ভালুকা উপজেলাসারা ভালুকা

মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের ২৩তম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী

ভালুকা নিউজ ডট কম, ডেস্ক: ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার নিভৃত পল্লী মল্লিকবাড়ী গ্রামে একটি মাত্র রাইফেল নিয়ে মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ সাহেব পার্টি গঠন করেন। পাকবাহিনী ও দুষ্কৃতিকারীগণের সাথে লড়াই করে মেজর আফছার সাহেব শত্রুদেরকে সমুচিত শিক্ষা দিয়েছেন এবং তিনি তার পার্টি নিয়ে শত্রুপক্ষের নিকট থেকে আড়াই হাজারেরও অধিক রাইফেল, ব্রেটাগান, রকেট লান্সার, স্টেনগান, এমএমজি ইত্যাদি উদ্ধার করেন। তার দ্বারা পরিচালিত বাহিনীতে সর্বমোট প্রায় সাড়ে চার হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল।

মেজর আফছার সাহেবের পৃষ্ঠপোষকতায় আফছার ব্যাটালিয়নের তরফ থেকে সাপ্তাহিক জাগ্রত বাংলা পত্রিকা যাবতীয় সংবাদ পরিবেশন করে মুক্তিকামী মানব মনে প্রেরণা জুগিয়েছে।

আফছার ব্যাটালিয়নের তরফ থেকে রোগাক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং বিপর্যস্ত মানুষের চিকিৎসার জন্য ১৩ জন ডাক্তার ও ৩ জন নার্স সমন্বয়ে একটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছিল মেজর আফছার সাহেবের প্রচেষ্টায়। আফছার ব্যাটালিয়ন কর্তৃক মুক্ত এলাকার সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল। এই শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে আফছার ব্যাটালিয়ন তাদের দ্বারা মুক্ত এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে।

মেজর আফছার সাহেব কর্তৃক পরিচালিত মুক্তিবাহিনীকে সেনাবাহিনীর নিয়মানুযায়ী মোট ২৫টি কোম্পানী অর্থাৎ ৫টি ব্যাটালিয়নে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক কোম্পানীতে ৩টি প্লাটুন, প্রত্যেক প্লাটুনে ৩টি সেকশন এবং প্রত্যেক সেকশনে ১৫ জন করে মুক্তিসেনা ছিল। প্রকাশ থাকে যে হাসপাতাল, পত্রিকা অফিস এবং বার্তা বিভাগের মুক্তিযোদ্ধারা কোম্পানীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।

ময়মনসিংহ সদর (দক্ষিণ) ও ঢাকা সদর (উত্তর) সেক্টরের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আফছার ব্যাটালিয়ন গঠিত হয়েছিল। আফছার ব্যাটালিয়নের কৃতিত্বের কথা এ পুস্তকে তুলে ধরা হয়েছে। আফছার ব্যাটালিয়নের প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাই এই কৃতিত্বের অংশীদার।

স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্ষীবাহিনী এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। রক্ষীবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রম, অকৃত্রিম সেবাযত্ন এবং অসীম ভালোবাসার উপর ভিত্তি করেই আফছার ব্যাটালিয়ন সফলতার চরম শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে বাটাজুর, কচিন, ডাকাতিয়া, পাঁচগাঁও, কাওলামারী, রাজৈ, ফুলবাড়িয়া, আমিরাবাড়ী, নারাঙ্গী, বড়ইদ, দক্ষিণ ফুলবাড়িয়া ও কালিয়াকৈর এলাকার রক্ষীবাহিনী স্বাধীনতা সংগ্রামে যে ভূমিকা পালন করেছে তা মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

…পাকবাহিনী কর্তৃক হামলার প্রথমাবস্থায় মুক্তিকামী বাঙালি নওজোয়ানগণ (প্রাক্তন ই পি আর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট, পুলিশ বাহিনী, আনসার, মুজাহিদ, ও অন্যান্যরা)। বীরবিক্রমে পাল্টা আক্রমণ চালান, কিন্তু পাকবাহিনীর মত সুসংগঠিত বর্বর বাহিনীর সাথে টিকে ওঠা সম্ভব না হওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য বন্ধু রাষ্ট্রে আশ্রয় নেন।

মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য জীবন-মরণ পণ করে অগণিত বাঙালি নওজোয়ান ওপার বাংলার সামরিক শিক্ষা গ্রহণ শুরু করে। মেজর আফছারউদ্দিন আহমেদ সাহেব ওপার বাংলায় পাড়ি না জমিয়ে দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন, বর্বর বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করে এক বিরাট এলাকা মুক্ত করেন। একই সময়ে টাঙ্গাইল জেলার কাদের সিদ্দিকী সাহেবও দেশের অভ্যন্তরে পার্টি গঠন করেন এবং এক বিরাট এলাকা মুক্ত করার প্রয়াস পান।

…ওপার বাংলা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আসার বেশ কিছুদিন আগেই পাকবাহিনীর নিকট থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিনিয়ে এনে মেজর আফছার উদ্দিন তাঁর পরিচালিত মুক্তিদলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলেন। তিনি ১৯৭১ সনের জুন মাসে ভালুকা থানার ভাওয়ালিয়া বাজু এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে একটানা ৪৮ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধ করে এক রেকর্ড সৃষ্টি করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি অগণিত সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। তাঁর অসীম কর্মদক্ষতার গুণে তিনি একটি রাইফেল থেকে শুরু করে প্রায় সাড়ে চার হাজারেরও অধিক মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিবাহিনী ভেঙ্গে দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেন।

তিনি শপথ করেছিলেন- ‘দেশকে শত্রুমুক্ত না করা পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ করবো না আমার যদি মৃত্যু হয় তাহলে যেন মুক্ত এলাকাতেই হয়।’ বর্বর বাহিনী শত চেষ্টা করেও আফছার ব্যাটালিয়ন কর্তৃক মুক্ত এলাকায় প্রবেশ করতে পারে নি। আফছার সাহেব শপথ করেছিলেন- ‘জীবিত থাকতে মুক্ত এলাকায় শত্রুদেরকে প্রবেশ করতে দেব না।’ তাঁর শপথ অক্ষরে অক্ষরে রক্ষা করেছেন। তিনি তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘জাগ্রত বাংলা’য় তাঁর বাহিনী কর্তৃক মুক্ত এলাকার মানচিত্র অংকন করে সমস্ত বাংলাদেশ, ওপার বাংলা ও পাক বাহিনীর অনেক ঘাঁটিতেও বিতরণ করেছেন। তিনি ১৯৭১ সনের আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে আগরতলা যেয়ে লেঃ কর্নেল নুরুজ্জামান সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করেন। লেঃ কর্নেল নুরুজ্জামান সাহেব বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কিছু অস্ত্র ও অসীম উৎসাহ উদ্দিপনা দিয়ে বিশেষভাবে উপকৃত করেন।

ময়মনসিংহ সদর (দক্ষিণ) সেক্টরের মুক্তিবাহিনী অধিনায়ক মেজর আফছার উদ্দিন আহমেদের গঠিত ব্যাটালিয়নের স্বাধীনতা সংগ্রামের কার্যাবলীঃ-

২৩-৪-১৯৭১> ময়মনসিংহ জিলার ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মল্লিকবাড়ী ইউনিয়ন কাউন্সিল সদস্য জনাব আফছার আহমেদ মাতৃভূমিকে পশ্চিমাদের কবল হতে শোষণমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ভালুকা থানার রাজৈর গ্রামের বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ কর্মী মোঃ আব্দুল হামিদ সাহেবের নিকট থেকে একটি রাইফেল ও ৩০ রাউণ্ড গুলি নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করার সিদ্ধান্ত করেন।

