সারা দেশ

গাইবান্ধায় রবিদাস জনগোষ্ঠীর ২ শিশু ধর্ষনের শিকার : বিআরএফ এর তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও শাস্তি দাবি

গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের চকমামরোজপুর গ্রামে নুরুন নবী নামে এক ব্যক্তির দ্বারা রবিদাস সম্প্রদায়ের দুই শিশু(জয়া ও বেবী) যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে গতকাল রাতে গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। দুই শিশু সম্পর্কে ফুপু ও ভাতিজি। এই ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় আজ ভোরে গাইবান্ধা সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শিশু দুইটি খোলাহাটী ইউনিয়নের বড়ঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

শিশু দুইটির পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, খোলাহাটী ইউনিয়নের চকমামরোজপুর গ্রামে নুরুন নবীর একটি ঘরের অর্ধেক অংশে মনোহরী দোকান করেন। বাকি অংশে তিনি বসবাস করেন। বুধবার বিকেলে শিশু দুইটি (জম্বু রবিদাসের মেয়ে জয়া ও বাচ্চু রবিদাসের মেয়ে বেবী) নুরুন নবীর দোকানের সামনে খেলছিল। এসময় নুরুন নবী তার ঘর ঝারু দেওয়ার কথা বলে শিশু দুইটিকে ঘরে ডেকে নেয়। পরে দোকান বন্ধ করে শিশু দুইটির প্যান্ট খুলে মেঝেতে পাটি পেরে তাদের উপর যৌন নির্যাতন চালায়। শিশু দুইটি চিৎকার করার চেষ্টা করলে তাদের মুখ চেপে ধরে ও ভয়ভীতি দেখায় নুরুন নবী। শিশু দুইটির বাবা (জম্বু ও বাচ্চু রবিদাস) বলেন, আমরা শহরে কাজে ছিলাম। খবর পেয়ে বাড়িতে এসে দেখি আমাদের মেয়েরা অসুস্থ্য। নুরুন নবীর বাড়িতে গিয়ে দেখি তার দোকানে তালা এবং বাড়িতে তিনি নাই। পরে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের জানাই। তারা ইউপি সদসকে ঘটনাটি জানায়।

খোলাহাটী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য আশরাফুল ইসলাম লুজু বলেন, আমি ঘটনা শুনে তাৎক্ষনিক শিশু দুইটিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠাই। নুরুন নবীর ছেলে জহিরসহ দুই শিশুকে রাত ৮টার দিকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু নুরুন নবীর ছেলে জহির মিয়া ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কৌশলে শিশু দুইটিকে গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতাল থেকে বের করে এসকেএস হাসপাতালে নিয়ে যায়। জহির ঘটনা মিমাংসার কথা বলে সেখান থেকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় শিশু দুইটির বাবা স্থানীয় জনগণ ও সংবাদ কর্মীদের সহযোগিতায় আবারও শিশু দুইটিকে গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়।

গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. শাহীন আলম বলেন, যৌন নির্যাতনের শিকার শিশু দুইটিকে হাতপাতালে নিবির চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা অনেকটা সুস্থ্য। সদর উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুজন প্রসাদ বলেন, এ ঘটনা শুনে আমরা হাসপাতালে শিশু দুইটিকে দেখতে যাই। তিনি বলেন, আমরা এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি করি।

গাইবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) খান মোঃ শাহরিয়ার বলেন, এই ঘটনায় থানায় দিলীপ রবিদাস (বাচ্চু রবিদাসের ভাই) বাদি হয়ে নুরুন নবীসহ দুইজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছে। তিনি আরও বলেন, রাত থেকে আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আজ ভুক্তভোগিদের (ভিকটিম) ডাক্তারী পরীক্ষা করা হবে।

তাদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টজনদের নিকট সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। এছাড়াও অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে লাগাতার হুমকি প্রদানের বিষয়েও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা।

এমন ন্যাক্কারজনক ও অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ এবং অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম (বিআরএফ) এর নেতৃবৃন্দ। বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম (বিআরএফ)-কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সন্তবন্ধু মাষ্টার কানাইলাল রবিদাস (মহন্ত), সভাপতি অজয় রবিদাস, প্রতিষ্ঠাতা ও মহাসচিব শিপন রবিদাস প্রাণকৃষ্ণ, যুগ্ম মহাসচিব নিরব রবিদাস, সাংগঠনিক সম্পাদক কৈলাশ রবিদাস, বাংলাদেশ রবিদাস নারী ফোরাম (বিআরডব্লিউএফ)-কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য-সচিব আদুরী রবিদাস, বাংলাদেশ রবিদাস ছাত্র ফোরাম (বিআরএসএফ)-কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক লেবুলাল রবিদাস, বিআরএফ এর রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী হান্নান রবিদাস, রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়কারী উত্তম কুমার রবিদাস, গাইবান্ধা জেলা সভাপতি সুনীল রবিদাস, সাধারণ সম্পাদক খিলন রবিদাস, সাংগঠনিক সম্পাদক লালচাঁন রবিদাস, বাংলাদেশ রবিদাস নারী ফোরাম (বিআরডব্লিউএফ)-গাইবান্ধা জেলা শাখার সভানেত্রী রীতা রানী রবিদাস, সাধারণ সম্পাদক লক্ষী রবিদাস, সাংগঠনিক সম্পাদক রীতা রবিদাস, বাংলাদেশ রবিদাস ছাত্র ফোরাম (বিআরএসএফ)-গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি দিপু রবিদাস, সাধারণ সম্পাদক সুজন রবিদাস (গাইবান্ধা সদর), সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন রবিদাস (সাদুল্ল্যাপুর) প্রমুখ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button