অদম্য জারবেরা ফুলচাষী দেলোয়ার

এফ এম আমান উল্লাহ আমান,গাজীপুর প্রতিনিধি:-সুন্দর মনের মানুষ মাত্রই ফুলকে ভালবাসে। সভ্যতার ক্রম বিকাশের সাথে সাথে ফুলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ও চাহিদা বেড়েই চলেছে। ফলে ভালোবাসার ফুলে লেগেছে বাণিজ্যের ছোঁয়া। দিন দিন বেড়েই চলেছে ফুলের চাষ ও ব্যবহার। গাজীপুরেশ্রীপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কেওয়া (দক্ষিণ খন্ড) গ্রামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ১২ বছর যাবত ফুল চাষ হচ্ছে। চাষি দেলোয়ার হোসেন বাড়ির আঙিনায় ফুল গাছ লাগিয়ে স্বপ্ন দেখেন ফুল চাষের। সেই স্বপ্ন ২০০৫ সাল থেকে ২০১৭ সালে পৌছে দেয় কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগে। ফুল চাষাবাদের মাধ্যমে বেশকিছু লোকের হয় কর্মসংস্থান ও দিনমুজুরীদের কাজের সুযোগ। ফুল চাষে চাষির সামর্থ হয় বিশে^র বিভিন্ন দেশ ভ্রমন ও বীজ সংগ্রহ । বয়ে আনতে সক্ষম হয় দেশী বিদেশী সম্মাননার সনদ। তিনি সমাজের উজ্জল দৃষ্টানÍ একজন সফল বিদেশি ফুলচাষি।
সরজমিন পর্যবেক্ষণে দেখাযায়, এক একর জমির উপর নির্মিত একটি পলি হাউজ। যা এম এস পাইপের ফ্রেমে দাড় করানো শেডে ইউ বি পলি বা পলিথিন দ্বাড়া ছাউনি দেয়া। যার ফলে বৃষ্টি পড়ছে না আর সূর্যের আলো সরাসরি গাছে লাগছে না। দুরথেকে মনে হলো সৌদিয়ান সবজি উৎপাদন ঘর। নিজের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অন্যের পতিত জমি লিসে নিয়ে আলাধা আলাধাভাবে ৬ একর জমিতে করছে ফুল চাষ। আর এ ফুল রপ্তানি হচ্ছে ঢাকা,চিটাগাংসহ সাড়া দেশে। কখনো আবার এই মাঠে থেকেই নিয়ে যাচ্ছে ক্রেতা।
চাষী দেলোয়ার হোসেন আলোকিত সময়কে বলেন, স্বল্প আকারে কৃষি জমিতে দেশি ফুলের চাষ করে শাহবাগে লাভজনক বিক্রি করায় ফুল চাষে আগ্রহী হই। প্রথমে মানুষ আমার ফুল চাষ দেখে পাগল বলেছে । বাংলাদেশে জারবেরা ফুলের চাষ করে হাতে গুনা ৫-৬ জন কৃষক। ঢাকা শহর সহ বিভাগিয় শহগুলোতেও এর একটি বড় বাজার রয়েছে। চাহিদার তুলনায় নেই বললেই চলে। নেদারল্যান্ডের একজন ফুলচাষির সঙ্গে কথা বলে ও তার পরামর্শে চায়না জারবেরা ফুল চাষের সিদ্ধান্ত নেই। ভারত থেকে কিছু কাটিং কলম ও টিস্যু এনে শেড তৈরি করে চাষ শুরু করি। জারবেরা ফুলের একটি চারা থেকে টানা তিন বছর ফুল পাওয়া যায়। একটি গাছে তিন বছরে প্রায় ১০০টি ফুল ফোঁটে যার প্রতিটির বাজার মূল্য বর্তমান ৫-১৫ টাকা। নুন্যতম ৫ টাকা বিক্রি হলেই চাষি লাভবান হবে। নতুন একটি ফুল নিয়ে কাজ করছি যার নাম লিলি । ঢাকার বাজারে রয়েছে বেশ কদর । কার্নিশন নামক আরেকটি ফুল রয়েছে যা আগামী জানুয়ারীতে বাজারে থাকবে বলে আশা করছি। গত কয়েকদিন পূর্বে ইন্ডিয়া থেকে একটি এয়্যার্ড পেয়েছি ক্ষুদ্র পরিসরে তাদের সাথে বিজনেস করার কারনে । পরিবার ও প্রতিবেশীর সহায়তায় এ পর্যায়ে আসছি । ডিসেম্বরের মধ্যে হাই টেকনোলজি নার্সারী উদ্ভোধন করব।
স্থানীয় কৃষি বিদ এ এস এম মুয়ীদুল হাসান বলেন, দেলোয়ার গত বছর বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার পেয়েছে কৃষি অফিসের সহায়তায় । আমার দেখা জারবেরা ও গোলাপ চাষে অন্যতম একজন দেলোয়ার। ঢাকার বাজারে বড় একজন সাপ্লায়ার । শ্রীপুরে যে সকল ক্ষুদ্র উদ্দ্যোক্তা রয়েছে তাদের ট্রেনিং সহ সহযোগিতা করছে সে। আমরা প্রতিনিয়ত তার প্রজেক্টে যোগাযোগ রাখি । তাকে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করছে শ্রীপুর কৃষি অফিস। যদি নতুন করে কেউ ফুল চাষ করতে চায় তাহলে আমরা সর্বোত্তম কারিগড়ি সহায়তা করতে প্রস্তুুত । ফুলচাষ অর্থনৈতিক বড় একটি সার্পোট দিচ্ছে । পতিত জমি থাকলে ফুলচাষ করে সাবলম্ভি হতে পারে যে কেউ ।
গাজীপুরের ভাওয়াল কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শাহজাহান আলী বলেন,“আমাদের দেশের মাটির উর্বরতা ও ঋতু বিবেচনায় ফুল চাষ সম্ভাবনাময় এক নাম। বিশ্বময় ফুলের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে অথচ বাংলাদেশে ব্যাক্তি উদ্যোগ ছাড়া রাষ্ট্রেয় উদ্যোগে কোন ফুলের খামার গড়ে উঠেনি এখনো” । যে ফুল বাংলাদেশে এর আগে খুব একটা চাষ হয়নি সে ফুলের চাষে বিপ্লব ঘটিয়ে দেখালেন অদম্য ফুল চাষী দেলোয়ার হোসেন। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে লাভজনক ও দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে সরকারের উদ্যোগে ফুল চাষ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে সেখানে আমাদের দেশে এখনো কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ এ ব্যাপারে সরকার ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান আন্তরিক হলে দেশে ফুল চাষ ব্যাপক হারে সম্প্রসারিত হয়ে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হবে।