২৪-৪-১৯৭১> প্রাক্তন ই পি আর বাহিনীর ফেলে যাওয়া ৭টি রাইফেল এবং উপরোক্ত আব্দুল হামিদ সাহেবের নিকট থেকে সংগ্রহ করা ১টি রাইফেল মোট ৮টি রাইফেল নিয়ে জনাব আফছারউদ্দিন আহমেদ সাহেবের নেতৃত্বে মল্লিকবাড়ী এলাকায়

১। মোঃ আমজাদ হোসেন

২। মোঃ আবদুল খালেক

৩। শ্রীনারায়ণ চন্দ্র পাল

৪। মোঃ আবদুল বারেক মিয়া

৫। মোঃ আবদুল মান্নান

৬। শ্রী-অনীলচন্দ্র সাংমা ও

৭। ছমির উদ্দিন মিয়ার সহযোগিতায় সর্বপ্রথম মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়। মোঃ আবদুল মান্নান ভাওয়ালিয়া বাজু যুদ্ধে এবং শ্রী অনীলচন্দ্র সাংমা ডুমনিঘাট যুদ্ধে নিহত হন।

মুক্তিবাহিনী গঠনে সক্রিয়ভাবে যারা সাহায্য করেছেন তাঁরা হলেন মোঃ জবান আলী ফকির, ডাঃ হাফিজউদ্দিন আহমেদ, মোঃ আবদুল রাজ্জাক, মোঃ আবদুল হামিদ, মোঃ মোসলেম মিয়া, বাবু প্রেম অধিকারী এবং মোঃ হাফিজুর রহমান। উক্ত পার্টি ভালুকা, গফরগাঁও, ফুলবাড়ীয়া, ত্রিশাল, কোতোয়ালী, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর বাশাইল, কালিহাতি, মির্জাপুর এবং মুক্তাগাছা ইত্যাদি এলাকায় কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরিচালিত জনাব আফছারউদ্দিন আহমেদ নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবার জন্য শপথগ্রহণ করেন।

২৬-৪-১৯৭১> বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়ে ঢাকাতে ও দুষ্কৃতিকারীদের নিকট থেকে অস্ত্র উদ্ধার কার্য শুরু করা হয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই মোট ২৫টি রাইফেল বিভিন্ন উপায়ে সংগ্রহ করা হয়।

২-৫-১৯৭১> অধিনায়ক আফছারউদ্দিন আহমেদ সাহেবের নেতৃত্বে ভালুকা থানা হেডকোয়ার্টার আক্রমণ করা হয় এবং সেখান থেকে ১০টি রাইফেল এবং ১৫৫০ রাউণ্ড গুলি ও ৩০টি বেয়নেট উদ্ধার করা হয়।

১২-৫-১৯৭১> টাঙ্গাইল জেলার বল্লা এলাকায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী সাহেবের সঙ্গে অধিনায়ক আফছার সাহেব একটি কোম্পানী নিয়ে বল্লা আক্রমণ করেন। উক্ত যুদ্ধে ৫১ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং বহুসংখ্যক আহত হয়।

২০-৫-১৯৭১> ভালুকা থানার বাইন্দা গ্রামের কুখ্যাত ডাকাত, লুণ্ঠনকারী ও পাক বাহিনীর দালাল ইছহাক খানের হত্যা করা হয়।

২১-৫-১৯৭১> এই দিনে ভালুকা থানা আক্রমণ করে ২টি ব্রেটাগান, ১০টি রাইফেল এবং এক বাক্সগুলি উদ্ধার করা হয়।

২২-৫-১৯৭১> অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে গফরগাঁও থানার কাওরাইদ রেল স্টেশনের উত্তর পার্শ্বস্থিত গ্রাম গয়েশপুর থেকে মুক্তিসেনা নুরুল ইসলামের সহায়তায় ২টি চাইনীজ রাইফেল এবং ৬ বাক্স গুলি উদ্ধার করা হয়।

০২-০৬-১৯৭১> বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়ে ডাকাত ও দুষ্কৃতিকারীদের নিকট থেকে মোট ১১টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

