প্রাণের বাংলাদেশসারা দেশ

দর্শনার্থী ঢিল ছুড়লেও শীতনিদ্রায় মগ্ন কুমির

এফ এম আমান উল্লাহ, গাজীপুর :-“জলে কুমির-ডাঙায় বাঘ” শুনে আসছি গল্প উপন্যাসে। দেখেছি সুন্দর বনে, কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ও চিড়িয়া খানায়। এই শীতে দেখছি ডাঙ্গায় পড়ে আছে কুমিরের নিথর দেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। দর্শনার্থী কুমিরের নড়াচড়া উপভোগ করতে চায়। তাই খাবারের প্যাকেট,পানির খালি বোতল বা হাতের কাছে যা পাচ্ছে ছুড়ে মারছে তার গায়ে। কুমিরের তবুও যেন হুস নেই বরং মগ্ন শীত নিদ্রায় তাপ পোহাতে।
মুজিব সাফারি পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, শুধু কুমির নয় যত উভয়চর প্রানী আছে যারা বুকে ভর করে চলে তারা বছরে কিছু সময় শীত নিদ্রায় থাকে। এদের মাতৃকালীন সময়েও তাই হয়। যেমন সাপ, কচ্ছপ, কুমির । এ সময় খাওয়া কমিয়ে দিয়ে ডাঙ্গায় উঠে শীত নিদ্রায় থাকে। পূর্বে তার খাবার গ্রহন করা শক্তি থেকে পরিচালিত হয়। সাফারি পার্কে সল্ট ক্রোকোডাইল বা লুনা পানির কুমির রয়েছে ১৬ টি। আর মার্ক ক্রোকোডাইল বা মিঠা পানির কুমির ৬টি। মার্ক ক্রোকোডাইল মহা বিপন্ন বা বিলুপ্তির পথে যা ইন্ডিয়াতে কিছু পাওয়া যায়। গত বছর বাংলাদেশের একটি নদীতে আটক কৃত একটি মার্ক ক্রোকোডাইলটি সাফারিতে রয়েছে। আমাদের এখানে প্রজনন হবে বলে আশাবাদী। যদিও জায়গার তুলনায় কুমিরের সংখ্যা বেশি। বন্য কুমিরের প্রধান খাবার হচ্ছে মাছ ও কার্কাস বা মৃত দেহ। আমরা পূর্বে মুরগী দিয়েছি কিন্তুু এখন গরুর মাংস খাওয়াচ্ছি।
আরো জানা যায়, বর্তমানে সারা পৃথিবীতে কুমিরের ৩ টি গোত্রে ২৫ টি প্রজাতি রয়েছে। এক সময় আমাদের দেশে ৩ প্রজাতির কুমির ছিল। সুন্দরবন এলাকায় প্রায় ১৫ ফুট লম্বা দেহের লুনা পানির কুমির পাওয়া যায়। যা প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাছাড়া পদ্মা এবং যমুনা নদীর তিস্তা-নগরবাড়ি ও সারধা-গোদাগারি অঞ্চলে মার্ক ক্রোকোডাইল বা ইন্ডিয়ান মাদার, ঘড়িয়াল,বাইশাল,ঘোট কুমির পাওয়া যায়। ইন্ডিয়ান মাদার ও ঘড়িয়াল কুমিরকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন প্রজাতির হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক প্র্রজননে কার্তিক থেকে পৌষ মাসে কুমির ডাঙ্গায় এসে ৩০-৩৫ টি ডিম ছাড়ে। স্ত্রী কুমির বালিতে গভীর গর্ত করে বাসা বেঁধে ডিম ছেড়ে বালি দিয়ে ডেকে রাখে। কুমির দুটি সারি করে ডিম দেয় এবং বালি দ্বারা প্রতিটি সারি আলাদা রাখে । স্ত্রী কুমির নিকটবর্তী জায়গা থেকে বাসা পাহারা দেয়। ডিম ছাড়ার ১১-১৪ সপ্তাহ পর বাচ্চা ফুটার কিচ-কিচ শব্দ শুনে স্ত্রী কুমির বাসা ভেঙে বাচ্চাদের বের করে পানিতে নিয়ে যায়। মাংসাশী শক্তিশালী কুমির লেজ দিয়ে সাঁতার কাটে। এদের সারা দেহ পানির নীচে এবং চোখ ওপরে রেখে শিকারকে কাবু করে । কামড় দিয়ে ধরে গভীর পানিতে নিয়ে যায় ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button