স্বাস্থ্য চিকিৎসা

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবারে কারো বুকে ব্যথা অনুভূত হলে পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে কী ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন, কোথায় নিয়ে যাবেন কিংবা কী ওষুধ খাওয়াবেন তা নিয়ে ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যান। হৃদরোগে আক্রান্ত হলেও অনেকে গ্যাষ্ট্রিকের ব্যথা ভেবে গ্যাষ্ট্রিকের ওষুধ খান।  দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বিলম্বও করে ফেলেন অনেকে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের  সহযোগী অধ্যাপক  ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটু শুক্রবার দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে কী করতে হবে সে সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘হার্ট অ্যাটাক হলে নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে ৩০০ এমজি ট্যাবলেট ইকোস্প্রিন ও ৩০০ এমজি ট্যাবলেট ক্লিপ্পিড অথবা ২০ এমজি ট্যাবলেট প্যানসেক ২০ খেয়ে তাড়াতাড়ি উপজেলা, জেলা কিংবা হৃদরোগের বিশেষায়িত হাসপাতালে চলে যান।
হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অবশ্যই জীবনরক্ষাকারী ষ্ট্রেপটোকাইনাসি প্রয়োগ করতে ভুলবেন না প্লিজ, এতে করে অনেক রোগী মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাবে। তারপর যেখানে সুযোগ আছে সেখানে অনতিবিলম্বে এনজিওগ্রাম করে ষ্ট্যান্ট বসিয়ে নিবেন। এটাই হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসা বলে মন্তব্য করেন তিনি ।

 

****হার্ট এ্যাটাকের লক্ষণ:…

১। বুকে ব্যথা
হার্ট অ্যাটাকের প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হয় বুকে ব্যথা। সাধারণত বুকের মাঝখান থেকে প্রচন্ড চাপ ব্যথা অনুভূত হয়। আস্তে আস্তে সেই ব্যথা চোয়ালে অথবা বাম কাঁধ ও বাহুতে ছড়িয়ে পড়ে থাকে। এই রকম ব্যথা দেখা দিলে অব্যশই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২। শ্বাস কষ্ট ও দম ফুরিয়ে যাওয়া
যদি আপনার অ্যাজমা বা অন্য কোন সমস্যা না থাকে এবং হঠাৎ করে শ্বাস কষ্ট সমস্যা দেখা দেয় মূলত হৃদরোগ থেকে ফুসফুসে পানি জমা সহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে ঠান্ডা ছাড়াও শ্বাস কষ্ট এর সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়া, মুখ দিয়ে নিঃ শ্বাস নেওয়াও ভবিষ্যত হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।
৩। ঘাম হওয়া
অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিকস রোগীর ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা ছাড়া অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড়, হঠাৎ শরীর খারাপ লাগা শুরু হলে অব্যশই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
৪। কাশি
আপনার যদি দীর্ঘদিন কাশির সমস্যা থাকে, এবং তার সাথে সাদা বা গোলাপি কফ বের হয়। তবে বুঝতে হবে আপনার হার্ট ঠিকমত কাজ করছে না। ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তবে হ্যাঁ কাশি সবসময় হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ নাও হতে পারে। কফের সাথে নিয়মিত রক্ত বের হলে এটি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
যদি কাজের মধ্যেই আপনি প্রায়ই হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যান,তাহলে বুঝবেন হার্টের সমস্যা রয়েছে। এটি যদি কোন দুশ্চিন্তার কারণে না হয়ে থাকে তবে দ্রুত কোন রকম ঝুঁকি না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬।খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়া
আপনি কি অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন? কিছুক্ষণ কাজ করলে বুক ধড়ফড় করে? তবে আপনি এখনই কোন হার্টের চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। বিশেষ করে মহিলাদের হার্টের সমস্যার প্রধান লক্ষণ এটি হয়ে থাকে।
৭। মাথা ব্যথা
যখনই প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হয়, আমরা ওষুধ খেয়ে থাকি। কিন্তু জানেন কি, হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ হল প্রতিদিনকার প্রচন্ড মাথা ব্যথা।
৮। বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া
আপনার বিভিন্ন অঙ্গে বিশেষ করে হাত-পায়ের গিঁট ব্যথা ও ফুলে যাওয়া সরাসরি হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের সমস্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। তবে দীর্ঘদিন হলে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। শরীরের অভ্যন্তরে পানি চলে আসার করণে শরীরের পানি চলে আসে , যার কারণে হাত-পায়ের গিঁট ফুলে যায়। বিশেষত অনেকক্ষণ কোথাও বসে থাকলে পায়ে পানি চলে আসে। নিয়মিত এটি ঘটলে অব্যশই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৯। অনিয়মিত পালস রেট
আপনি যদি অনেক বেশি নার্ভাস থাকেন বা কোথাও থেকে দৌড়ে আসেন আপনার পালস রেট উঠা নামা করতে পারে। তবে এটি যখন কোন কারণ ছাড়াই উঠা নামা করে সেটি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিয়মিতভাবে যদি এই সমস্যা দেখা দেয় তবে অতিসত্ত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডায়াবেটিকস বা উচ্চ রক্তচাপ রোগীরা উপরোক্ত কোন কারণকে অবহেলা করবেন না। উপরোক্ত যেকোন একটি কারণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।(সংকলিত)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button