২৩-৬-১৯৭১> ভালুকা থানার পোনাশাইল এলাকার একদল মুক্তিসেনা টহল দেওয়াকালীন সময়ে একখানা সন্দেহজনক নৌকা আটক করা হয়। উক্ত নৌকা তল্লাশী করে ৫টি রাইফেল ও ৪ বাক্স গুলিসহ ৫ জন পুলিশ ধরা হয়। উক্ত পুলিশের নিকট থেকে অনেক গোপন তথ্য জানা সম্ভব হয়। তারা মুক্তিবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে।

২৫-০৬-১৯৭১> পনের শতাধিক পাক সেনার একটি দল তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ভালুকা ঘাঁটি করার উদ্দেশ্যে গফরগাঁও থেকে ভালুকা রওয়ানা হয়। পাক সেনাদের এই সুসজ্জিত বাহিনী ভালুকা যাওয়ার সময় অধিনায়ক আফছার সাহেব ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সকাল ৮ ঘটিকায় ভাওয়ালিয়া বাজু বাজারের ঘাটে তাদের রাস্তা রোধ করেন এবং যুদ্ধ শুরু হয়। পাকসেনারা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মুক্তিসেনারা মাত্র ২ টি এল এম জি (হালকা মেশিনগান) ও ৩৭ টি রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। অবিরাম ৩৫ ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর পাকবাহিনী অগ্রসর হতে না পারায় মুক্তিসেনাদের পিছন দিকে পাক সেনাদের সাহায্যের জন্য হেলিকপ্টার দ্বারা কয়েকবারে ৩ শতাধিক পাকসেনা অবতরণ করানো হয়। এই যুদ্ধ মোট ৪৮ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এতে ১৯৫ জন পাকসেনা নিহত ও বহুসংখ্যক আহত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিসেনা আঃ মান্নান শহীদ হন এবং ৩জন মুক্তিসেনা আহত হন।

২৮-৬-১৯৭১> অধিনায়ক আফছারউদ্দিন সাহেব নিজেই রাত্রি ৩ ঘটিকায় ভালুকা থানায় গ্রেনেড আক্রমণ চালিয়ে ১৭ জন পাকসেনাকে নিহত ও কয়েকজনকে আহত করেন।

১৭-৭-১৯৭১> মেজর আফছারউদ্দিন আহমেদ সাহেবের নেতৃত্বে গফরগাঁও থানার দেউলপাড়া এলাকায় পাক সেনাদের একটি টহলদারী ট্রেনের উপর মুক্তিসেনারা আক্রমণ চালায়। ফলে ৭ জন পাক সেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।

১৯-৭-১৯৭১ ভালুকা থানার হরিরবাড়ী এলাকায় সিস্টোর বাজারে আফছার সাহেবের নেতৃত্বে রাত্রি ৩ টা ২০ মিনিটে পাকসেনাদের ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। ফলে ২৩ জন পাকসেনা নিহত ও ৯ জন আহত হয়। রাত্রের আক্রমনে তারা ভীত হয়ে পরের দিন ত্যাগ করে পলায়ন করে।

২৫-৭-৭১> অধিনায়ক আফছার সাহেব নিজে একদল মুক্তিসেনা নিয়ে অতর্কিত মল্লিকবাড়ী ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়ে রাত্রি ৪ টা ২০ মিনিটে পাকসেনাদের ১৬ জনকে নিহত ও কয়েকজনকে আহত করেন।

২৬-৭-১৯৭১> মল্লিকবাড়ী পাকবাহিনীর ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধারা রাত্রি ২ ঘটিকায় গেরিলা পদ্ধতিতে গ্রেনেড চার্জ করে পাকসেনাদের ৪ জনকে নিহত ও ৩ জনকে গুরুতরভাবে আহত করেন। একই দিন অন্য একদল মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা জেলার শ্রীপুর থানার মাওয়া গ্রামের কুখ্যাত ডাকাত ও দালাল হাবিবুর রহমান (এম ইউ সি) এবং হামিদ ফকিরকে হত্যা করেন।

