গাজীপুরের শ্মশান বাড়িটি অযত্নে অবহেলায়

এফ এম আমান উল্লাহ আমান,গাজীপুর:- গাজীপুরের ভাওয়াল রাজাদের দ্বারা নির্মিত অপূর্ব কারুকার্য খচিত ঐতিহাসিক প্রত্নত্তাত্বিক নির্দশন গুলোর অন্যতম শ্মশান বাড়িটি অযত্নে অবহেলায় বর্তমানে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনিত হয়েছে। দীর্ঘ দিনেও প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে এ ঐতিহাসিক নিদর্শনটি যে কোন সময় ধসে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে।
ইতিহাস প্রসিদ্ধ ভাওয়াল রাজাদের আমলে নির্মিত উল্লেখযোগ্য নিদির্শনগুলো প্রায় দুই’শ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয় বলে জানা গেছে। এ সব নিদর্শনগুলো মধ্যেও রয়েছে ভাওয়াল রাজ প্রসাদ (বর্তমান জেলা প্রশাসক কার্যালয়), শ্মশান বাড়ি, শিববাড়ি, কাচারী বাড়ি, বড়বাড়ি (রাজাদের আত্মীয় বাড়ি), কৃপাময়ী কালী মন্দির, টেরিটেবল ডিসপেনসরি ইত্যাদি। এ সব প্রাচীন নিদর্শন গুলোর অন্যতম হচ্ছে শ্মশানবাড়ি। জেলা শহরের জয়দেবপুর রাজবাড়ি থেকে (বর্তমান জেলা প্রশাসক কার্যালয়) প্রায় ১ কিলোমিটার উত্তর পূর্বকোনে চিলাই নদীর তীরে খানিকটা নির্জন এলাকায় মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতি পরিবেশে শ্মশান বাড়ীটি অবস্থিত। তৎকালীন রাজ পরিবারের সদস্যদের শবদেহ দাহ করার জন্য এটি নির্মাণ করা হলেও এতে রয়েছে অত্যন্ত কারুকার্য খচিত সুদৃশ্য কয়েকটি মিনার। এর মধ্যে প্রধান মিনারটির উচ্চতা প্রায় ২শত ফুট। এছাড়া একটি স্মৃতি সৌধসহ কয়েকটি শিবলিঙ্গ, শ্মশানের পুরোহিতদের বাসস্থান এবং একটি ছোট্ট বেশী গভীর পুকুর আছে শ্মশান বাড়ির আঙ্গিনায়। প্রায় ৭ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত শ্মশান বাড়ীতে দৃশ্যমান সাতটি স্মৃতিস্তম্ভ বা মিনার রয়েছে যা রাজপরিবারে সাত পুরুষের স্মৃতি ধারণ করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
কলকাতার বিখ্যাত ওভারসিয়ার কামাক্ষা ভট্টাচার্যের তত্তাবধানে এই স্মৃতিস্তম্ভ গুলো নির্মান করা হয় বলে জানা গেছে। সুদৃশ্য এই শ্মশান বাড়ীটি দেখার জন্য প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী এখান আগম ঘটে। বর্তমানে এই শ্মশানের মিনারসহ স্তম্ভের ভিত্তি সংলগ্ন ঘরগুলোর ইট খসে এগুলো প্রায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শ্মশান বাড়ীর কারুকার্যময় সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। শ্মশানের সুদৃশ্য মিনারগুলো আজও মানুষের মুগ্ধ দৃষ্টি কেড়ে নেয়। ঐতিহাসিক এ নির্দশনটি রক্ষনাবেক্ষনের জন্য দীর্ঘদিনেও প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়নি।
শ্মশান বাড়িতে বেশ কয়েকটি শিবলিঙ্গ ছিল, সেগুলো ইতোমধ্যে বেহাত হয়ে গেছে। এছাড়া শ্মশান বাড়ীতে রক্ষিত বহু দামী জিনিস পত্র চুরি হয়ে গেছে। এমনকি শ্মশান সংলগ্ন বহু জায়গা অবৈধ ভাবে লিজ দেয়া হয়েছে। শুধু শ্মশানের স্মৃতিস্তম্ভের জায়গাটুকু অবশিষ্ট আছে। অবিলম্বে প্রত্নতত্ত বিভাগে হাতে ন্যাস্ত করে শ্মশান বাড়ীটির প্রয়োজীয় সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষন করার দাবি জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, শিগ্রই শ্মশানের জায়গা জরিপের মাধ্যমে নির্ধারন করে সীমানা প্রাচীর দেয়া হবে। এ পর এটি সংস্কার ও রক্ষনা বেক্ষনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত করা হবে। পরবর্তীতে আরো কিছু পরিকল্পনা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।