংযোগ সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। এরপরই আঘাত আসে গণমাধ্যমের উপর। দেশটির সবকটি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয় আর সংবাদ মাধ্যমে আসতে থাকে সেনাবাহিনী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে-এমন খবর।
তবে সেনাবাহিনীর একাংশের বিদ্রোহী সেনাদের সেই মুহুর্তে প্রয়োজন ছিল পুরো সেনাবাহিনী এবং জনগণের সমর্থন। যা তারা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। কয়েক ঘন্টা এমন অবস্থায় বোঝা যাচ্ছিল না কি ঘটতে যাচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ আসলে কার হাতে।
ওই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়িলদ্রিম অভ্যুত্থান চেষ্টার ঘটনাকে তুরস্কের গণতন্ত্রের কালো অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করে তা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। কিন্তু এই অবস্থা থেকে যদি কেউ উদ্ধার করতে পারে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। কারণ সকল ক্ষমতা তারই হাতে। তাই বিদ্রোহ সফল করতে তাকে প্রতিহত করার প্রয়োজন ছিল সবার আগে। কিন্তু বিদ্রোহী সেনারা সেটাও করতে ব্যর্থ হয়।
সেনাবাহিনীর একটি অংশ দেশটির ক্ষমতা দখল করেছে এমন খবরে শনিবার সকালে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইস্তানবুলে ফিরে আসেন। তখন তিনি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে একটি রিসোর্টে অবকাশযাপন করছিলেন। ইস্তানবুলে ফিরে এসে বলেন, এটা বিশ্বাসঘাতকদের কাজ, এর জন্য তাদের কড়া মূল্য দিতে হবে। এ সময় তিনি গণতন্ত্রের সমর্থনে সবাইকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। অভিযোগ করেন, এই অভ্যুত্থান চেষ্টার মূলে আছে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট ধর্মগুরু ফাতাউল্লাহ গুলেন। যদিও পরে গুলেন ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এছাড়া দেশটির প্রধান বিরোধী দলগুলোও জানিয়ে দেয় তারা এই অভ্যুত্থানের সাথে নেই। ধর্মনিরপেক্ষ সিএইচপি, জাতীয়তাবাদী দল এমএইচপি সবাই সরকারকেই সমর্থন জানায়। এদিকে এরদোয়ানের আহ্বানে হাজারো সমর্থক রাস্তায় জড়ো হতে থাকে। ক্রমশ নিভে যেতে থাকে অভ্যুত্থানের চেষ্টা। বলা যায়, ওই অভ্যুত্থানে না ছিল রাজনৈতিক সমর্থন, না ছিল জনগণের সমর্থন। ফলে অভ্যুত্থানটি ব্যর্থ হয়।
ওই ঘটনার পরই সেনাপ্রধানকে বদলে নতুন ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান নিযুক্ত করা হয়। এছাড়া ৫জন জেনারেল এবং ২৯জন কর্নেল বরখাস্ত হয়। চাকুরীচ্যুত করা হয় ২হাজার ৭৪৫জন বিচারককে।
অভ্যুত্থানের চেষ্টার ঘটনাতে দেশটির সরকারী হিসেব মতে এ পর্যস্ত ১৬১জন নিহত হয়েছে, যেখানে বেসামরিক লোকসহ ১০৪সেনা রয়েছে। দেড় হাজারের মতো আহত হয় ঘটনাতে। এছাড়া এখন পর্যন্ত ৩হাজারের বেশি জনকে গ্রেফতার করেছে তুরস্ক সরকার।