ত্রিশালে এক গৃহবধুর আত্মহত্যা থানায় অপমৃত্যু মামলা!
মোমিন তালুকদার,নিজস্ব প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক গৃহবধুর ফাঁসিতে জুলে আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধ্রুম্যজালের সৃষ্টি হয়েছে। এঘটনায় ত্রিশাল থানা পুলিশ গৃহবধুর মাকে চাপ প্রয়োগ করে অপ মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। এলাকাবাসীর দাবী পুলিশ তদন্ত না করে অপ মৃত্যুর মামলা নিয়েছেন। প্রকৃত পক্ষে এ গৃহবধুকে তার স্বামী ও শাশুরী মিলে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জানাগেছে, উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের নিগুর কান্দা গ্রামের মামুন ফরাজীর স্ত্রী রিতা বেগমের (২৫) গত ৫ অক্টোবর আত্মহত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। রিতা বেগমের মা-বাবা ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করেছেন, আত্মহত্যার ঘটনাটি সঠিক নয়। রিতা বেগমের মা ফারেছা আক্তার মরিয়ম জানান, আমার মেয়ে রিতা বেগমকে প্রায় ৪ বছর পুর্বে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে তার স্বামী মামুন ফরাজী ও শাশুরী জোবেদা খাতুন শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করে আসছে। এব্যাপারে স্থানীয় ভাবেও কয়েকদফা দেন-দরবার করা হয়েছে। এবং বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে প্রায় ৪লক্ষাধিক টাকার যৌতুক প্রদান করা হয়েছে। এবিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, আত্মহত্যার ঘটনাটি কতটা সঠিক তা পুলিশ তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। স্থানীয় শত-শত পুরুষ-মহিলাদের দাবী রিতা বেগমকে বিয়ের পর থেকে তার শাশুরী জোবেদা খাতুন ও স্বামী মামুন ফরাজী কারনে অকারণে মারধরসহ বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করে আসছিল। মৃত্যুর তিনদিন পুর্বে থেকে তার স্বামী ও শাশুরী রিতা বেগমকে ঘরে খাবার দাবার বন্ধসহ বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করে আসছিল। যে কারণে এ গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের দাবী পুলিশ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রিতা বেগমের স্বামী ও শাশুরীর বিরুদ্ধে এ মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছে। রিতার স্বামীর চাচাতো ভাই কবীর জানান, আমার এ ছোট ভাইয়ের বউয়ের মত মানুষ হয়না। খুব ভালো মানুষ ছিলো। কিন্তু শাশুরী এবং বউয়ের মধ্যে সব সময় ঝগরা হতো। এবং তার শাশুরী ঠিক মত খাবার দিতো না। মারা যাওয়ার দিন সকালে আমার স্ত্রীর কাছে খাবারের জন্য যান। একই বাড়ীর আব্দুল মতিনের স্ত্রী তমিলা খাতুন জানান, রিতা এবং তার স্বামীর মধ্যে যৌতুকের টাকা নিয়ে ঝগরা হতই। রিতা তার বাপের বাড়ী থেকে টাকা আনা বলেও জানান। মামুনের চাচী রেজিয়া খাতুন বলেন, রিতা এবং তার শাশুরীর সাথে মারা যাওয়ার দিন সকালে অনেক ঝগরা হয়েছে। রাতে স্বামীর সাথেও ঝগরা হয়েছে। পরে রিতা ফাঁস টানিয়েছে না কি করছে জানিনা। মামুনের চাচা মোসলেম উদ্দিন বলেন, ঝগরা ঝাটি ও নির্যাতন করার কারণে রিতাকে নিয়ে যেতে চাইছিল আমরা সবাই বলে রেখেছি। রিতার শাশুরী তাকে অনেক নির্যাতন করত। ফাতেমা খাতুন বলেন, সব সময় রিতাকে জালা যন্ত্রনা করত তার শাশুরী। মরার আগের দিনও শাশুরীর সাথে অনেক ঝগরা হয়েছে আমরা ফেরাতে গেলে আমাদের নিষেধ করছে। রিতা তার বাপের বাড়ী থেকে অনেক টাকা পয়সা আনছে। রিতা বেগমের শাশুরী জুবেদা খাতুন বলেন, শাশুরী এবং বউয়ের মধ্যে মাঝে মাঝে ঝগরা তো হতেই পারে, এটা সত্য। টাকা আনার ব্যাপারে তিনি বলেন ঘর করার সময় কিছু টাকা হাওলাদ আনা হয়েছে। মারপিট করার বিষয়ে আমার ছেলের সাথে কিছু ঝগরা হয়েছে এবং তাকে ঝগরা না করার জন্য বুঝিয়েছি। মারা যাওয়ার পুর্বে আমার জানা মতে ঐদিনই সে খাবার খাইনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, রাতে সংবাদ পাই যে আমার ওয়ার্ডে একজন গৃহবধু আত্মহত্যা করেছে। ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে এলাকাবাসীর কাছে জানতে পারি স্বামী এবং শাশুরীর মধ্যে প্রতিনিয়তই ঝগরা লেগে থাকতো তাই এলাকাবাসী এবং আমার ধারনা মৃত্যুটা রহস্য জনক। এলাকাবাসী দাবী এর সঠিক বিচার হওয়া দরকার। মামলার বাদী রিতা বেগমের মা বলেন, আমি থানা গিয়েছি মামলা করার জন্য কিন্তু আমি যা বলি তা লিখেনি। বরং কিছু বলতে চাইলে আমাকে মামলার তদন্ত কারী এস.আই আব্দুর রব দমক দেয় এবং চাপ প্রয়োগ করে তাদের ইচ্ছে মত লিখে। পরে মামলার অভিযোগ কপিতে স্বাক্ষর দিতে না চাইলে আমার মেয়ে রিতা বেগমের লাশ মরা খলায় ফেলে দিবে। ত্রিশাল থানার এস.আই আব্দুর রব এর কাছে রিতা বেগমেরর মৃত্যু হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বক্তব্যের কি আছে থানায় এসে আমরা সরাসরি কথা বলি। এবং তিনি আরো বলেন থানায় ইডি মামলা হয়েছে। পোস্টমঢেম রিপোর্ট আসার পর আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। এব্যপারে ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ জাকিউর রাহমানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে পাওয়া যায়নি।