বিশ্ব ডাক দিবস
– সফিউল্লাহ আনসারী-
একসময় আমাদের দেশে ডাক বিভাগের মাধ্যমে যোগাযোগের বাহন ছিল চিঠি-পত্র আদান-প্রদান।জরুরী প্রয়োজনে,অফিস-অাদালত,প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম,সামাজিক ও ব্যাক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ডাক বিভাগের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।সময়ের পরবর্তনের সাথে-সাথে যোগাযোগের অতিপ্রাচীন এই মাধ্যমটি ক্রমেই হারাচ্ছে তার ঐতিহ্য।ডাক বাক্স,পোষ্ট মাস্টার আর ডাক পিয়নের সেই সোনালী অতীত আর আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় নেই,যদিও এই ডাক বিভাগ আজো তার ঐতিহ্য ও প্রয়োজনীয়তাকে ধারন করে কার্যক্রম পরিচালিত করে যাচ্ছে।
আজ বিশ্ব ডাক দিবস।ক্যালেন্ডারের হিসেবে প্রতি বছর ডাক দিবস পালিত হয় ৯ অক্টোবর।“বিশ্বের প্রতিটি দেশের মধ্যে ডাক আদান-প্রদানকে অধিকতর সহজ ও সমৃদ্ধশালী,করার মধ্য দিয়ে বিশ্বজনীন পারস্পরিক যোগাযোগকে সুসংহত করাই উরোপের ২২টি দেশের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৯অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে গঠিত হয় ‘জেনারেল পোস্টাল ইউনিয়ন’।পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডাক ইউনিয়নের ১৬তম অধিবেশনে প্রতি বছরের ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবস নির্ধারণ করা হয়।১৯৮৪ সালে জার্মানীর হামবুর্গে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডাক ইউনিয়নের ১৯তম অধিবেশনে বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবসের নাম বদলে বিশ্ব ডাক দিবস করা হয় ।বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ওই সংস্থার সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে অক্টোবরের ৯ তারিখ বিশ্ব ডাক দিবস পালন করে আসছে।”
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যোগাযোগের মাধ্যমের আমুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এনালগ প্রযুক্তির ব্যাবহার ক্রমেই কমছে,বাড়ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাবহার। কালের বিবর্তনে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে আধুনিক পদ্ধতির উদ্ভব হওয়ায় এখন দরকারী যোগাযোগ বা আপনজনের কোন খবরের জন্য ডাক পিয়নের পথ চেয়ে থাকতে বসে থাকতে হয় না ।প্রিয়জন পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাক না কেন মোবাইল,ইন্টারনেট,জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুক,টুইটারসহ একাধীক উন্নত প্রযুক্তির বদৌলতে যে কোন ধরনের যোগাযোগ খুবই সহজলভ্য এবং মানুষের হাতের নাগালে।এক সময় ফ্যাক্সের মাধ্যমে চিঠি পত্রের আদান-প্রদান করা হলেও বর্তমানে ইমেইলের বহুবিধ ব্যাবহারে ফ্যাক্সের ব্যাবহার দিনদিন কমছে।স্বল্প সময়ের মধ্যে আর্থিক লেন-দেন আর দু:সাধ্য নয়,খুবই সহজে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এখন তা হাতের মুঠোয় বলা যায়।ডাক ব্যাবস্থার সময় তা মানি অর্ডার নামে টাকা লেনদেন হতো।তবে ডাক বিভাগের আদলে বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় মাধ্যম কোরিয়ার সার্ভিস।ডাক যোগাযোগের অনেক কাজ এখন এই মাধ্যমে দেশে-বিদেশে চিঠিপত্র,মালামাল পরিবহন সহজলভ্য।
অতি পরিচিত ব্যাক্তি ‘রানার’।আজ আর নেই তার জনপ্রিয়তা।ই-মেইলসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মানুষের সামনে দ্রুত যোগাযোগের নতুন দিগন্ত খুলে দিলেও অফিসিয়াল বিভিন্ন ডকুমেন্টস আদান প্রদান,সরকারী-বেসরকারী চাকুরি সংক্রান্ত কাজে আজো ডাক বিভাগের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব বহন করে।ডাকবিভাগ তার জৌলুস হারালেও কালের স্বাক্ষী আর অতীত ঐতিহ্য বলি,সে তার ঐতিহ্যকে ধারন করে আজো গণমানুষের দোড়গোড়ায় তার সেবা পৌছে দিচ্ছে।
“ডাক বিভাগের আধুনিকায়ন ও পাবলিক সেবার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ সরকার,সরকারি ডাকসেবা সময়োপযোগী করার লক্ষ্য নিয়ে ২০০০ সালে ই-পোস্ট সার্ভিস চালু করেছে যা সম্ভাবনাময় সার্ভিসটি দীর্ঘ দিন পরও খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছে- প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবল সঙ্কট আর প্রচারনার কার্প্যনের কারণে।”বর্তমানে পোষ্ট অফিসকে আধুনিকায়ন করতে-লেপটপ,ফটোকপি,স্ক্যানার,ক্যামেরা,মডেমসহ ইন্টারনেট সেবা প্রদানের ব্যাবস্থা করেছে।যার সুফল তৃণমুলে জনগন ভোগ করছে।
সুত্রমতে-“সারাদেশে ডাকঘর ৯ হাজার ৮৮৯ টি, এর মধ্যে জেনারেল পোস্ট অফিস চারটি। জেলা শহরগুলো মিলিয়ে ৬৬টি। এরপর উপজেলা, গ্রামে রয়েছে ৮২০০টি এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল ডাকঘর।অনেক জেলা শহরে রয়েছে নাইট পোষ্ট অফিস।”
ডাক বিভাগের গুরুত্বকে অর্থবহ করতে আরো আধুনিকায়ন দরকার।তার সাথে প্রয়োজন যোগ্য জনবল।ডাকবাক্সে চিঠি না ফেললেও এই ঐতিহ্যবহনকারী বাক্সগুলোকে জরাজীর্ণতা থেকে মুক্তি দিয়ে সংস্কার প্রয়োজন।গ্রাঞ্চলের ডাকঘরগুলোর সংস্কারও জরুরী।অনেক এলাকায় পুরনো এই বিভাগের নিয়ন্ত্রিত ডাকঘরের অস্তিত্ব বিলিনের পথে,কারন ডাকঘরগুলোর নেই নিজস্ব ভবন।সকারের প্রতি সংশ্লিষ্ঠদের দ্বীর্ঘদিনের দাবী ডাকঘরের বেদখলীয় ভুমি উদ্ধার করে নিজস্ব ভবন নির্মান করার।ইউনিয়নের পোষ্টমাস্টারদের বেতনের বিষয়টিও ভেবে দেখার সময় এসছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।দেশের ডাকঘরগুলো সচল হোক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সেই শুভ প্রত্যাশায় বিশ্ব ডাক দিবসের সফলতা কামনা করছি।
#
সফিউল্লাহ আনসারী