হাওয়াই বেলুনশিশু !
এস এম সোহেল রানা ,গাজীপুর:- বাবার সাথে মাইনষের খেতে কাম করতাম। ছোড বাই-বইনের খাওনের কষ্ট, দেশে(গ্রামে) অভাব, মায়ে হারাদিন মাইনষের বাড়িতে কাম করে কিন্তু আমরার অভাব যায় না। দুই বেলার খাওন জোগার করতে করতে আমরার মা’র অসুখ হইয়া গেছে। বাই-বইনের কষ্ট দেইখা মন খারাপ কইরা গাজীপুর চইলা আইছি- কথাগুলো বলছিল ১১ বছর বয়সের কাউয়ুম।
চোখটা শিশুসুলভ কিন্তু কথা আর চালচলন যুবক বয়সীদের মতো। অত্যন্ত বিনয়ী ভঙ্গিতে হাওয়াই বেলুন বেচতে শিশুদের মা-বাবাকে কৌশলে ভোলাতে চেষ্টা করে সে। গাজীপুরের শ্রীপুরের ব্যস্ত রাস্তায় কিংবা শিশুদের স্কুলের সামনে তার যাতায়াত। ১১ বছরের শিশুর হাতে জীবন সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে হাওয়াই বেলুন ঝুলানো লাঠি। একটি স্কুলের ফটকের বাইরে তাকে ক্রেতা ধরার কৌশলী ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। একটু কথা বলতে চাই-জানালে সে উত্তর দেয় “একটু পরে, অহন কাস্টমার আইবো”। অপো করতে করতে দেখতে থাকি এক শিশু দোকানদারের জীবন সংগ্রামের ব্যস্ততার চিত্র। দুয়েকটা বেলুন বিক্রি করে সে নিজেই আমার দিকে এগিয়ে এসে কথা বলে। জনতে চাইলাম তার সম্পর্কে।
তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর জংশনের পাশে। বাবা ইদ্রিস আলী মানুষের জমিতে কাজ করে আর মা অন্যের বাড়িতে মাঝে মাঝে চুক্তি ভিত্তিক কাজ করে। তার বড় ভাই জাহিদ গ্রামে অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে, ছোট বোন কল্পনাকে স্কুলে দেওয়া হয়েছে। গ্রামে এখন কৃষি কাজ খুব কম হওয়ায় মানুষের বাড়িতে কাজও কমে গেছে, তাই তার বাবা ও ভাইকে প্রায় সময়ই বেকার থাকতে হয়। অভাব-অনটনের সংসারে ছোট বোন ও ভাই নিয়ে ৫জনের খাবার ঝুটাতেই হিমশিম খেতে হয় তাদের। কাইয়ুম জানায়, দুই বছর আগে তার এলাকার এক বন্ধু ঈদে বাড়িতে গিয়ে তাকে একটি ব্যবসার প্রস্তাব দেয়। লাভের পরিমানও ভালো জেনে সে পারি জামায় গাজীপুরে। সেখানে এক মহাজনের সাথে চুক্তি ভিত্তিক হাওয়াই বেলুন বিক্রি করে সে। যত বিক্রি তত টাকা। কোন দিন বিক্রি না হলে টাকাও নাই। সকালে তার হাতে বেলুনের প্যাকেট ও একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে কাজে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় হিসাবে নিয়ে তাকে টাকা পরিশোধ করা হয়। ভালো বিক্রি উঠলে অনেক সময় তিন ’শ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তার। কিছু টাকা জমলে তা বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। হাতে যা থাকে তাতে নিজের জীবনটা চালায় সে।
কিশোর চোখে বড় হয়ে কি স্বপ্ন দেখে, এমন প্রশ্নে তার সোজাসাপ্টা উত্তর- ”বেলুনের মহাজন হমু”। পড়াশোনা করতে পারনি কেন? সে জানায়, ছোট বেলা থেকেই বাব-মাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে দেখেছেন। কোন সময় পড়াশোনা করতে হবে এমনটা ভাবনাতেই আসে নাই। বড় হয়ে লেখাপড়ার গুরুত্ব বুঝতে পেরে ছোট বোনটাকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। কাইয়ুম জানায়, প্রতিটি বেলুন সে ১০টাকা করে বিক্রি করে। প্রতি দিন গড়ে ৬০টি বেলুন বিক্রি হয়। অনেক সময় বেলুন ফুটো হয়ে যায়। এতে মহাজনের বকাঝকাও শুনতে হয় তাকে। কাইয়ূমের মহাজন নূরুল আমীন জানান, এরা গরীব মানুষ, বাড়ি থেকে কাজে খোঁজে আসে কিন্তু বয়স কম থাকায় কেউ কাজ দেয় না। আমি এদের নিয়ে এক সাথে ব্যবসা করে নিজেও চলি আর ওদেরও সাহায্য করি।