বিভাগীয় খবররংপুর

দুই হাত-পা অকেজো, মুখ দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে জোবায়ের

রংপুর প্রতিনিধি: নাম তার জোবায়ের। বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাটে।জোবায়ের জন্মের পর থেকেই প্রতিবন্ধী। দুই হাত নেই। পা দুটিও অকেজো। কথাও বলতে পারে না স্পষ্টভাবে।

তবুও প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর মনোবলের ওপর ভর করে মুখ দিয়ে লিখে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। চলতি বছর জোবায়ের জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে স্থানীয় বালারহাট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে। একইভাবে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে সে জিপিএ ৪.২০ পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছিল। জোবায়েরের স্বপ্ন অনেক বড় হওয়া। তাই সে চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট গ্রামে কৃষক জাহিদ সরোয়ারের পুত্র জুবায়ের। দুটি হাত আর পা অকেজো হওয়ায় তার খাওয়া-দাওয়াসহ সব কাজই অন্যকে করে দিতে হয়। ছোট বেলায় নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌসি জুইকে দেখে তার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। সে তার বোনের পড়ার সময় ওই পড়াগুলো মুখস্ত করতো। আর এভাবেই তার লেখাপড়ায় হাতেখড়ি।

ছেলের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে তার বাবা তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করার আগ্রহ দেখায়। পরবর্তীতে বাড়ির কাছে বালারহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তাকে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করে দেয়া হয়। মুখ দিয়ে লিখে পিএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর ভালো ফলাফল করায় জোবায়েরের উৎসাহ আরও বেড়ে যায়।

রংপুর নগরী থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় স্কুলের অন্যান্য জেএসসি পরীক্ষার্থীদের পাশেই একটি বিছানায় শুয়ে শুয়ে মুখ দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে প্রতিবন্ধী জোবায়ের। চোখ বুলিয়ে প্রশ্ন একবার দেখে নিচ্ছে আর মুখে কলম ধরে উত্তর লিখছে।

সাধারণ পরীক্ষার্থীরা হাত দিয়ে লিখতে যেভাবে সময় ব্যয় হয় ঠিক তেমনি জোবায়েরও মুখে কলম ধরে বেশ দ্রুতই লিখতে পারে। সে স্পষ্টভাবে কথা বলতে না পারলেও তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় সে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে যায়। সে মুখ দিয়ে লিখলেও কোনও কষ্ট হয় না। ভবিষ্যতে সে আরও বড় হতে চায়।

জোবায়েরের বাবা জাহিদ সরোয়ার জানান, জন্ম থেকেই তার ছেলে প্রতিবন্ধী। তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি বড় মেয়ে সুমনার হাত ধরেই। মাত্র দেড় বছরের ছোট জোবায়ের যখন তার বোন উম্মে কুলসুমকে পড়াশোনা করতে দেখে তার মাঝেও লেখা পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়।

তিনি আরও জানান, তার ছেলের চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করেছেন, কিন্তু খুব একটা লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা বলেছেন, দেশেই উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে জোবায়েরকে আরও সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু এতে অনেক টাকার প্রয়োজন যা তার পক্ষে আর বহন করা সম্ভব নয়।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী আর অর্টিজমে আক্রান্তদের জন্য অনেক কাজ করছেন তার ছেলের চিকিৎসার ব্যাপারে সহায়তা করলে তিনি চির কৃতজ্ঞ থাকবেন। জোবায়েরের মার উম্মে কুলসুমের আকুতি, তার সন্তানের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হোক।

বালারহাট নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে ভর্তি করে তার প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছেন তারা। শিক্ষকরাও তাকে এ ব্যাপারে সহায়তা করছে। জোবায়েরকে ভ্যানে করে স্কুলে আনতে হয় ফলে প্রতিদিন স্কুলে না আসলেও সপ্তাহে ২/৩ দিন আসে ক্লাস করতে। কিন্তু তার লেখাপড়ার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ আর তীব্র মনোবল তাকে অনেকদুর নিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

প্রতিবন্ধী জোবায়েরের সহপাঠি ফারজানা , মমতা , পলাশসহ অন্যরা জানায়, জোবায়ের প্রতিবন্ধী হওয়া সত্বেও মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে। এটা ভেবে তারা নিজেদের গর্বিত মনে করে। এসময় তারা জোবায়ারের সাফল্য কামনা করে।

জোবায়ের যেহেতেু প্রতিবন্ধী সে কারনে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করে তার জন্য আধা ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। পরীক্ষার সময় তার বাবাকে পাশে থাকতে দেবার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একজন শিক্ষক তার পরীক্ষা সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। তার আশা, অদম্য জোবায়ের আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে জানান বালারহাট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ও প্রধান শিক্ষক আজিজুল ইসলাম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button