উপ-সম্পাদকীয়বিভিন্ন দিবস

বিশ্ব প্রবীণ দিবস 

মানুষ তার জীবনের কয়েকটিধাপ পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনিত প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই।আনন্দ-বেদনা আর পাওয়া-না পাওয়ার এই মানবজীবনের শেষ অধ্যায় হিসেবে প্রবীণ বয়স।শারীরিক ভাবে দুর্বল বা অনেক ক্ষেত্রে অক্ষমতা একজন বয়স্ক মানুষকে অসহায় করে তুলে।তার উপর যদি পরিবারের সদস্যদের অবহেলা কপালে জুটে যায় তবে নিদারুন কষ্টকর জীবন নিয়ে একজন প্রবীনকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই থাকেনা।এসব অসহায় প্রবীনদের কথা ভেবেই এই বিশ্ব প্রবীন দিবসের সুচনা।এটা একটা দিনে সীমাবদ্ধতার জন্য নয়,প্রবীণ ব্যাক্তিদের গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিতেই এ দিবস।বিশ্বের সাথে গুরুত্বকে সামনে রেখেই আমাদের দেশে প্রবীণ দিবস পালিত হয় ১অক্টোবর।জীবনের এ পর্যায়ে একজন প্রবীণ ব্যাক্তি পরনির্ভশীল হয়ে পড়েন যা তার জন্য অসহায়ত্বকেই দ্বীর্ঘায়িত করে।তবে একজন প্রবীণ যতোই অসহায় বা দুর্বল হয়ে পড়েনা কেনো তার কিন্ত অভিজ্ঞতার সঞ্চয় অনেক বেশীই।একজন তরুণ বা যুবকের বুদ্ধির অপরিপক্কতার তুলনায় শারীরিক দুর্বল প্রবীণ ব্যাক্তির বুদ্ধির পরিপক্কতা উত্তরণের পথ দেখায়।কেবল অধিকারের প্রশ্নে নয়, একজন প্রবীণ ব্যাক্তি আমাদের পরিবারের বাইরের কেউ নন বরং কেউ আমাদের দাদা,দাদি,নানা-নানি,বাবা-মা বা অন্য কেউ যারা আমাদের আপনজন।শুধু বয়সের কারনে বা বার্ধ্যকের কারনে তারা গুরুত্বহীন অবস্থায় থাকতে পারেন না।অমানবিক আচরনের দ্বারা প্রবীণরা কষ্ট না পেয়ে যদি জীবনের শেষ পর্যায়ে আন্তরিকতাপুর্ণ আচরন,সফল,সার্থক ও স্বাচ্ছন্দময় জীবন পায় তা আমাদের নৈতিক দ্বায়িত্বের মধ্যে পড়ে।পরনির্ভলীল হওয়ায় অনেক সময় আমরা প্রবীণদের অবহেলার চোখে দেখি।তাদের মতামতকে গুরুত্ব ‍দেইনা।অনেকটা সামাজিক ও পারিবারিক কর্মকান্ড থেকে  তাদের দুরে রাখি বা তারাই দুরে সরে যায়,এমনটা ঠিক না কারন প্রবীণদের বুদ্ধিদীপ্ত দিকনির্দেশনা আমাদের ব্যাক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ভাবনাকেও নতুন পথ দেখাতে পারে।তাদের জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের মানাবজীবনে সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও মুক্তি মিলতে পারে।শুধু প্রবীণ দিবস নয় সারা বছর আমরা বয়স্ক এই মানুষগুলোর খোঁজ-খবর নিই,তাদের স্বাস্থ্যগত ,মানিসিক ও পারিপারর্শিক বিষয়ে তাদের পাশে থাকি ,পাশে রাখি তবে উভয়েরই মঙ্গল। শহরের প্রবীণরাই গ্রামাঞ্চলের বুড়ো-বুড়ি নামেই পরিচিত প্রৌঢ় মানুষজন আমাদের সমাজেরই অংশ।চাকরিজীবিদের বয়সে প্রৌঢ়ত্ব নির্ধারিত থাকলেও গ্রামের কৃষিনির্ভর মানুষগুলোর অবসর গ্রহণের কোন নির্দিষ্ট বয়স না থাকায় তাদের পৌঢ়ত্ব নির্ধারণ বেশ কঠিন।তবে গ্রামাঞ্চলে বুড়োবুড়ি নামের ব্যাক্তিরাই প্রবীণ হিসেবে পরিচিত। চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়নের সাথেই মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধ পাচ্ছে,সেই সাথে বয়স্কদের মৃত্যুহার একদিকে যেমন কমেছে অন্যদিকে গড়আয়ুও বৃদ্ধি পাচ্ছে।প্রবীণরা শারিরিকভাকে হয়তো দুর্বল কিন্তু বুদ্ধিতে পরিপক্ক।আমরা তরুণ-যুবক সমাজ তাদের থেকে অনেক ভালো কিছু করার ও বাস্তব জীবনের সংকট মুহুর্তে সমস্যা কাটিয়ে উঠার শিক্ষা পেতে পারি।যা আমাদের বর্তমান ও ভীবষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয়-অনুসরনীয় এবং তাদের জীবকে সহজ-সুন্দর করতে পারে।বর্তমান সময়ে সমাজ এবং পরিবারে বয়স্করা অনেক ক্ষেতেই বোঝা হিসেবে খুবই কষ্টকর জীবন যাপন করছেন। দরিদ্র ও অনেক পরিবারের অবহেলিত-হতভাগ্য অনেক প্রবীণ ব্যাক্তি ভিক্ষাবৃত্তি বা অন্যের করুণার পাত্র হয়ে বাকিজীবন অতিবাহিত করেন যা একজন প্রবীণ ব্যাক্তির জন্য দুর্ভাগ্য ও অপমানজনক।

