বিভিন্ন দিবসসংগঠন সংবাদ

দলিত নারীর প্রতি নির্যাতন এবং বৈষম্য নিরসনে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একত্রে কাজ করার আহ্বান

আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৯

 

প্রেস বিজ্ঞপ্তি-জাত-পাত ও পেশাগত পরিচয়ের কারণে বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ লক্ষ দলিত জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হয় যার অর্ধাংশই নারী। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের গৃহিত বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নারীর মানবাধিকার উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অবদান যেমন আমাদের গর্বিত করে তার বিপরীতে সমাজের দলিত নারীদের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি আমাদের সমানভাবে ব্যথিত করে। দলিত নারীর পিছিয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের প্রতি বৈষম্য। সমাজে দলিত নারীরা সাধারণত দুইভাবে বৈষম্যের শিকার হয়। প্রথমত দলিত এবং নারী হিসেবে বৃহত্তর সমাজে এবং দ্বিতীয়ত নারী হিসেবে নিজ জনগোষ্ঠীতে। পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতা, বঞ্চনা ও বৈষম্যকে পেছনে ফেলে তাদের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন। ফলে বৃহৎ সমাজের নারীরা যেখানে ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে যায় সেখানে দলিত নারীরা তাদের তুলনায় অনেক পেছনে পড়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৯ উপলক্ষে আজ ০৭ মার্চ, ২০১৯ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০:৩০ ঘটিকায় জাতীয় প্রেস ক্লাব এর সামনে দলিত নারী ফোরাম আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দলিত নারী ফোরাম এর সভাপতি,রাধা রানী দাসের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন মনি রানী দাস, সাধারণ সম্পাদক, দলিত নারী ফোরাম. ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম). তামান্না সিং বাড়াইক, চা-শ্রমিক নেত্রী, কৈলাশ রবিদাস, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, বিডিইআরএম এবং বিভিন্ন দলিত কলোনী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলো
দলিত নারীর প্রতি নির্যাতন ও বৈষম্য নিরসনে মানববন্ধনে বক্তারা নারীর উচ্চশিক্ষা এবং নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির উপর গুরত্ব আরোপ করেন। তারা বলেন, বর্তমান সরকার নারী-বান্ধব সরকার এবং নারীদের শিক্ষার প্রতি বর্তমানে অনেক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এখন যা প্রয়োজন তা হলো পরিবার পর্যায়ে শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা। এক্ষেত্রে দলিত কিশোরীদের বাবা-মায়েদের সচেতন করার মাধ্যমে শিক্ষায় দলিত নারীদের অভিগম্যতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমান দলিত জনগোষ্ঠীকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। সুতরাং দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতি শিক্ষা ক্ষেত্রে বাধাসমূহ দূর করতে হবে। বক্তারা বলেন, দলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাল্য বিবাহের হার অনেক বেশি। সুতরাং দলিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষার পথ সুগম করতে হলে সর্বপ্রথম বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করা দরকার। এছাড়া নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সাথে তাদের পরিবারে এবং সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের স্বাধীনতা উপভোগের বিষয়টি জড়িত। সুতরাং শিক্ষার পাশপাশি দলিত নারীদের জন্য কর্মমূখী দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়ে সরকারকে আরো মনোযোগি হবার জন্য মানববন্ধনে আহ্বান জানানো হয়।
মানববন্ধন ও সমাবেশে দলিত নারী ফোরাম এর পক্ষ থেকে নি¤œলিখিত দাবীগুলো জানানো হয়:

স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সকল স্তরে উন্নয়ন বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় দলিত নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;
দলিত নারী যাতে নিজেদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে পারে সে জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে;
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের জন্য জাতীয় বাজেটে দলিত নারীদের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখতে হবে;
জাত-পাত ও পেশাভিত্তিক বৈষম্য প্রতিরোধে আইন কমিশন সুপারিশকৃত প্রস্তাবিত ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে;
নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;
স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দলিত নারীদের এসব উন্নয়ন কর্মসূচিতে সুনির্দিষ্টভাবে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে;
সরকারি উদ্যোগে নির্মাণকৃত ভবনসমূহে সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভায় চাকুরী আছে কি নেই সে বিবেচনা না করে সকল দলিতদের জন্য আবাসন সুবিধা দিতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button