২৯-৭-১৯৭১> আফছার ব্যাটালিয়নের কোম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়ার দলের হাতে পাকবাহিনীর ৩ জন গুপ্তচর পারুলদীয়া বাজারে ধরা পড়ে ও তাদেরকে হত্যা করা হয়। অধিনায়ক আফছার সাহেব ১লা আগস্ট তারিখে অন্য একদল মুক্তিসেনা নিয়ে ভালুকা থানার ভয়াবহ খেয়াঘাটে পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে ৯ জন পাকসেনাকে হত্যা করেন।

০৩-৮-১৯৭১> প্লাটুন কমান্ডার হাফিজুর রহমান, মোঃ আইয়ুব আলী এবং সেকশন কমান্ডার আবদুল করিমের নেতৃত্বে একদল মুক্তিসেনা ত্রিশাল থানার কানিহারী গ্রামে একদল রাজাকারের উপর আক্রমণ চালিয়ে একটি রিভলবার ও কয়েক রাউণ্ড গুলি উদ্ধার করেন। ঐদিন রাত্রে প্লাটুন কমান্ডার হাফিজুর রহমান একজন মুক্তিসেনা সাথে নিয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে কালীরবাজার স্কুলের ছাত্র ফোরকানউদ্দিন আহমেদ, কাঁঠাল গ্রামের মোঃ আবু তাহের, মহসীন, শামছুল হক, জালাল, টুকু ও সুন্দর আলীর সহায়তায় কালীরবাজার হাই স্কুল ল্যাবরেটরী থেকে কিছু হাত বোমা, এসিড, বারুদ ইত্যাদি উদ্ধার করেন। একই দিন প্লাটুন কমান্ডার আইয়ুব আলী সাহেব অন্য কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সাথে নিয়ে কাঁঠাল গ্রামে হানা দিয়ে ২ জন দুষ্কৃতিকারীকে গ্রেফতার করেন।

০৪-৮-১৯৭১> পাকবাহিনী ভালুকা থানার ডাকাতিয়া বাজার এবং গ্রামের বাড়িঘর লুটপাট করে ফিরবার পথে অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে ২ দল মুক্তিসেনা পাকসেনাদের পিছন ও বাম দিক থেকে আক্রমণ চালায়। ফলে পাকবাহিনী ৩০ জন সেনা নিহত ও আহত হয়। লুট করা সমস্ত মালপত্র মুক্তিসেনাদের হস্তগত হয়। একটি ব্যারোমিটারও পাওয়া যায়। মেজর আফছার সাহেবের নির্দেশে গফরগাঁও থানার কুখ্যাত ডাকাত ও রাজাকার কমান্ডার গাওয়াকে মুক্তিবাহিনীর কোম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়ার নেতৃত্বে তার নিজ বাড়ির গ্রেফতার ও পরে হত্যা করা হয়।

০৯-৮-১৯৭১> অধিনায়ক আফছার সাহেব নিজেই কোম্পানী কমান্ডার মোমতাজউদ্দিন ও অল্প কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বিকাল ৫ ঘটিকায় মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি আক্রমণ করেন এবং ১৪ জন পাকসেনা, ৪ জন রাজাকারকে নিহত ও কয়েকজনকে আহত করেন।

১০-৮-১৯৭১> সকালে পাকবাহিনীর একটি দল মল্লিকবাড়ী বাজার থেকে ভালুকা যাওয়ার জন্যে খেয়াঘাটে এসে নৌকায় চড়লে অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা পাকসেনাদলকে আক্রমণ করেন। ফলে ১৪ জন পাকসেনা এবং ২ জন নৌকার মাঝি নিহত হয়। মল্লিকবাড়ী বাজারে ২৪ জন খানসেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।

১২-৮-১৯৭১> মল্লিকবাড়ী বাজারের ঘাট আক্রমণ চালিয়ে ১১ জন পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার হত্যা করা হয়।

১৩-৮-১৯৭১> অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে মল্লিকবাড়ী বাজারে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ২৬ জন রাজাকার ও ২ জন পাক সেনাকে হত্যা করা হয়।…..(সংক্ষেপিত)
https://muktizuddho71.com থেকে সংগৃহীত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button