জাতীয়

সাঁওতালদের ধান কাটার সুযোগ দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

ভালুকা নিউজ ডট কম; ঢাকা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের চাষ করা ধান কাটার সুযোগ দিতে, অথবা চিনিকল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ধান কেটে সাঁওতালদের দিয়ে আসবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ তিনটি মানবাধিকার সংগঠনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে এ নির্দেশ দেয়া হয়।রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন এবং জেড আই খান পান্না। অপর দিকে রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

এছাড়াও সাঁওতাল-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় কী কী মামলা হয়েছে এবং কী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার ও গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। সাঁওতালদের যেন নির্বিঘ্নে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে দেওয়া হয়, সে বিষেয়েও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের একশ’ একর জমিতে ধান চাষসহ প্রায় আটশ’ একর জমিতে মাস কালাই ডাল, সরিষা ও পাট চাষ করেছিলেন সাঁওতালরা। গত ৬ নভেম্বর সেই জমি থেকে যখন তাদের উচ্ছেদ করা হয়, তখন ধান ছাড়া সব ফসল তছনছ করে কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সাঁওতালদের অভিযোগ, সেই লুটপাট চলে পরদিন ৭ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত। এখন তাদের চাষ করা একশ’ একর জমিতে যে পাকা ধান রয়েছে, তাও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে।

সাঁওতালরা রংপুর চিনিকলের ‘সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামার’-এর জমিতে এবারই প্রথম যৌথ উদ্যোগে ধান চাষ করেছিল। ‘সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি’ গঠন করে সাঁওতাল এবং আশপাশের মুসলিম-হিন্দু পরিবার যৌথভাবে এই চাষাবাদ শুরু করে।

মাদারপুর সাঁওতাল পল্লির মিস্ত্রী মুরমু বলেন,‘চার একর জমিতে ধান আবাদ করেছি। দুটা ঘর ছিল খামার এলাকায়। ঘর পোড়াই দিছে। এহন জমির ধানও কাটতে পারছি না। তারা (খামার কর্তৃপক্ষ) জমির চারপাশে তার কাঁটা লাগাইছে। ঘর বাড়ি তো গেছে, জমির ধানও নষ্ট হয়ে যাবে। ’

সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার কমিটির সদস্য ভুপেন মারডি জানান, ‘ফার্মের জমিতে প্রায় এক হাজার তিনশো পরিবার একশ’ একর জমিতে আমন ধান, তিনশো চল্লিশ একর জমিতে মাস কালাই, কুর্তি কালাই, তিনশো একর জমিতে সরিষা, চল্লিশ একর জমিতে বীজ সংরক্ষণের পাট চাষ করেছিল। উচ্ছেদের দিন ধান ছাড়া সব ফসলই লুট হয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, গত রোববার (৬ নভেম্বর) গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে তীরবিদ্ধ হয়েছেন ৯ জন পুলিশ সদস্য এবং গুলিবিদ্ধ হন চার জন সাঁওতাল। এদের মধ্যে তিন জন সাঁওতাল নিহত হন। পরবর্তীতে পুলিশ-র্যা ব ওই দিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মিলের জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে। এসময় তাদের ঘরবাড়িতে আগুন দেয় ও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক কল্যান চক্রবর্তী বাদী হয়ে রোববার রাতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে সাড়ে তিনশো জনকে আসামি দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। এপর্যন্ত পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। কিন্তু গুলি করে হত্যার ঘটনায় এখনও কোনও মামলা হয়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button