উন্নয়ন সম্ভাবনাগ্রামীণ কৃষিপ্রাণের বাংলাদেশ

ভালুকায় লেবু চাষে সফল কৃষক সাইফুল

ভালুকা নিউজ ডট কম; কৃষি প্রতিবেদক: ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামের ক্ষুদে ব্যাবসায়ী সাইফুল ইসলাম তার ব্যাবসার পাশাপাশি লেবু চাষ করে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন। তার এ সফলতায় ওই এলাকার আরো অনেকেই লেবু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। লেবুর চারা ক্রয় করতে অনেক সৌখিন কৃষক তার লেবু বাগানে যোগাযোগ করছেন।

সাইফুল ইসলাম উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের বাসিন্দা। কৃষির প্রতি আগ্রহী এই কৃষক প্রথমে বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে বিভিন্ন জাতের লেবু গাছ লাগিয়ে উৎপাদিত লেবু বিক্রি করে আর্থিক লাভবানও হন। পরে আরো অন্যের পতিত জমি ভাড়া নিয়ে লেবুর বাগান করার পরিকল্পনা করেন। এবং পাড়াগাঁও গ্রামের দুই কৃষকের কাছ থেকে ১১ বিঘা জমি লীজ নিয়ে লেবু গাছ লাগান। লেবুর ফলন আসতে দু‘বছর লাগলেও তার একটু বেশী পরিচর্যায় ১৩ মাসেই ফলন আসে এবং গত দেড় মাস যাবত লেবু বিক্রি শুরু করেন। তার উৎপাদিত লেবু সিলেটের সুনামগঞ্জ,নরসিংদীসহ দেশের বহু জায়গায় রপ্তানি হচ্ছে। লেবুর নিখুঁত চাষ হলে বিদেশেও রপ্তানি হবে। প্রতি পিছ লেবু ১০/১৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বছর লেবু বিক্রি করে লাখ টাকা মুনাফা করার স্বপ্ন দেখছেন এই কৃষক। লেবু চাষের সফলতায় সাইফুল পার্শ্ববর্তি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের কাহালগাঁওয়ে স্থানীয় আরেক কৃষককে সাথে নিয়ে আরো ১৫ বিঘা জমি লীজ নিয়েছেন। তার সফলতা দেখে ওখানেও অনেকেই লেবু বাগান করার কথা ভাবছেন।

সাইফুল ইসলাম ভালুকা নিউজ ডট কমকে জানান, লেবু চাষে উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে আত্মনির্ভরশীলভাবে এগিয়ে যেতে পারবেন। এ এলাকায় প্রায় বাড়ীর আঙিনায় লেবু চাষ হয়। তবে পতিত জমিকে লেবু উপাদনের বাণিজ্যিক পথটি দেখায় সাইফুল।

ভালুকা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আজম খান ভালুকা নিউজ ডট কমকে জানান, তিনি সাইফুলের লেবু বাগানের কথা শুনেছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিবেন। তিনি বলেন ভালুকায় লেবু এবং লেবু জাতীয় একাধীক বাগান রয়েছে। আরো বাগান করার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি চলছে। লেবু কিংবা লেবুর জুস বিদেশে রফতানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। আর এটা ছোট করে হলেও ভালুকায় শুরু হয়েছে।

সাইফুল জানান-নরসিংদী থেকে ১৮ শত চারা এনে তিনি এই বাগান করেছেন। এ জাতের লেবু সারা বছর ফলন হয়। তিনি আরো বলেন,‘কলম্বো’ জাতের এই লেবু ইউরোপের ২৭টি দেশে রপ্তাণি হয়। এ অপার সম্ভাবনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমাদের অব্যবহৃত পতিত জমিগুলো। লেবুচাষে যতœ আÍি কম লাগে। তাই লেবু উৎপাদনে খরচ, অনেক কৃষি উৎপাদনের তুলনায় কম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাইফুলের বাগানের গাছগুলো লেবুতে ভরে আছে। কোন কোন গাছ থোকা থোকা লেবুর ভারে নুয়ে পড়ছে। চলছে লেবুর ভরা মৌসুম। প্রতি একদিন পর পর ভোর থেকে চাষির বাগান থেকে লেবু ছিঁড়ে টুকরি/বস্তা ভর্তি করে ও কাগজ/পুরাতন পেপার মুড়িয়ে ব্যান গাড়ীতে করে বাজারে/আড়তে পাঠানোর কাজ চলছে। এই বাগান থেকে এখন ৬/৭ শ পিছ লেবু সংগ্রহ করা যায়।

বাগান মালিক সাইফুল ইসলাম ভালুকা নিউজ ডট কমকে জানান,এ বাগান করতে গত দেড় বছরে সর্বমোট ১০ লাখ টাকা(প্রায়) খাটিয়েছেন তিনি। ব্যাংক থেকে লোনের কথাও ভাবছেন এই কৃষক।

ব্যাক্তিগত লোন হিসেবে ইতিমধ্যেই পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ টাক ঋণ নিয়েছেন। সুদ বেশী থাকায় তিনি স্বল্প সুধে সরকারী অনুদানের দাবী জানিয়েছেন। বাগানের শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন-তাদের লেবু বাগানে সার,কীটনাশক,খৈল,ভিটামিন,পানি আর নিড়ানি ছাড়া খুব বেশী কিছু লাগেনা। প্রতি গাছে বর্তমানে ৫০/৬০ টা করে লেবু ধরেছে,এবং সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আড়তদারেরা তাদের বাগানের লেবু ক্রয় করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে রপ্তানী করে। ভালুকার লাল উচুঁ জমিতে উৎপাদিত লেবু স্বাদে,ঘ্রাণে ও গুণে-মানে সেরা। ক্রমেই ক্রেতাদের মন জয় করে চলেছে এই লেবু। কেবল দেশেই নয় বিদেশেও বেড়েছে দেশীয় লেবুর চাহিদা। সম্ভাবনাময় এ লেবুর ব্যাপক চাষ করে লেবুকে অর্থকরী ফসলের তালিকায় আনা সময়ের ব্যাপার,দরকার সঠিক উদ্যোগ সরকারীভাবে ব্যাপক লেবু বাগান করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button