অর্থনীতি

গ্যাস বিল বকেয়া সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

ভালুকা নিউজ ডট কম; ঢাকা: আইনি জটিলতার কারণে পেট্রোবাংলা বকেয়া আদায়ে চিঠি পাঠানো ছাড়া অন্য কিছুই করতে পারে না। এর সুযোগে সরকারি-বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্যাস বিক্রি বাবদ পেট্রোবাংলার বকেয়া পড়ে আছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। এর সিংহভাগই পড়ে আছে বিদ্যুৎকেন্দ্র, ক্যাপটিভ পাওয়ার ও বড় শিল্পকারখানার কাছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি মালিকানাধীন ছয়টি বিতরণ কোম্পানিসহ আটটি কোম্পানির গ্যাস বিক্রি বাবদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাতে বকেয়ার পরিমাণ ১ হাজার ৬১৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর বেসরকারি খাতে বকেয়া পড়েছে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

অর্থাৎ গ্যাস বিল বাবদ বকেয়ার ৬৩ শতাংশই রয়েছে বেসরকারি খাতের কাছে। পেট্রোবাংলার সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্যাস ব্যবহার করে অর্থ পরিশোধ না করার শীর্ষে রয়েছে বিদ্যুৎখাত। এ খাতে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট বকেয়া ৭৭২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ৪৬৪ কোটি ৬৯ লাখ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩০৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বকেয়ার পরিমাণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ক্যাপটিভ পাওয়ার খাত। এ খাতে বকেয়া অর্থের পরিমাণ ৭৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্যাস বিক্রি বাবদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া পড়েছে ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৭১৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। গ্যাস সহজাত পদার্থ (কনডেনসেট) বিক্রি বাবদ সরকারি খাতে বকেয়া ৭৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সিএনজি খাতে মোট বকেয়ার পরিমাণ ৬৯০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে সরকারি সিএনজি স্টেশনের কাছে পাওনার পরিমাণ ৪৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর বেসরকারি বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনের কাছে গ্যাস বিক্রি বাবদ পাওনা দাঁড়িয়েছে ৬৩৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। গ্যাস বিক্রি বাবদ শিল্পকারখানার কাছে বকেয়া পড়েছে ৬৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন গ্যাস কোম্পানিগুলোর কাছে পাওনা ৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। বেসরকারি শিল্প-কারখানার কাছে পাওনার পরিমাণ ৫৮১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য বাবদ বকেয়ার পরিমাণ ৫৫৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকাই বেসরকারি খাতের। আর সরকারি খাতে বকেয়ার পরিমাণ ১৪৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সার কারখানায় গ্যাস বিক্রি বাবদ বিতরণ কোম্পানির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৬৪ কোটি ৮৯ লাখ, বাণিজ্যিক খাতে ৯৫ কোটি ৩ লাখ, ইটখোলায় ৪ কোটি ৭৪ লাখ, চা বাগানে ৩ কোটি ৫৬ লাখ এবং কয়লা ও অন্যান্য খাতে ৪১ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

এদিকে গ্যাস বিক্রি বাবদ সবচেয়ে বেশি অর্থ বকেয়া পড়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের। বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের কাছে কোম্পানিটির পাওনার পরিমাণ ২ হাজার ৪২৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা গ্যাস খাতের বিভিন্ন কোম্পানির মোট পাওনার অর্ধেকেরও বেশি। অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাখরাবাদের পাওনার পরিমাণ ৪২০ কোটি ১৯ লাখ, কর্ণফুলীর ৩২৬ কোটি ৬২ লাখ, জালালাবাদের ২৮২ কোটি ৭৩ লাখ, পশ্চিমাঞ্চলের ৮৫ কোটি ৯৩ লাখ ও সিলেট গ্যাস কোম্পানির ৩৮৯ কোটি ৮১ কোটি টাকা। এছাড়া গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পাশাপাশি গ্যাস উৎপাদন কোম্পানি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) বড় অংকের অর্থ পাওনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে তিতাসের পরিচালক (অর্থ) শঙ্কর কুমার দাস বলেন, তিতাস অনেক পুরনো কোম্পানি। আমাদের গ্রাহকসংখ্যাও বেশি। বকেয়ার পরিমাণও তাই বেশি। এছাড়া আমাদের চলমান বকেয়া (রানিং) ১ হাজার কোটি টাকা থাকেই। দীর্ঘদিন ধরে যেসব অর্থ বকেয়া থেকে যাচ্ছে, সেগুলো আদায়ে আমরা অর্থ মামলাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ফলে বকেয়ার পরিমাণ কমিয়ে আসছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মো. মোস্তফা কামাল জানান, বকেয়া আদায়ের বিষয়টি পেট্রোবাংলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এটি বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাজ। তারাই বকেয়া আদায় করবে। তবে কোনে ক্ষেত্রে অসুবিধা হলে পেট্রোবাংলা সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button