ঢাকাবিভাগীয় খবর

যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীর বিবস্ত্র ছবি ফেইসবুকে

শরীয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার একটি গ্রামে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী তাঁর স্ত্রীর বিবস্ত্র ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই গৃহবধূ লজ্জা-অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। গত বৃহস্পতিবার ডামুড্যা থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও পুলিশ এখনো মামলা নথিভুক্ত করেনি।

ডামুড্যা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আরিফ বলেন, স্বামী তাঁর স্ত্রীর বিবস্ত্র ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন—এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

থানার পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওই গৃহবধূ ডামুড্যা উপজেলার একটি গ্রামের দরিদ্র নির্মাণশ্রমিকের ১৫ বছর বয়সী কিশোরী মেয়ে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিবেশীদের মাধ্যমে একই উপজেলার চরধানকাঠি গ্রামের রহমান মালের ছেলে বাবুল মালের (৩২) সঙ্গে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বিয়ে হয়। বাবুল মাল ওমান প্রবাসী। বিয়ের সময় বরপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, মেয়েটিকে পড়ালেখা করার সুযোগ দেয়া হবে। বিয়ের পর ওই কিশোরীকে আর বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। বন্ধ হয়ে যায় মেয়েটির এসএসসি পরীক্ষা দেয়া। বিয়ের কিছুদিন পর বাবুল ওমান চলে যান। এরপর তাঁর পরিবার কিশোরীর ওপর নানা ধরনের নির্যাতন চালাতে থাকে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ওই কিশোরী তার বাবার বাড়ি ফিরে আসে। দুই মাস আগে বাবুল আবার ওমান থেকে ফিরে আসেন। ওই কিশোরীকে তার বাবার বাড়ি থেকে ফিরিয়ে এনে বাসা ভাড়া করে বসবাস শুরু করেন। সে ভাড়া করা বাসায় ওঠার পর থেকেই ওই কিশোরীকে তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিশোরী টাকা এনে দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ওপর নির্যাতন চলতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সালিসও হয়। তখন সালিসকারীদের কাছে বাবুল প্রতিশ্রুতি দেন, ওই কিশোরীকে আর নির্যাতন করবেন না এবং ওমান চলে যাওয়ার পর প্রতি মাসে তাকে পড়ালেখার খরচ বাবদ তিন হাজার টাকা দেবেন।

২৫ দিন ওই কিশোরীর সঙ্গে থাকার পর বাবুল ভাড়া করা বাসার মালামাল সরিয়ে বাসায় তালা লাগিয়ে পালিয়ে ওমান চলে যান। ওমান গিয়ে মুঠোফোনে ওই কিশোরী ও তার বাবার কাছে পুনরায় এক লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না পেলে তাদের ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দেন। এক সপ্তাহ আগে বাবুল তাঁর স্ত্রীর বিবস্ত্র ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেন।

বিবস্ত্র ছবি গ্রামের মানুষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে কিশোরী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। লজ্জা-অপমানে সে আত্মহত্যা করার চেষ্টা চালায়। বৃহস্পতিবার ওই কিশোরী ডামুড্যা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ এখনো অভিযোগটি নথিভুক্ত করেনি।

ওই কিশোরী বলে, ‘আমার বেঁচে থাকা এখন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। স্বামী-স্ত্রীর একান্ত মুহূর্তের ছবি প্রকাশ্যে মানুষের হাতে এলে কোনো মেয়ে কীভাবে মুখ দেখায়। আমি এখন কীভাবে সমাজে বাঁচব। টাকার জন্য কোনো মানুষ এভাবে ক্ষতি করতে পারে, ভাবতেও পারছি না। এই পাষণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আমার মতো আরও অনেক মেয়ে প্রতারিত হবে।’

বাবুল মালের বাড়ি চরধানকাঠি গ্রামে গিয়ে কথা হয় তাঁর মা ফজিলা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, বাবুলের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ নেই। তাঁরা শুনেছেন, তাঁদের পুত্রবধূর নোংরা ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কে এ কাজ করেছে, তা তাঁরা জানেন না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button