স্বাস্থ্য চিকিৎসা

যেভাবে মিলবে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি!

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি সহজে মলত্যাগ করতে সক্ষম হন না। সাধারণত এক-দুই দিন পরপর মলত্যাগের বেগ হওয়া এবং শুষ্ক ও কঠিন মল নিষ্কাশন কোষ্ঠকাঠিন্য বলে পরিচিত। ডাক্তারদের মতে কেউ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায় তখনই এই অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এ অবস্থায় পায়খানায় দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও মল পরিষ্কার হয় না। ডাক্তার বলেন যে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তা সারাই করার পরিবর্তে কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সেভাবে চলাই শ্রেয়।

বর্তমান বাজারে ফাস্ট ফুডসহ রিচ ফুডের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভোগা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তাই অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় ভোগছেন। যারা এ সমস্যায় ভোগছেন, বা এ সমস্যা নিয়ে চিন্তিত আজকের পর্বে থাকছে তাঁদের জন্য বিশেষ আয়োজন। চিকিৎসাসহ কিভাবে এ সমস্যা থেকে উৎরানো যাবে, তার টিপস দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ‘রোগ চিনতে চান’ ওই বইয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি।

নিচে তা তুলে ধরা হলো:

সাধারণত বেশিরভাগ মানুষ দৈনিক মলত্যাগ করে থাকে। কিন্তু কেউ কেউ সারাজীবন দু-তিন দিন পরপর পায়খানা করলেও তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। কাজেই কোষ্ঠকাঠিন্য শব্দটি সবার জন্য একই অর্থ বহন করে না। তবুও যদি পায়খানা না হওয়ার দরুন রোগীর অসুবিধা হয় তাহলে তা চিকিৎসার উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হবে। হঠাৎ যদি কারও পায়খানার অভ্যাস বদলে যায় এবং নতুন করে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয় তাহলে গুরুত্বের সঙ্গে পরীক্ষা করে তার কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করতে হবে। হঠাৎ পায়খানার অভ্যাস বদলে যাওয়া সাধারণতঃ কোনো না কোনো রোগের কারণ-তা কোষ্ঠকাঠিন্যই হোক অথবা নরম পায়খানা হোক।

যারা অন্য রোগবিহীন সাধারণ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাদের এই ব্যাপারগুলো দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

১) ফাইবার বা আঁশ যে খাদ্যে কম আছে (যেমন-শুধুমাত্র ভাত, মুড়ি, খই, ময়দা, চর্বি, তেল চিনি, মিষ্টান্ন, মাংস এবং মাছ ইত্যাদি) এরকমের খাদ্যের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হলে স্বভাবতই মল কম তৈরি হবে। তখন কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিবে।

২) যারা পানি খেতে অনভ্যস্ত, পানির অভাবে তাদের মল শক্ত হবে।

৩) যথেষ্ট পানি এবং ফাইবার জাতীয় খাদ্য (বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, তরকারি, ভূসিসহ আটার রুটি, বিভিন্ন ধরনের ফল, ডাল ইসবগুলোর ভূষি খাওয়ার পরও হঠাৎ করে যদি তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাহলে রোগীর অন্য রোগ হয়েছে কি না দেখতে হবে।

এ ছাড়া বয়স্ক মানুষের বিশেষ করে বৃহৎঅন্ত্রের সংকোচন ক্ষমতা হ্রাস পেলে পেলভিসের মাংসপেশী দুর্বল হলে এবং খাদ্য ও পানীয় গ্রহণে অনীহা হলে, বিষন্নতা রোগ বা বিভিন্ন মস্তিস্ক রোগে, বিশেষতঃ বয়স্ক মানুষের মধ্যে হঠাৎ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া মলভান্ড বা কোলনে টিউমার জাতীয় রোগ হলেও কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পরবর্তীতে নরম পায়খানা, এ ধরনের একটি চক্র শুরু হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের পায়খানায় যদি রক্ত মিশ্রিত থাকে তাহলে অবশ্যই sigmoidoscopy সহ কিছু পরীক্ষার দরকার হতে পারে।

চিকিৎসা

চিকিৎসা নির্ভর করবে কারণের উপর। সাধারণভাবে সহজ কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা খাবার এবং পানীয়ের মাধ্যমে করা যায়। আগে উল্লেখ করা ফাইবার জাতীয় খাদ্য যথা- প্রতিবারে খাওয়ার সঙ্গে শাকসবজি, প্রচুর ঝোল, সালাদ, ডাল, তুষিসত, আটা, রুটি, ওট্‌স, গুড় (ডায়াবেটিস না থাকলে), লাল বা ঢেঁকি ছাঁটা চাল, মাছ মাংস ঝোল করে খাওয়া, রোজ ৫-৬ বার প্রতিবার দুই মগ করে পানি খাওয়ার উপকারী।

বিশেষ করে শোবার সময় বড়ো দুই গ্লাস এবং ভোরে তিন মগ পানি খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। এর সঙ্গে ইসবগুলের ভুষি (যার প্রায় সবটুকু ফাইবার, এবং আসলে তেমন একটা ওষুধ নয়) প্রয়োজনে দুই থেকে চার চামচ পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে। বৃদ্ধ রোগীদের কোলনের সংকোচন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিসাকোডিল, মাঝে মাঝে প্রয়োজন হতে পারে। সেনা, ভেজিটেবল লেক্সেটিভ বা লেক্সিনা জাতীয় ওষুধও মোটামুটি নিরীহ। তবুও ওষুধের প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোলনের টিউমার, ক্যান্সার, বিষণ্নতা, মস্তিস্ক শুকিয়ে যাওয়া, মানসিক রোগ অবশ্য যথাযথ চিকিৎসা করতে হয়।

যাদের লিভার কিডনী অথবা হার্টের অসুখ থেকে পা ফুলা বা শরীরে পানি আটকে যায়, তারা বেশি পানি খাবেন না। এ ব্যাপারে নিজ ডাক্তারের সঙ্গে আগে পরামর্শ করে নিতে হবে।

সূত্র: ‘রোগ চিনতে চান’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button