উপ-সম্পাদকীয়

বিজয়ের গৌরব_সফিউল্লাহ আনসারী

আমাদের জীবনে ভালোবাসা আর বিশ্বাসের এক অনন্য উপমা বাংলাদেশ। স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘপথ পেড়িয়ে ষোলই ডিসেম্বরে বিজয় আমারে বাঙালী জাতীর জীবনে অবিস্মরনীয় দিন। পৃথীবির মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের এই বিজয় কোটি বাঙালীর সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া। এই বিজয়ের ক্ষণে সকল বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। কবির ভাষায়- ‘স্বাধীনতার পূর্ণতা এলো ষোল‘ই ডিসেম্বরে/ওগো শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তোমায় মনে পড়ে।’ আমাদের বিজয় যাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে সেই মহান শহিদ ও মুক্তিসেনাদের নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। শ্রেষ্ট সন্তানদের মূল্যায়নে আমরা কোনদিনই পিছ পা হবো না।
আমার দেশ, প্রাণের দেশ জন্মভূমি বাংলাদেশ। শহীদ গাজীর দেশ, ফুল-পাখী, পাহাড়-নদীর দেশ, পীর আউলিয়ার দেশ বাংলাদেশ। বিশ্বের মানচিত্রে অপরুপ সৌন্দর্যের লীলা ভূমি আমার বাংলা-আমার জন্মভূমি বাংলা। বাংলাদেশ নামের এই যে চিরচেনা স্বাধীন মানচিত্র তা অর্জন করতে দিতে হয়েছে লাখো প্রাণ, মা-বোনের ইজ্জত। অগণন ত্যাগ আর চরম মূল্যে পাওয়া এই দেশ। প্রাণ-সম্ভ্রম-সম্পদ, মহান ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমার বিজয়, আমার স্বাধীনতা। কোন কারনেই যেনো বিজয়ের গৌরব ভুলে না যাই, সেই প্রত্যয় আর চেতনাকে ধারন করে এগিয়ে যেতে হবে।
ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর আমার দেশের মুক্তি আর স্বাধীনতার ইতিহাস রক্তে লেখা । মায়ের ভাষা রক্ষার জন্যও পৃথিবীর ইতিহাসে এই বাঙালীরা রক্ত দিয়েছে, দিয়েছে জীবন বলিদান। সেই বাঙালী জাতীর বিজয়ের গৌরব ভুলে যাওয়া অসম্ভব এবং অকল্পনীয়। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে পৌনে তিন লক্ষ মা-বোনের ইজ্জ খোয়ানোর মর্মুদন্তু ইতিহাস বিজয়ের গৌরবকে করেছে আরো করুণ অর্থবহ। ১৯৭১ এ সারে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্বত্যাগের ইতিহাস। ১৬ ডিসেম্বর বাংলা-বাঙালীর জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। পৃথিবীর মানচিত্রে বীরের জাতী হিসেবে বাঙালীর মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠিত।
২৬ মার্চের আতংকিত-কলংকিত ও জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে পশ্চিমা হানাদার বাহিনীর অমানবিক মানবাধীকার লংঘনের যে ঘৃন্যতম ইতিহাসের জন্ম তা বাঙালী জাতীর মুক্তির প্রত্যয়ে গর্জে উঠার দৃপ্ত অধ্যায়। যা থেকে বিজয়ের লক্ষে পৌঁছুতে অগনিত লাশ, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অমূল্য পাওয়া স্বাধীনতা ও আমাদের বিজয়।
স্বাধীনতা নামক অতি পরিচিত শব্দটির প্রতি রয়েছে বাঙালী জাতীর এক অনন্য সাধারণ আবেগ, বেদনাসিক্ত শ্রেষ্ঠ পাওয়া। কবির ভাষায়- বিজয় দিবস ফিরে এলেই মন গর্জে উঠে ওরে/ /পাখির গানে, সকল প্রাণে জাগে, চেতনার ঢেউ সুরে। স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিজয়ের এই অর্জন শুধু একটি মানচিত্র নয়, এতে জড়িয়ে আছে আমাদের ঐতিহ্য, সম্প্রীতি, বন্ধন, বীরত্ব এবং চেতনা। যে চেতনায় বাঙালী জাতি বিশ্বমাঝে তাদের মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে আপন গৌরবে, স্বাধীন দেশ ও মুক্ত চিন্তায় নিজেকে মেলে ধরে। মহান ত্যাগের কাংখিত বিজয় চিরকালের-চির অম্লান হয়ে রবে চিরদিন।
