গ্রামীণ কৃষিপ্রাণের বাংলাদেশ

ভালুকায় সৌদি খেজুরের সফল চাষী মোতালেব

কৃষি প্রতিবেদক :ময়মনসিংহের ভালুকায় সৌদি আরবের খেজুর সফলভাবে চাষ হচ্ছে । মোতালোবের এই সফলতায় বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া সৌদি খেজুর চাষের জন্য উপযোগী হিসেবেই প্রমানিত। সৌদি খেজুর চাষে হওয়ায় ভালুকার আবদুল মোতালেব এখন খেজুর মোতালেব নামেই বেশি পরিচিতি পেয়েছেন এলাকায়। বাংলাদেশের মাটিতে সৌদি খেজুর মানেই ভালুকার পাড়াগাঁও গ্রামের মোতালেবের বাগানের খেজুর।
মোতালেব ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার পাড়াগাঁ গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। মোফাজ্জল সৌদিয়া খেজুর বাগানের গর্বিত মালিক-মোতালেব। ভালুকা সদর থেকে প্রায় ১৩/১৪ কিলোমিটার দূরে হবিরবাড়ি ইউনিয়নের সিডস্টোর-বাটাজোর সড়কের পাড়াগাঁও গ্রামের গতিয়ার বাজারের পাশে মোতালেবের খেজুর বাগান। অসাধ্যকে সাধন করে দেশের মাটিতে সৌদি খেজুর ফলিয়ে নিজের নামের সাথেই তার গ্রাম, উপজেলা ও জেলাকে দেশ-বিদেশে নতুন করে পরিচয় করিয়েছেন এই খেজুর মোতালেব।
লেখাপড়ায় খুব বেশীদূর এগুতে না পারা মোতালেব জীবিকার টানে ১৯৯৮ সালে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে তিনি কাজ করতেন আল কাছেম জেলার আল মাছনাব গ্রামের খালিদ আশরাফের খেজুরের বাগানে। ওই সময় থেকেই দেশের মাটিতে সৌদি খেজুর চাষের স্বপ্নকে লালন করতে থাকেন মোতালেব। সেই স্বপ্নকে তিনি বাস্তবে রূপ দিতে ২০০১ সালে দেশে ফিরে মোতালেব শুরু করেন তার সঙ্গে আনা তিন কেজি খেজুরের বীজ দিয়ে বাগান গড়ার কাজ। প্রথম দফায় ১০ কাঠা জায়গায় বাগান করেন। বড় ছেলের নাম করে বাগানের নাম রাখেন ‘মোফাজ্জল সৌদিয়া খেজুর বাগান’। তার রোপিত ২৭৫টি চারা থেকে এখন বাগানে কয়েক শত গাছ। আয়তন বেড়ে হয়েছে ৩টি আলাদা বাগান। ১০ বিঘার সারি সারি খেজুর বাগান।
বাগান ঘুরে তার বিশাল বাড়িতে বসে কথা হয় মোতালেবের সাথে। তিনি জানান, এখন তার বাগানে প্রায় আট হাজারের মতো খেজুরের চারা রয়েছে। ৫০০ থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকায় একেকটা চারা বিক্রি করেন। তবে ৫/৭ হাজার টাকা দামেই বেবি বিক্রি হয়। ছোট-বড় সাইজের কারণে দাম কম-বেশি হয়ে থাকে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও ফরিদপুর, নাটোর, পাবনা ও টাঙ্গাইলসহ সারা দেশেই এসব চারার চাহিদা রয়েছে। টাঙ্গাইলে দেড়শ’ চারার একটি বাগান হয়েছে তার উৎপাদিত চারায়। তার বাগানে এখন ফলবান গাছ আছে ৪৫টি। প্রতিটি গাছে ৫০-৬০ কেজি খেজুর ফলে।
মোতালেব জানান, (জানুয়ারি) পৌষ-মাঘ মাসে গাছে খেজুরের কাঁধি বের হতে শুরু করে। গরুর গোবর ছাড়া খুব একটা সার প্রয়োগ বা কীটনাশক লাগে না। জুন-জুলাই মাসের দিকে (সাত-আট মাসে) খেজুর বড় হয়ে গাছেই পাকতে শুরু করে। সৌদি খেজুর গাছের বংশবৃদ্ধি হয় দুভাবে- বীজ থেকে ও অঙ্গজ বংশ বিস্তারের মাধ্যমে। তবে বীজ থেকে উৎপাদিত চারায় ফুল না আসা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায় না চারাটি পুরুষ না স্ত্রী। অপরদিকে, অঙ্গজভাবে যে চারা বের হয় নিশ্চিত করে বলা যায় সেটি স্ত্রী। গাছে খেজুর ধরার জন্য পরাগায়ণ অতি জরুরি বিষয়, যা মৌমাছি বা এ জাতীয় পতঙ্গের মাধ্যমেই হয়। তার বাগানের উৎপাদিত খেজুর চারশ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।এখন তার বাগানে নিয়মিত তিন জন ছাড়াও রোজ হিসেবে শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতি মাসে বাগান পরিচর্যা ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয় মোতালেবের। তবে চারা কলমের সুক্ষ কাজটি মোতালেব নিজেই করে থাকেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আজম খান জানান, তিনি বেশ কয়েকবার মোতালেবের খেজুর বাগান পরিদর্শন করেছেন। ওই বাগানের খেজুরগুলো বেশ মাংসল ও খেতে সুস্বাদু। সৌদিয়া খেজুর বাগানের উন্নয়নে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগীতা থাকবে বলেও জানান তিনি।
মোতালেব আশা প্রকাশ করেন, সরকারি উদ্যোগে সৌদি খেজুর চাষ প্রকল্প গ্রহণ করে দেশে উৎপাদিত খেজুর দিয়েই এ দেশের চাহিদা পুরণ করা সম্ভব। মোতালেবের ইচ্ছা এই খেজুর চাষই তার এবং তার পরবর্তী বংশধরদের পরিচয় হোক। সরকারি পৃষ্টপোষকতা ও বেসরকারি উদ্যোগ সৌখিন খেজুর চাষের এ উদ্যোগ বাণিজ্যিক উৎপাদনে ব্যাপক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসতে পারে বলে বিজ্ঞ মহলের প্রত্যাশা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button