শিরোনামহীন

ভালুকা মুক্ত দিবস ৮ ডিসেম্বর

 

:: ৮ ডিসেম্বর ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সনের ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল’ বৃটিশ ভারত সেনাবাহিনীর (অবঃ) সুবেদার তৎকালীন ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহঃ সভাপতি মেজর আফছার উদ্দীন আহমেদ ১ টি মাত্র রাইফেল ও ৮ জন সদস্য নিয়ে মুক্তি বাহিনীর দল গঠন করেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তারা ভালুকা থানা দখল করে প্রচুর গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। পরে ভারতের মেঘালয় হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আসার পর মেজর আফসার বাহিনী একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়।

মেজর আফছার উদ্দীন আহমেদের ৮ সদস্যের বাহিনীটি সাড়ে ৪ হাজারে উন্নীত হয়ে  এফ জে ১১ নং সেক্টরের ময়মনসিংহ  সদর দক্ষিন ও ঢাকা সদর উত্তর সাব সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফছার ব্যাটেলিয়ন নামে পরিচিতি লাভ করে। যুদ্ধকালীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার মোঃ রমজান আলী তরফদারের তত্বাবধানে ৫ জন ডাক্তার ১০ জন সহকারী চিকিৎসক ও ৪ জন নার্সের সমন্বয়ে আফছার ব্যাটেলিয়ান হাসপাতাল নামে একটি গোপন ভ্রাম্যমান হাসপাতাল পরিচালিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আর্ন্তজাতিক রেডক্রস সংস্থার সহায়তায় এই হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ভালুকা উপজেলার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়। ১৯৭১ এর যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ২৫ জুন শুক্রবার সকাল হতে পরদিন শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভালুকা-গফরগাঁও সড়কের ভাওয়লিয়াবাজু নামক স্থানে শিমুলিয়া নদীর পাড়ে পাক বাহিনীর সাথে দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা আফছার বাহিনীর একটানা যুদ্ধ হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সম্মুখ যুুদ্ধ। এই যুদ্ধে তরুণ মুক্তিযোদ্ধা অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র মল্লিকবাড়ী গ্রামের আব্দুল মান্নান শহীদ হন। আহত হয় ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে পাকিস্তানীরা পিছু হটে। পাকিস্তানী হায়েনারা এলাকার কতিপয় রাজাকার আলবদরদের সহযোগিতায় ভালুকার বিভিন্ন গ্রামে দিনের পর দিন হত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট চালিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। আফছার বাহিনী বিভিন্ন সময়ে কৌশলে ভালুকা ক্যাম্পে পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকবার আক্রমন চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এছাড়া আমলীতলাযুদ্ধ, বল্লা যুদ্ধ, ত্রিশাল, গফরগাঁও, ফুলবাড়ীয়া, শ্রীপুর, মল্লিকবাড়ী, মেদুয়ারী সহ বিভিন্ন স্থানে পাকসেনা ও রাজাকারদের সাথে আফসার বাহিনীর প্রতিনিয়ত যুদ্ধ হয়। ভালুকায় দীর্ঘ ৯ মাসের বিভিন্ন যুদ্ধে আফছার উদ্দীনের পুত্র নাজিম উদ্দীনসহ ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেন। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মেজর আফছার বাহিনীর কাছে ভালুকা ক্যাম্পের কয়েক হাজার রাজাকার আলবদর ও পাক সেনারা আত্মসর্মপনের মধ্য দিয়ে ৮ ডিসেম্বর ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত হয়।

ভালুকা উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভালুকা উপজেলা কমান্ড (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মাসুদ কামাল জানান, ভালুকা মুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে ভালুকা উপজেলা পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে আছে সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ চত্তর থেকে আনন্দ র‌্যালী, আলোচনা সভা, কবর জিয়ারত ও মিলাদ মাহফিল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button