অন্যরকম অনুভুতি; ভিন্ন স্বাধ, মাটির ঘরে রেস্তোরাঁ

এস এম সোহেল রানা,গাজীপুর থেকে :-শহুরে জীবনের ক্লান্তিময় মনে প্রশান্তির পরস দিতে সবাই খুঁজে ফিরে শান্তিময় নির্জন স্থান। স্বপরিবারে বা বন্ধু বান্ধব মিলে ছুটির দিন কিংবা কাজের ফাঁকে যারা বেড়িয়ে পড়েন। তারা বাহারি দেশি খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে চলে যেতে পারেন ‘মাটির ঘর’ রেস্তোরাঁয়। যেখানে আপনাদের ভালবেসে স্বাগত জানাবে প্রকৃতি। মাটির ঘর,মাটির থালা বাসন এমনকি মাটিরই জগ গ্লাস এ যেন অন্যরকম অনভুতি। পরিবেশবান্ধব গাছের সুশীতল ছায়ায় প্রাণ জুড়াবে। মনে হবে বেড়াতে আসছেন গ্রামে দাদা বা নানাবাড়ী। সেলফি তুলার লোভ সামলাতে পারবেন না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাটির ঘর আজ ধংশের পথে। ‘মাটির ঘর’ একটা জায়গা আছে তা শুনে বা ফেজবুকে পোষ্ট দেখে কৌতূহল থেকেই আসছে দর্শনার্থী । জায়গাটাও ঢাকা থেকে কাছে গাজীপুরের কালীগঞ্জে । ঢাকার তিনশ ফিটের শেষ মাথায় গিয়ে হাতের বামে ‘ঢাকা সিটি বাইপাস’ রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে হবে কালীগঞ্জের দিকে। পাঞ্জোরা পৌঁছালেই পেয়ে যাবেন ‘মাটির ঘর’। অপর দিকে গাজীপুর চৌরাস্তার বাইপাস ধরে মীরের বাজার পাড়হয়ে। আর গুগল ম্যাপ ধরে এগোলে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। এছাড়া তাদের ফেইসবুকে “মাটির-ঘর” পেইজতো রয়েছেই।
ঘুড়ে আসা ডেইলি স্টার সাংবাদিক আবুবক্কর ছিদ্দিক বলেন, সভ্যতার বিবর্তনে যান্ত্রিক জীবন থেকে দুরে সরে গিয়ে প্রকৃতির নির্জনতার মাঝে রসনা করলাম। এ যেন অন্য রকম অনুভূতি। বেশ ভালো লেগেছে আমার। খাবারের দাম মান অনুযায়ী মোটেও বেশি নয়।
ফজর আলী সাহেব সদ্য বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে এসে জানান, খাবার খেয়ে তাঁরা সবাই খুশি। গাছের ডালে ঝোলানো রয়েছে দড়ির তৈরি দোলনা-বিছানা। পাশেই কাঠ আর গুঁড়ি দিয়ে বসার ব্যবস্থ্ াও আড্ডার পরিবেশ। আড্ডার ফাঁকেই প্রস্তুত হবে পছন্দনীয় গড়ম খাবার আর ডাক আসবে ভোজন টেবিলে যাওয়ার। বসার ব্যবস্থা কাঠের গুঁড়ির ওপর। টেবিল বানানো মোটা গাছ লম্বালম্বি চিরে। টেবিলে রাখা মাটির জগভর্তি পানি আর মাটির গ্লাস। ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো আসে তার জন্য রয়েছে বড় বড় জালানা। কাছাকাছি কোথাও হাঁটাহাঁটি করতে চাইলে চলে যেতে পারেন রেস্তোরাঁর উল্টো দিকে। সেখানে টাটকা শাকসবজি আর মৌসুমি ফল নিয়ে বসে থাকেন আশপাশের বিক্রেতারা। দেখলে না কিনে থাকা যায় না।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাশ করা ও ৭১ টিভিতে কর্মরত,স্বত্বাধিকারী জাকারিয়া আকন্দ বিপ্লব জানান,তার দাদা বাড়ীতে মাটির ঘরের টানেই জানুয়ারি ২০১৫ তে ঘর বানানোর কাজ শুরু করে। এক সময় লোকমুখে ‘মাটির ঘর’ নামটা ছড়িয়ে পড়ে। এ বছরের পয়লা বৈশাখ রেস্তোরাঁ হিসেবে যাত্রা শুরু তাদের। ঢাকা কেন্দ্রিক কাস্টমার বেশি। ছুটির দিনগুলোতে ভিড় একটু বেশি থাকে আর অন্যদিন মোটামুটি টিকে থাকা। মূল খাবারে থাকে দেশি লাল চালের ভাত, চিনিগুঁড়া চালের খুদের চচ্চড়ি, চাপা শুঁটকির ভর্তাসহ কয়েক পদের ভর্তা, পাঁচমিশালী সবজি, তিনপদী ডাল, মাছ, দেশি মুরগির মাংস, রাজহাঁস। খাবারের দাম বেশ কম। ফিফটি পারসেন রান্না হচ্ছে মাটির চোলায়।
বাঁশের তৈরি গোল ঘরের মত মাচা হচ্ছে যার নাম হবে পিঠাঘর। পাওয়া যাচ্ছে ফুলপিঠা, পাটিপিঠা, শামুকপিঠার পাশাপাশি থাকে দইয়ের লচি আর মৌসুমি ফলের জুস। রেস্তোরাঁটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তাই তাদের ফেসবুক পেজে ঢুকে আগে থেকে বুক করে গেলে ভালো।
বিপ্লব আরো জানান,পৈত্রিক-ভিটেমাটিতেই এই রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছেন। প্রথমে এই ধরনের কোনো পরিকল্পনা ছিল না তার। লক্ষ্য ছিল নিজে থাকবেন, এলাকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও আর্ট স্কুল করবেন । রেস্তোরাঁ-ব্যবসা অর্থ জোগাড়ের সুবিধাজনক কাজ হিসেবে মনে গড়ে তুলেছেন। রাজধানীতে ও আশপাশে যারা থাকেন তারা এই রেস্তোারাঁয় গিয়ে খেয়েদেয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ঘরে ফিরতে পারবেন। তবে রাতের জন্য তাদের কোনো আয়োজন নেই।