বিজয়ের এই দিনে আমাদের আমাদের প্রত্যয় হোক অহিংসার, মুক্ত চিন্তার বিকাশের, অর্থনৈতিক মুক্তির, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার, শিক্ষা-শান্তি-সংস্কৃতিতে এগিয়ে যাবার, সংকীর্ণতাহীন, দেশের কল্যাণ সাধনের গুরুত্ববহ পদক্ষেপ এগিয়ে যাওয়া। যেখানে ধর্মীয় কুপমন্ডুতা আর রাজনৈতিক প্রতি হিংসা থাকবেনা। গণতান্ত্রিক মুল্যবোধের শিক্ষায় ও আদর্শে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ দেশ প্রেমে উজ্জীবিত উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। স্বাধীনতার প্রত্যাশা আর বিজয়ের প্রাপ্তির হিসেবে যেনো হয় আমাদের দেশ ও মানুষের সার্বিক উন্নয়ন ও সার্বভৌমত্বের খাতিরে।
তথ্য প্রযুক্তির এ সময়ে বিজ্ঞানের উন্নততর প্রযুক্তির সঠিক ও সুষম ব্যবহারের মাধ্যমে সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে উজ্জল সম্ভাবনা আর উন্নয়নের ধারাকে অব্যহত ও দ্রুততর করতে পারলে আমাদের বিজয়ের গৌরব অটুট থাকবে। স্বাধীনতার সুফল থাকবে রাষ্ট্রের-সমাজের প্রতিটা সেক্টরে। বিজয়ের দিনে আমাদের চাওয়া-বাংলাদেশ যেনো বিশ্বের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মডেল হয়ে উঠতে পারে আপন স্বকীয়তায়। ভিবেদহীন সমাজ গঠনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যেতে চাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়। দেশের প্রতি প্রত্যেকটা জনগনে ভালোবাসা আর মমত্ববোধের স্বার্থক প্রতিফলনই হোক মহান স্বাধীনতার সুফল এবং প্রত্যাশিত বিজয়ের প্রাপ্তি।
‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসী’। কবি গুরুর উপলব্দি আমাদেরও। জাতীয় সংগীতের সুরে জেগে উঠে প্রাণ। বিজয় বাঙালীর গৌরব এবং চেতনা। আর এ গৌরবকে জীবনের প্রতিটি বাঁকে স্বাধীনতার মূল্যকে ঐক্যবদ্ধ চেতনায় দেশের কল্যাণে ধারন করতে হবে সকল পরিকল্পনায়, সকল কাজে। স্বপ্নের স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলকে সততা ও দেশপ্রেমের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও লক্ষ্যসমূহ জাগ্রত রেখে দুর্ণীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে। শোষণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এবং দেশের সকল মানুষের অধীকার আদায়ে সচেষ্ঠ থাকবে প্রত্যেক দেশ প্রেমিক নতুন প্রজন্ম।
মহান বিজয় দিবসে আবারো শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি দেশ মার্তৃকার সেই সব গর্বিত সন্তানদের, যাঁদের আÍত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, পেয়েছি বিজয়। আমরা আজ স্বাধীন জাতি হিসেবে গর্বিত। আমাদের অস্তিত্ব জুড়ে রয়েছে সেই সব বীর শহিদদের অমর কৃতিত্ব। স্বাধীনতা বিরোধী চক্রান্ত নস্যাত করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তরুণ প্রজন্ম সব সময় প্রস্তুত।
লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতা। জীবন ও ইজ্জতের দামে পাওয়া মহান বিজয়। এ গৌরব ভূলে যাওয়ার নয়। স্বাধীনতার চেতনাকে সমুন্নত রাখতে আমাদের প্রজন্মকে আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। ভাবনা এবং চেতনায় ধারন করতে হবে দেশপ্রেম। তবেই সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ আমরা পাবো বিজয়ের উৎসবে। বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে আমরা রবো বিজয়ের গৌরবে।
বর্তমান প্রজন্মের প্রত্যয় এবং চাওয়া হোক মুক্তিযোদ্ধের চেতনাকে ধারন করে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তারুণ্যের উচ্ছাসে-উদ্দপীনায় উদ্ভাসিত হোক আমাদের মহান বিজয় দিবস। প্রত্যাশার সবটা জুড়ে থাক প্রাপ্তির স্বাধীনতা, থাক বিজয়ের গৌরবে অমলিন। আমরা জেগে ওঠি বিজয়ের গৌরবে বীর বাঙালীর পরিচয়ে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button