বিভাগীয় খবরময়মনসিংহ

ভালুকায় তাহমিনা জেনারেল হাসপাতালে আবারও প্রসূতির মৃত্যু; থানায় মামলা

বিশেষ প্রতিনিধি: ভালুকা পৌরসদরের তাহমিনা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনিস্টিক সেন্টারে সিজার করাতে এসে ডাক্তারের ভুল অপারেশনের কারনে মঙ্গলবার রাতে(৪অক্টোবর) মুক্তিযোদ্ধার কন্যা আছমা আক্তার(২২) নামে অনার্স পড়–য়া এক প্রসূতি মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভালুকা মডেল থানায় নিহতের পিতা আবু তালেব মৃধা বাদি হয়ে ডাঃ মোশারফ হোসেন ও অজ্ঞাত আরও ২জনের নামে ভালুকা মডেল থানায় হত্যা মামলা (নং ৯ ০৫/১০/১৬ ইং) দায়ের করেছেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার সাতেঙ্গা গ্রামের আলী আকবর মানিকের স্ত্রী আছমা খাতুনের প্রসব ব্যথা দেখা দিলে তাকে তাহমিনা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার পরিবারের লোকজন নিয়ে আসেন। ক্লিনিকের মালিক ডাঃ মোশারফ হোসেন রোগীর স্বজনদের বলেন, জরুরী ভিত্তিতে তাঁর অপারেশন লাগবে। রোগীর অভিভাবকরা অপারেশনের অনুমতি দিলে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আছমার সিজার করা হয়। ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর মেডিকেল অফিসার ডা: আবু মোহাম্মদ কাইকুবাদ,আছমাকে অজ্ঞান করান ও ডাঃ মোশারফ হোসেন অপারেশন করেন। সিজারে আছমা কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করেন। অপারেশনের পর আছমার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় মোশারফ হোসেন পরপর দুই বার অপারেশন করে বলে রোগীর আতœীয় স্বজনরা অভিযোগ করেন। পরে ক্লিনিকের লোকজন আছমার আতœীয় স্বজনকে বলেন জরুরী ভিত্তিতে এম্বুলেন্স আনার জন্য। আছমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
ডাঃ আবু মোহাম্মদ কাইকুবাদ এর মোবাইল বন্ধ থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। ক্লিনিকের পরিচালক মোতাহার হোসেন রিপন ও ডাঃ মোশারফ হোসেনের মোবাইলে বারবার কল করলেও ফোন রিসিভ করেননি।
আছমা আক্তার উপজেলার ধীতপূর গ্রামের বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য আবু তালেব মৃধার মেয়ে। নবজাতক শিশুটি সুস্থ আছে। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে আলী আকবর মানিকের সাথে আছমার বিয়ে হয়। আছমা আক্তার গফরগাঁও সরকারী বিশ^বিদ্যালয় কলেজে অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী।
ভালুকা মডেল থানার ওসি (তদন্ত)বলেন,নিহতের পিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আছমার লাশ তার বাবার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৫সাল থেকে এ পর্যন্ত ডাঃ মোশারফের হাতে অন্তত ১০জন রোগী মারা গেছে। অদৃশ্য খুটির জোরে বারবারই ডাঃ মোশারফ পার পেয়ে যান।
প্রসঙ্গ,২০০৫সালের ৫ নভেম্বর উপজেলার বাটগাঁও গ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থীনি দিলরুবাকে এপেনডিসাইটিস এর অপারেশন করার সময় ওটিতেই তিনি মারাযায়। এ ঘটনায় দিলরুবার,পিতা আব্দুল বাছেন সরকার বাদী হয়ে তাহমিনা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিক ডাক্তার মোশারফ, তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তার মুক্তা ও তার ভাই মোতাহার হোসেন রিপনকে আসামী করে মামলা করেন মামলানং ১০২/০৮। মামলাটি অদ্যবধি আদালতের বিচারধীন রয়েছে।
২০১২ সালের ১৮ আগস্ট আপারেশন করতে গিয়ে ওই ডাক্তারের হাতে উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের বড় কাশর গ্রামের রতন মিয়ার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী শরীফা আক্তার ওরফে পারভীন(২০) এর মৃত্যু হয়। একই বছরের ১৮ জানুয়ারী বর্তা গ্রামের  বাবুল মিয়ার স্ত্রী অন্তঃস্বত্ত্বা সুমা আক্তার (২১) কে ডাঃ মোশরফ হোসেন সিজার করায় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
উপজেলার ভান্ডাব গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী রেজিয়া খাতুন (৪০) কে গত ২১জানুয়ারী  ২০১৩ইং রাতে তাহমিনা জেনারেল এন্ড ডায়গনিস্টিক সেন্টারে ডাঃ মোশারফ হোসেন গর্ভপাত ঘটায়। অসম্পুন্ন গর্ভপাতে রক্তক্ষরণের কারনে মারা যায়।
ভুল অপারেশন করায় ২০১৫সালে ২৯অক্টোবর সকালে উপজেলার জামিরদিয়া খন্দকারপাড়া এলাকার নেছার উদ্দিনের স্ত্রী তানজিনা আক্তার (২৪)নামে এক প্রসূতি মায়ের মোশারফের হাতে মারা যায়। এ ঘটনায়  ভালুকা মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ক্লিনিকের পরিচালক মোতাহার হোসেনকে আটক করে।
ডাঃ মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে এলাকবাসীর হাজারো অভিযোগ, অপকর্মের জন্য তিনি সরকারী চাকরি হারান। এ ছাড়াও এ ক্লিনিকে অপারেশন করতে এসে এপর্যন্ত বেশ কয়েকজন রোগি মারা গেছে। পরে নিহত রোগিদের অভিবাবকদেরকে ম্যানেজ করে পার পেয়ে যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button