জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর গার্ড অব অর্নার দ্ইু দফা রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় মুক্তিযোদ্ধার দাফন সম্পন্ন
এফ এম আমান উল্লাহ আমান, গাজীপুর:গাজীপুর সদর উপজেলার বানিয়ারচালা(বাঘেরবাজার) গ্রামে আলাদাভাবে দুই দফা গার্ড অব অর্নারের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাজ উদ্দিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকালে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আলাদাভাবে এই সম্মাননা দেন। পরে তার মরদেহ নিজ বাড়ির আঙ্গীনায় দাফন করা হয়।
বিকালে জেলা প্রশাসকের প থেকে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। একই সময়ে উপস্থিত হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। জানাজার পর প্রথমে জেলা প্রশাসনের প থেকে গার্ড অব অর্নার দেওয়া হয়। পরে সেনাবাহিনীর প থেকে গার্ড অব অর্নার দেওয়া হয়। পরে রেওয়াজ অনুযায়ী সৈনিক ও স্বজনেরা লাশ দাফন করেন। দাফন শেষে মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য ফাকা গুলি ছোড়া হয়।
মুক্তিযোদ্ধার পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর সকালে মস্তিষ্কে রক্তরণ হয় তাঁর। পরে অতি দ্রুত ঢাকার সম্মিলিত সামরকি হাসপাতালে(সিএমএইচ) নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শুরুতে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট(এইচডিইউ) তে চিকিৎসা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেন কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জানুয়ারি তার মৃত্যু ঘটে। তিনি ১০দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫বছর। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ল্যান্স কর্পোরাল পদে চাকরি করেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যুদ্ধ করেছেন তিনি। সর্বশেষ চট্রগাম ক্যান্টনমেন্টে চাকুরীরত অবস্থায় অবসরে যান।
মুক্তিযোদ্ধার বড় ছেলে সোহেল রানা জানান, তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গর্ব করতেন। কোথাও নাম লিখতে হলে নামের আগে ‘বীর’ শব্দটি লিখলে তিনি খুব খুশি হতেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়ার পর নিজের ছোট ছোট সন্তানদের একত্র করে দেশের জন্য কি কাজ করছে সেনাবাহিনী তা বলতেন। তার বাবা সব সময় মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলো সন্তানদের শোনাতে উৎসাহ বোধ করতেন। মু্িক্তযুদ্ধ শুরু হলে সেনাবাহিনী থেকে ৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠন করা হলে সেখানে যুক্ত হন তিনি। যুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে চোখ ভেজাতেন।
মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে শাহজান পারভীন বলেন, বাবার মনোযোগ ছিল সন্তানদের পড়াশোনা, শব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গিতে শালীনতার প্রতি। তার সব সন্তান যেন উচ্চ শিায় শিতি হয় এমন প্রচেষ্টা ছিলে তার বাবার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। পড়াশোনার শর্তে সর্বস্ব দিয়ে দেওয়ার কথা বলতেন তিনি। দেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে সেখানে থেকে ফিরে অপো করতেন তার সন্তানেরা বড় হলে যুদ্ধের গল্প বলবেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন সন্তানেরা বাবার গর্বে ভরা ইতিহাস ধারণ করবে। ব্যতিক্রমী মানুষ হবে তার সব সন্তান। এমন ইচ্ছা তার অপূর্ণ থাকেনি বলে শেষ বয়সে প্রায়ই মানুষের কাছে বলতে শুনেছি। বাবা ছিলেন ক্রিকেট পাগল এক মানুষ। তিনি ক্রিকেট খেলা হলে এক ধরনের উৎসবে মাততেন। সবাইকে নিয়ে সারাণ ক্রিকেটে মেতে থাকা ছিল তার অন্যতম শখ। সারা পৃথিবীর কোথায় কোন ম্যাচ হচ্ছে তা তার জানা ছিল। কোন খেলাই তিনি কখনই বাদ দিতেন না। দূরে কোথাও থাকলে সন্তানদের কাছে ফোন দিয়ে খেলার স্কোর জেনে নিতেন।
গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফ উদ্দিন বলেন, তিনি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন তাই তাঁর অবদান রাস্ট্র শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করবে আজীবন। এই মানুষেরা তাদের শক্ত হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন বলেই আমরা আজ স্বাধীন দেশে বাস করতে পারছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাজ উদ্দিন দেশ তথা গাজীপুরের গর্ব। আমরা তাকে সম্মান প্রদর্শন করতে পেরে গর্বীত। যেহেতু তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তাই সেনা প্রধানের প থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আলাদাভাবে গার্ড অব অর্নার দিয়েছে।