আন্তর্জাতিক

গণধর্ষিতাকে পুলিশের প্রশ্ন, কাকে বেশি এনজয় করলেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: স্বামীর চার বন্ধুর বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ গৃহবধূর। চারজনের মধ্যে একজন রাজনীতিকও আছেন। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর নিগৃহীতার সঙ্গে ডাকা হয় অভিযুক্ত চারজনকে। একে একে সবাইকে শনাক্ত করছেন নির্যাতিতা। এমন সময় হঠাৎই এক পুলিশকর্মীর প্রশ্ন, ‘এদের মধ্যে আপনাকে সব থেকে আনন্দ দিয়েছিল কে?…মানে কাকে বেশি এনজয় করলেন?’

পুলিশের এমন প্রশ্নে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন অভিযোগকারিণী। বুঝে গিয়েছিলেন এ মামলার পরিণতি। অপমানে, লাঞ্ছনায়, ভয়ে, বিস্ময়ে শেষ পর্যন্ত নিয়তিকে মেনে নিয়ে তুলে নেন মামলা।

অন্যান্য অনেক ঘটনার মতো এটাও ধামাচাপা পড়েই গিয়েছিল। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় হৈ চৈয়ের জেরে এবং তারপর কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই মামলার খাতা ফের নতুন করে খুলল। এবার অভিযোগের কাঠগড়ায় পুলিশও। তদন্ত শুরু হয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধেও। নির্যাতিতা নারী ধর্ষকদের শাস্তির পাশাপাশি কঠিন শাস্তি চেয়েছেন পুলিশের। তিনি বলেন, এমন পুলিশের কারণেই অপরাধ বাড়ছে। আগে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া প্রয়োজন।

ভারতের কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে ঘটে এ ঘটনা। মামলাটি নতুন করে আলোর মুখ দেখার পেছনে যার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি কেরলের ডাবিং শিল্পী তথা সমাজকর্মী ভাগ্যলক্ষ্মী।

নির্যাতিতার ভাষ্যে, চলতি বছরের গোড়ার দিকে কর্মসূত্রে বেশ কয়েকদিনের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন তার স্বামী। তারই মধ্যে এক দিন বাড়িতে এসে হাজির হয় স্বামীর চার বন্ধু। চারজনই তার পূর্বপরিচিত। বাড়িতে ঢুকেই তারা বলে যে তার স্বামী অসুস্থ। অবস্থা গুরুতর। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখনই তাকে যেতে হবে।

নির্যাতিতার বয়ান অনুযায়ী, সেই মুহূর্তে ওই চারজনের ওপর বিশ্বাস করা ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিল না। এক বুক উদ্বেগ, ভয় নিয়ে ওদের গাড়িতেই তিনি হাসপাতালের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছিলেন।

ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি কী ঘটতে যাচ্ছে! গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের বাইরে এক নির্জন এলাকায়। গাড়ি দাঁড় করিয়ে তার ভিতরেই পরপর চারজনে ধর্ষণ করে তাকে। অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে একজন আবার কেরলের সক্রিয় রাজনীতিক।

প্রথমে লজ্জায়, ভয়ে এই ঘটনা কাউকে জানাতে পারেননি তিনি। স্বামী ফিরে আসার মাস তিনেক পরে পুরো ঘটনা জানালে স্বামীর জোরাজুরিতেই থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে সেই নিদারুণ অভিজ্ঞতা।

অভিযোগ লিপিবদ্ধ করার পর থানায় হাজির করা হয়েছিল চার অভিযুক্তকেই। শনাক্তকরণের সময় এক পুলিশকর্মী তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এদের মধ্যে কে আপনাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিতে পেরেছেন?’

গৃহবধূ বলেন, তখন অসহায় লাগছিল ভীষণ। ঘেন্না লাগছিল আশপাশের সবকিছুতে। পুলিশ আসলে কী চাইছে বুঝতে অসুবিধে হচ্ছিল না। তাই ওই পুলিশি অপমান হজম করে নিয়ে শেষমেশ মামলাই তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

কিন্তু ঘটনা চাপা থাকেনি। ঘটনাচক্রে এই খবর জানতে পেরে ওই দম্পতির সঙ্গে দেখা করতে তাদের বাড়িতে যান সমাজকর্মী ভাগ্যলক্ষ্মী। পুরো ঘটনা শুনে নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি।

তুমুল হৈ চৈ শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। নজরে পড়ে যায় কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের। তৎক্ষণাৎ পুলিশ কর্মীসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার তিরুঅনন্তপুরমে সাংবাদিক সম্মেলন করে তার এ ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন নির্যাতিতা। দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি চেয়েছেন ধর্ষকদের পাশাপাশি পুলিশের। সূত্র: আনন্দবাজার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button