আন্তর্জাতিক

মালয়েশিয়ায় স্বল্প খরচে কর্মী আনার প্রত্যয়

স্বল্প খরচে কর্মী আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন মালয়েশিয়ার কমিউনিটি ব্যবসায়ীরা। রোববার রাতে কুয়ালালামপুরের জালান ইম্বি রসনা বিলাস রেস্টুরেন্টে চলমান জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে জনশক্তি রপ্তানী নিয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে লোক আনা, জিম্মি করা, বেতন থেকে টাকা খাওয়া, দাস করে রাখা বন্ধ হওয়াতে দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনা সরকারের সমঝোতা জি টু জি প্লাস বন্ধ করার জন্য দলমত নির্বিশেষে একটি চক্র সক্রিয় ছিল।

মালয়েশিয়ায় সরকার পরিবর্তনের কারণে তারা এখন পুরনো সুযোগ খুজতে ব্যস্ত। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা মকবুল হোসেন মুকুলের সভাপতিত্বে ও ব্যাবসায়ী ইঞ্জিনিয়ার বাদলুর রহমান খান বাদলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে সর্বস্তরের কমিউনিটি ব্যবসায়ীরা উপস্থিত থেকে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন।

যদি সুষ্ঠু ধারা বজায় রেখে কম খরচে (৪০-৬০ হাজার টাকায়) লোক আনা সম্ভব হয় তাহলে গরীব লোকজন বেঁচে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা ১০ লাইসেন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, ৩৭ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১০ কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট অসহায় শ্রমিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি প্রায় ৩ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে বর্তমানে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানী হুমকির মুখে পতিত হয়েছে।

শ্রমিক রপ্তানিকারকদের পাস কাটিয়ে এ প্রক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বহু মানুষ। বিভিন্ন ইস্যু দেখিয়ে এই সিন্ডিকেট অসহায় শ্রমিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মেডিকেল অনলাইন করতে ৬ হাজার টাকা টাকা, পাসপোর্ট ফেরত নিতে গেলে ৬ হাজার টাকা, ফ্লাইটের সময় কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইনের জন্য ৪ হাজার টাকা জোর পূর্বক আদায় করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে পারছেন না।

মালয়েশিয়ার এসপিপিএ কোম্পানির কথা বলে ১০ কোম্পানির সিন্ডিকেট ভিসা প্রসেসিং খরচ বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে জোর পূর্বক আদায় করছে বলে অভিযোগ করেন তারা। শ্রমিকদের অভিবাসন ব্যয় বেড়ে প্রায় ৩ লাখ টাকার উপরে পড়ে যাচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে মালয়েশিয়ার প্রতি এক বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত সকলের মতামত নিয়ে ৫টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এগুলো হলো- আমিন গং এর ১০ কোম্পানির সিন্ডিকেটকে প্রসেসিং খরচ বাবদ ৫ হাজার রিঙ্গিত প্রদান করা হবে না, খুব শিগগিরই কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাই কমিশনে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হবে, মাইগ্রেশন খরচ কমাতে হবে, সকলেই মালয়েশিয়ার আইন মেনে চলবে এবং নতুন কোন সিন্ডিকেট মেনে নেয়া হবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী জানান, মালয়েশিয়ার কলকারখানায় লোক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বা মিডিয়া হিসেবে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিরা দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন, অনেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত। চলমান লোক নিয়োগ যেন বন্ধ না হয় সে বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবেন তারা।

অনেকে বলছেন, জি টু জির মাধ্যমে মাত্র ৩৫ হাজার টাকায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ করে যে দৃষ্টান্ত সরকার স্থাপন করেছে তা বাস্তবায়ন করে দেখাবেন তারা। প্রত্যাশা করা যায় চল্লিশ হাজার না হোক ৬০ হাজার টাকায় কর্মী আনা হবে। তাহলে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে চরম প্রতিশোধ নেয়া হবে। এটা শুধু প্রবাসী নয় সকল বাংলাদেশি নাগরিকের প্রত্যাশা।

আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মকবুল হোসেন মুকুল বলেন, একটি চক্র মুনাফা করেছে আর একটি চক্র এখন কর্মী আনা বন্ধ করার জন্য চক্রান্ত করছে। তারা চাইছে লোক নিয়োগ বন্ধ করে হাসিনা সরকারের দুর্নাম করতে। যাতে সামনের নির্বাচনে প্রভাব পড়ে। আমরা তা হতে দিব না। স্বল্প খরচে লোক এনে সরকারের উদ্দেশ্য সফল করা হবে।

বিএনপি নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাদলুর রহমান খান বলেন, সিন্ডিকেট আমাদের লোকগুলোর রক্ত চুষে খেয়েছে। সাধারণ মানুষ ঘর, জমি, গরু ছাগল বিক্রি করে ধার দেনা করে অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য করেছে। আমরা চাই স্বল্প খরচে কর্মী আসুক।

মাহাথির মোহাম্মদ সম্প্রতি দেশের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যেমন চমক দেখিয়েছেন তেমনি আগামীতেও আরো চমক অপেক্ষা করছে। ইতোমধ্যে তিনি কারো প্রতি অনুরাগ বা বিরাগভাজন না হয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। এশিয়ার দেশগুলোর সরকার পরিবর্তনের পর নতুন সরকারের প্রতিশোধ গ্রহণ আচরণের বিপরীত ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ থেকে ১৯৭৬ সাল থেকে কর্মী নিচ্ছে মালয়েশিয়া। কর্মী নিয়োগে বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম ও অনাচার সর্বজনবিদিত। সর্বশেষ থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশের জঙ্গলে বহু বাংলাদেশির দেহাবশেষ প্রমাণ করেছে মালয়েশিয়ায় প্রেরণের ভয়াবহতা। আদম পাচার চক্রের যে ভয়াবহ শক্তিশালী রুপ প্রকাশ পেয়েছে তা পুনরায় ফিরে আসুক তা বাংলাদেশের জনগণ চায় না।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশিদের জিম্মি করে, হাত পা বেঁধে, অত্যাচার করে, অংঙ্গচ্ছেদ করে, অনেক ক্ষেত্রে হত্যা করে অর্থ আদায় করা হতো। এখন আবার তারা সক্রিয় হতে সচেষ্ট। চলমান লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হলে আবারো সে ধরনের কাজ করা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এদেরও শায়েস্তা করতে হবে।

কর্মীদের অবৈধ করে তাদের পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়া, পুলিশ থেকে ছাড়িয়ে আনা, ইমিগ্রেশন পুলিশকে ব্যবহার করে হয়রানি করা, বৈধ কর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা, ইত্যাদি কাজ এখনো চলমান আছে। এসব বন্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা ও কমিউনিটির নেতারা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button