জাল টাকা থেকে সাবধান
মানুষের জীবনে টাকার লেনদেন এবং প্রয়োজনীয়তা অনেক।ঈদ এলেই বহুগুনে বেড়ে যায় টাকার লেনদেন। প্রতিদিন আমরা জীবনের নানা প্রয়োজনে টাকার লেনদেন করে থাকি। অথচ আমার জানিনা যে এই লেনদেনকৃত টাকার ভেতরই রয়েছে জাল টাকা? আমাদের অজান্তেই আসল টাকার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে জাল টাকার নোট। সমাজে ভালো-মন্দের মধ্য দিয়েই মানুষের জীবন।আমাদের চলমান জীবনে সমস্যার কোন শেষ নেই,সময়ের সাথেই সমস্যার পরিমান বেড়েই চলেছে। তেমনি এক পুরাতন সমস্যার নাম জাল টাকা। প্রযুক্তির সুবিধার সাথেই অনেক অসুবিধা আমাদের নগর জীবন থেকে গ্রামীন জীবনধারা সক্রিয় জালনোট প্রতারকদের প্রতারনার জালে জড়াচ্ছে। আর জাল টাকার প্রতারক চক্র বিশেষ করে ঈদের আগে সবচেয়ে বেশী সমস্যায় ফেলে। সরকারী কর্তৃপক্ষের শত চেষ্টায়ও প্রতারকচক্রের হাত থেকে রেহাই মিলছেন। ঈদের ঘরমুখো মানুষ,মার্কেটের কেনাকাটায়,কোরবানীর ঈদে কোরবানী পশুর হাটে এসব জাল টাকা ছড়িয়ে পড়ছে। কখনো এসব টাকা ব্যাংকের কতিপয় লোভী-দুষ্টচক্রের হাত হয়ে দেশের আনাচে-কানাচের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে জাল টাকা মানুষকে বিপদে ফেলছে।
ইদানিং প্রযুক্তির ছোঁয়া গ্রাম থেকে শহরে ।নতুন করে আরেক সমস্যা হলো এটিএম বুথে জাল টাকার প্রবেশ । সম্প্রতি এমন অনেকগুলো ঘটনা ঘটলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এটিএম বুথে কোন ব্যাংক কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকায় জাল নোট সনাক্ত হলে প্রতিকার পাওয়ার জন্য গ্রাহক অসহায় হয়ে চুপ থেকে যায়। জাল টাকা রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন মাধ্যমে সচেতনামুলক প্রচারনা চালালেও বাংলাদেশ ব্যাংক এটিএম বুথে জাল টাকার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেই বলে জানা গেছে।
আধুনিক ডিজিটাল ব্যাংকিং এর সুয়োগে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তারাও ধরিয়ে দিচ্ছেন জাল টাকা,তখন প্রমানের অভাবে গ্রাহকরা হয়ে পড়েন অসহায়। প্রতারক চক্র জাল টাকা নিয়ে শুধু বড় ব্যাবসায়ীই নয় কাঁচা বাজারেও ঢোকে পড়ছে। কিছুদিন পুর্বে আমার এলাকায় সাত/আটজেনের একটি চক্র কাঁচা বাজার করছিলো,তাতে ওরা সকল দোকানদারকে একহাজার টাকার নোট দিচ্ছিল ঠিক কিন্তু সদাইয়ের পরিমাণ ২০/৫০ টাকা। জাল টাকা দিয়ে ভাঙিয়ে ভাল টাকা নিয়ে কেটে পড়ছিল। তখন ব্যাবসায়ীরা টের পেয়ে ওদের আটক করে পুলিশে দেয়। দেখাযায় খুব সহজেই ছাড়া পেয়ে আবারো জাল টাকার অসৎ কর্মে লিপ্ত হচ্ছে। প্রতারকচক্র জাল টাকা দেশজুড়ে এজেন্টদের কাছে ৬০-৭০ শতাংশ কমিশনে বিক্রি করছে আর লোভের বশবতি হয়ে কতিপয় সহজ সরল লোক এদের খপ্পরে পরে সর্বশ্রান্ত হচ্ছে। জানাযায়-১০০ টাকার জাল নোট ৪০ টাকায়,৫০০ টাকার জাল নোট ২০০ টাকায় ও ১০০০ টাকার জাল নোট বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছে জালনোট প্রস্তুতকারী চক্র। আরও জানাযায়-বাংলাদেশি এজেন্টদের মাধ্যমে ১০ ও ১০০ টাকার নতুন নোট ভারতে পাচার করে সেখান থেকে ১০ টাকার নোটে ৫০ টাকা ও ১০০ টাকার নোটে ৫০০ টাকা ছাপ দিয়ে খুব সহজেই তৈরি হচ্ছে জাল নোট। শুধু বাংলাদেশী টাকা নয়,রুপি ও ডলারও জাল হচ্ছে একই ধরনের কৌশলে। জালনোট প্রতারকচক্র ১০০,৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট গুলোকেই বেশী জাল করছে।
কোরবানীর ঈদের আগের পাড়া-মহল্লায় গরু ব্যাবসায়ীর ছদ্ধবেশে কু-চক্রিমহল জাল টাকা নিয়ে কৃষকের কাছ থেকে বেশী দামে কোরবানীর পশু কিনে জাল টাকার নোট দিয়ে সটকে পড়ছে।প্রতারিত হয়ে মাথায় হাত দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ।এসব প্রতারকদের হাত থেকে বাঁচতে পুলিশ প্রশাসনের সার্বক্ষনিক মহরা ও বিশেষ বাহিনী সাদা পোষাকে বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালিত করলে হয়তো একটু নি:স্কৃতি মিলত। জাল টাকা রোধে রয়েছে সরকারী আইন-“১৯৭৪ সালের আইনে জাল টাকা বা জাল স্ট্যা¤েপর সঙ্গে জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়ার বিধান ছিল। ১৯৮৭ সালের ১৯ জানুয়ারি আইনটি সংশোধন করে জাল নোটের সঙ্গে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড অথবা ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।”জাল টাকার ব্যবসা বন্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ ও জনসচেতনাই পারে প্রতারকচক্রের হাত থেকে রক্ষা করতে।
ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় জাল নোট কারবারিদের বাণিজ্যকে প্রতিহত করতে সরকারের গুরুত্ব দেয়া অতীব জরুরী। প্রতারক চক্রগুলো ঈদকে সামনে রেখে ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠছে । আর এই অনাকাংখিত বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পেতে সর্বাগ্রে আমাদেরকে লেনদেনে সাবধান হতে হবে । জালনোট কারবারি চক্রের হাত থেকে মুক্তির লক্ষে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
#