সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ব্যাপক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ঢাকা: আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে উপলক্ষে রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করছে।
অপরদিকে, শুক্রবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৈরি করা সম্মেলন মঞ্চ এলাকাসহ পুরো উদ্যানের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে পুলিশ। সন্ধ্যা থেকে সেখানে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরেজমিনে দেখা যায়, সম্মেলনের মঞ্চ এলাকাতে এসএসএফ, র্যাব, পুলিশ ও নেভি সদস্যরা তাদের নিজস্ব ‘ডগ স্কয়াড’ ও বিস্ফোরক দ্রব্য অনুসন্ধ্যানের অত্যাধুনিক মেশিন নিয়ে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তল্লাশি করেছে। বিকালের পর অনুমোদিত কার্ড ছাড়া আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের কোনও নেতাকর্মীকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
সম্মেলনস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্মেলন উপলক্ষে কয়েক সপ্তাহ আগে রাজধানীতে নিয়মিত অভিযান হয়েছে। আমরা কোনও কিছু আশঙ্কা করছি না। সম্মেলনস্থলসহ আশেপাশের এলাকায় ১৪০ টিরও বেশি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। তিনটি কন্ট্রোল রুম থেকে এসব সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করা হবে। সম্মেলনকে ঘিরে রাজধানীতে দশহাজার পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।’
এদিকে মঞ্চে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে আসন গ্রহণ করবে সেখানে বুলেটপ্রুফ কাচ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেরিক্যাড স্থাপন করেছে। তিনি যেখানে বক্তব্য দিবেন সেখানে কাচ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে।
সম্মেলনে আগতদের জন্য ২২ ও ২৩ অক্টোবরের ট্রাফিক ব্যবস্থা ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ট্রাফিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাধ্যমতো কাজ করবে পুলিশ। কিছু ডাইভারশনের কারণে নাগরিকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে সেজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা ওই দুইদিনের ট্রাফিক ব্যবস্থার বিষয়ে মাইক দিয়ে নাগরিকদের অবহিত করব।’
সকাল ৮টা পর্যন্ত বিজয়সরণী হয়ে ভিআইপি রোডের সব গাড়ি রূপসী বাংলা-শাহবাগ-টিএসসি হয়ে ডানে মোড় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করবে। সকাল ৮টা থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে না পৌঁছানো পর্যন্ত ভিআইপি রোডে যান চলাচল একেবারেই বন্ধ থাকবে। এসময় সম্মেলনে আগতদের গাড়িও এ সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না।
উত্তরা হয়ে আগতদের গাড়ি মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে মহাখালী টার্মিনাল-মগবাজার-কাকরাইল চার্চ-রাজমনি ক্রসিং-নাইটিংগেল-ইউবিএল-জিরোপয়েন্ট-আব্দুল গণি রোড-হাইকোর্ট ক্রসিং-দোয়েল চত্বর দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ করবে।
মাওয়া থেকে আগত গাড়িগুলো সদরঘাট-বাবুবাজার-গুলিস্তান-জিরোপয়েন্ট-আব্দুল গনি রোড-পুরাতন হাইকোর্ট ক্রসিং-দোয়েল চত্বর-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে গন্তব্যস্থলে যাবে।
চট্টগ্রাম বিভাগ/সিলেট বিভাগ/যাত্রাবাড়ী ও কাঁচপুর থেকে আগত গাড়ি মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার-চাঁনখারপুল-দোয়েল চত্বর-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে গন্তব্য স্থলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করার পর ভিআইপি রোড (হেয়ার রোড-রূপসী বাংলা-সোনারগাঁও-বিজয়সরণী) স্বাভাবিক থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী ভেন্যু থেকে বের হওয়ার সম্ভাব্য দুই ঘণ্টা আগে থেকে মৎস্যভবন, কাকরাইল চার্চ থেকে বিজয়সরণী পর্যন্ত রাস্তায় ডাইভারশন চলবে। উল্লিখিত সময়ে কদম ফোয়ারা দক্ষিণের গাড়ি ইউবিএল-নাইটিংগেল-কাকরাইল চার্চ-মগবাজার দিয়ে মহাখালী যেতে পারবে। গাবতলী, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি থেকে আগত গাড়িগুলো মানিকমিয়া এভিনিউ ও মিরপুর রোড ব্যবহার করে রাসেল স্কয়ার-সায়েন্সল্যাব ক্রসিং-নিউমার্কেট ক্রসিং-নীলক্ষেত ক্রসিং-আজিমপুর ক্রসিং-পলাশী ক্রসিং দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ করবে।
সম্মেলন উপলক্ষে কিছু সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সকাল ৭টা থেকে কিছু পয়েন্টে ডাইভারশনের মাধ্যমে যান চলাচল করবে। এসময় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ-ফার্মগেট অভিমুখে কোনও গাড়ি আসবে না। রাসেল স্কয়ার-পান্থপথ অভিমুখে কোনও গাড়ি যাবে না।
সব গাড়ি নিউমার্কেট-সায়েন্স ল্যাবরেটরি-নিউমার্কেট-আজিমপুর-পলাশী-জগন্নাথ হল ক্রসিং হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পার্কিংয়ে প্রবেশ করবে অথবা নিউমার্কেট-নীলক্ষেত-ফুলার রোড দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করবে।
কাঁটাবন থেকে কোন গাড়ি শাহবাগের দিকে আসবে না। কাঁটাবন থেকে ডানে মোড় নিয়ে নীলক্ষেত ক্রসিং হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করবে। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসির দিকে কোনও ধরনের গাড়ি প্রবেশ করবে না।
শাহাবাগ থেকে মৎস্য ভবন এবং মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ অভিমুখে কোনও গাড়ি প্রবেশ করবে না। হাইকোর্ট ক্রসিং থেকে দোয়েল চত্বরে গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে কিন্তু দোয়েল চত্বর থেকে হাইকোর্ট ক্রসিংয়ে কোনও গাড়ি যাবে না। পল্টন মোড় থেকে কোনও গাড়ি কদম ফোয়ারার দিকে আসবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনের রাস্তা উভয় দিকে বন্ধ থাকবে অর্থাৎ কদমফোয়ারা থেকে মৎস্যভবন উভয় দিকে কোনও গাড়ি আসা-যাওয়া করবে না। কাকরাইল চার্চ থেকে কাকরাইল মসজিদ অভিমুখে কোনও গাড়ি আসবে না।
কার্পেট গলি, পরীবাগ গ্যাপ, শিল্পকলা একাডেমির গ্যাপ, মিন্টুরোড ক্রসিং, অফিসার্স ক্লাব মোড় বন্ধ থাকবে এবং এ সব স্থান হতে ভিআইপি রোডে কোনও গাড়ি প্রবেশ করবে না। সচিবালয়ের সামনে আব্দুল গণি রোডে কোনও গাড়ি পার্কিং হবে না।
প্রসঙ্গত, আগামী ২২ অক্টোবর এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই ক্ষমতাসীন দলটির জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৩ অক্টোবরও কাউন্সিলের শেষ অধিবেশনও হবে এখানেই।