পার্বতীপুর মধ্যপাড়া খনিতে ১বছর পাথর উৎপাদন বন্ধে ১৮ কোটি টাকা লোকসান
মোঃ রুকুনুজ্জামান বাবুল; পার্বতীপুর, দিনাজপুর : দিনাজপুরের মধ্যপাড়া খনিতে ১বছর ধরে পাথর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় খনির প্রতিমাসে লোকসান হচ্ছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।ইতিমধ্যে লোকসান হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। অপরদিকে, দীর্ঘদিন ধরে বেকার হয়ে পড়া প্রায় ৬০০ খনি শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
গত জানুয়ারি মাস থেকে কয়েকদফা নির্দিষ্ট দিন-তারিখ দিয়েও এখন পর্যন্ত খনি ভূ-গর্ভে স্টোপ উন্নয়ন কাজই শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি।
সবশেষ চলতি মাসের মধ্যে স্টোপ উন্নয়ন কাজ শেষ করে পাথর উত্তোলন শুরু করার কথা বলেছিল জিটিসি। কিন্তু এখন পর্যন্ত যন্ত্রপাতি সংযোজন ও বসানোর কাজই শেষ হয়নি। কাজের গতি অত্যন্ত মন্থর। স্টোপ উন্নয়ন করে পাথর উৎপাদনে যেতে আরও মাসখানেক সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত প্রধান খননযন্ত্র রেইজ বোরিং মেশিনসহ প্রয়োজনীয় মাইনিং ইক্যুপমেন্টের (যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ) অভাবে স্টোপ উন্নয়ন করতে না পারায় মজুদ শেষ হয়ে যায়। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ গ্রানাইট শিলা খনিটি ২০০৭ সালের ২৫ মে উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে এর আগে এত দীর্ঘ সময় ধরে কখনই পাথর উৎপাদন বন্ধ থাকেনি।
জানা গেছে, জিটিসি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রায় ১৪৪ কোটি টাকার মাইনিং ইক্যুপমেন্ট আমদানির জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে চাহিদাপত্র দেয়। সে সময় যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য মালামালের বাজারমূল্য ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা নিয়ে জিটিসির সঙ্গে খনির কর্তৃপক্ষকের মতবিরোধ দেখা দেয়।
পরে খনির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার হস্তক্ষেপে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ৮৫ কোটি টাকার মাইনিং ইক্যুপমেন্ট বিদেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয় খনি কর্তৃপক্ষ। জিটিসির অনুকূলে খোলা হয় ৩৬টি এলসি। চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে প্রায় ৩০টি এলসির যন্ত্রপাতি আসার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি নির্ধারিত সময়ে যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে পারেনি।
এ পর্যন্ত মূল খননযন্ত্র রেইজ বোরিং মেশিনসহ ২১টি এলসির মালামাল খনিতে এসে পোঁছেছে। ৪টি এলসির যন্ত্রপাতি চট্টগ্রাম বন্দরে ও ১টি এলসির যন্ত্রপাতি শাহজালাল বিমানবন্দরে রয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রধান খননযন্ত্র রেইজ বোরিং মেশিন ভূ-গর্ভে বসানো হয়েছে। সারফেজে ক্র্যাশিং ও সর্টিং প্লান্টে যন্ত্রপাতি সংযোজনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে মাচিং লোডার এবং ড্রিলিং জাম্বু মেশিন সংযোজন ও বসানোর কাজ চলছে। এখনও খনি ভূ-গর্ভে রোডওয়েতে রেললাইন বসানোর কাজ বাকি। সব মিলে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্টোপ উন্নয়ন কাজ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) জানান, শিগগির পাথর উৎপাদন শুরু করার জন্য জিটিসিকে জোর তাগাদা দেওয়া হয়েছে। অক্টোবর মাসের শেষে এক শিফটে পাথর উত্তোলন শুরু হতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মধ্যপাড়া খনির উৎপাদন ও রক্ষনাবেক্ষণ ঠিকাদার হিসেবে বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট সকটোস্ট্রয় ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া করপোরেশন লিমিটেড নিয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি পাথর উত্তোলন শুরু করে।
জিটিসি ১৭১.৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ৬ বছরে ৯২ লাখ টন পাথর উত্তোলন করে দিবে। এ পর্যন্ত উত্তোলন করেছে ১১ লাখ ৯২ হাজার টন পাথর। উৎপাদন বন্ধ হওয়ার সময় খনি ইয়ার্ডে বিভিন্ন সাইজের প্রায় ৭ লাখ টন পাথর মজুদ ছিল। গত জানুয়ারি মাসের মধ্যে তা বিক্রি হয়ে যায়।