বিচিত্র দুনিয়া

পাকিস্তানের মুচি, কিন্তু তাকে সালাম দিবে যে কেউ

ভালুকা নিউজ ডট কম: পথের ধারে বসে ছেঁড়া জুতো সেলাই করে এঁর পেট চলে। ‘চলে’ বললেন অবশ্য কিঞ্চিৎ অতিকথন হয়ে যাবে। কখনও চলে, কখনও চলে না।

পাকিস্তানের ফয়সলাবাদের ছোট শহর রোদালা। সেখানে বাজার এলাকায় একটু হাঁটলেই চোখে পড়বে রাস্তার ধারে বসে একমনে জুতো সারিয়ে চলেছেন মুনাওয়ার শাকিল। বাবা ছিলেন মুচি। কিন্তু মাত্র ১৩ বছর বয়সেই তিনি মারা যান। তখন থেকে মুনাওয়ার পথের ধারে জুতো সারাইয়ের কাজে। বলা বাহুল্য, পড়াশোনা করেননি। পরিবারের খিদে মেটাতে গিয়ে শৈশব বিসর্জন দিয়েছেন।

পাকিস্তান হোক বা ভারত, এ পর্যন্ত গল্পটা খুব চেনা। কিন্তু ঠিক এখান থেকেই মুনাওয়ারের গল্পটা একেবারে অন্য খাতে বয়েছে। তিন দশক ধরে মুনাওয়ার মুচির কাজ করছেন। রোজগার করতে সকালে বাড়িতে-দোকানে খবরের কাগজ ফেরি করেন। ভারতীয় মুদ্রায় হিসেব করলে, সব মিলিয়ে দিনে শ’তিনেক টাকা মেরেকেটে আয় হয় তাঁর। তবু একটি জিনিস ছাড়েননি তিনি। কবিতা লেখা।

বাবা মারা যাওয়ার পরেই সাদা কাগজে আঁকাবাঁকা হাতের লেখায় একটি কবিতা লিখেছিলেন। তার পর থেকে ক্রমাগত লিখে গিয়েছেন। জন্ম, মৃত্যু, প্রেম, ঈশ্বর— একের পর এক অবলীলায় লিখে গিয়েছেন তাঁর অনুভূতি। ছন্দে, ভাষ্যে যা এক সোনার খনি। ২০০৪ সালে কোনওক্রমে টাকাপয়সা জোগাড় করে প্রথম বইটি ছাপান। এখনও রোজকার আয় থেকে প্রকাশককে দেওয়ার জন্য ১০ টাকা করে আলাদা করে রাখেন।

প্রযুক্তির দাপটে বই বিক্রি কমে গিয়েছে। কিন্তু মুনাওয়ারের কবিতার বইয়ের বিক্রি কমেনি। তাঁর পাঁচটি বই পুরস্কৃত হয়েছে। চার দিক থেকে তাঁর বইয়ের তারিফ হচ্ছে পাকিস্তানে। তাঁর গুণমুগ্ধ ছড়িয়ে বিদেশেও। কিন্তু কারও থেকে বিন্দুমাত্র সাহায্য তিনি নেননি। অনেকেই তাঁকে অর্থনৈতিক সাহায্য করতে চেয়েছেন। মুনাওয়ার শাকিল তাঁদের হাসিমুখে ফিরিয়েছেন। সকালে খবরের কাগজ ফিরি, তার পরে মুচির কাজ এবং রাতে কবিতা— মুনাওয়ার শাকিল আছেন ভালই। ক্ষুধার বাস্তব আর কাব্যের কল্পজগতে যাঁর এমন অনায়াস যাতায়াত, পার্থিব সুখ তাঁকে টানবে কী করে?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button