সত্যি বলতেকি প্রবীণরাই আমাদের শিক্ষক-অভিভাবক,পথের দিশারী,তাদের বাদ দিয়ে সামগ্রীক উন্নয়ন সম্ভব নয়।তাই শুধু এই একটি দিন নয় আসুন প্রতিদিন-প্রতিমুহুর্ত আমরা প্রবীন প্রিয় মানুষগুলোরকে মূল্যায়ন করি।তাদের ভালো-মন্দকে গুরুত্ব দেই।তাদেরকে সঙ্গ দেই।জীবনের পরিকল্পনায় তাদের বুদ্ধি ও দিকনিদের্শনাকে মূল্যায়ন করি এবং তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দেই,কারন আমরাও একদিন তাদের মতো প্রবীণ বয়স্ক জীবনে প্রবেশ করবো।পরবর্তী প্রজন্মকে শেখাতে আমরা সম্মান পেতে প্রবীণদের প্রতি সহনশীল হওয়া জরুরী।করুনা নয় ভালোবাসা আর সম্মান প্রর্দশনের মাধ্যমেই আমরা প্রবীনদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করবো আমাদের মঙ্গলের জন্যই এবং এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্বও।

সন্তানের মঙ্গল কামনায় যে পিতা-মাতা তাদের জীবকে প্রৌঢ়ত্বে নিয়ে এসেছেন সেই প্রবীণ মানুষগুলোর সুস্থ্যজীবন যাপনের জন্য তাদের বার্ধক্যকে সম্মানজনকভাবে কাটাতে তাদেরও প্রতি সন্তানদের দায়িত্ব সম্মান প্রদর্শন করা ।

আসুন আমরা প্রবীণদের নিয়ে ভালো কিছু করার জন্য নিজে সন্তান হিসেবে সচেতন হই এ ব্যাপারে সকলকে সচেতন করি।সামাজিক সম্মানবোধ,মুল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে আমাদের জীবনে সবচে সম্মানিত ব্যাক্তি এই প্রবীণদের সম্মান দিতে শিখি,তাদের জীবনকে আনন্দময় করে তুলি আর তা সম্ভব পরিবারের সদস্যদের আন্তরিকতাপুর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে।বিশ্ব প্রবীণ দিবস সফল হোক।

#সফিউল্লাহ আনসারী

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button