ভালুকা নিউজ ডট কম, ডেস্ক: সুলতান মনসুরের পর গতকাল মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) মোকাব্বির খান শপথ নেয়ায় গণফোরাম অস্বস্তিতে পড়েছে।
বাংলাদেশে গণফোরামের আরেক নেতা মোকাব্বির খান সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরীকদের মধ্যে আস্থার সংকট আরো তীব্র হবে বলে এই জোটের নেতাদের অনেকে বলেছেন।
একইসাথে তারা বলেছেন, মি খানের এই শপথ বিএনপির নির্বাচিত এমপিদের ওপর এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করতে পারে।
বিএনপি থেকে যে ছয়জন এমপি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্যদের দলের কেন্দ্রীয় এবং জাতীয় রাজনীতিতে কোনো অবস্থান নেই। ফলে, গণফোরামের দুই নেতার শপথের পর, তাদের মাঝে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে একটা মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে ধারণা করছেন দলের নেতৃত্ব।
অন্যদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিএনপি নেতা বিবিসিকে বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কোনো শর্তের প্রশ্ন এলে বিএনপি থেকে নির্বাচিতদের সংসদে যাওয়া বা না যাওয়ার বিষয়কে কৌশল হিসেবে ব্যবহারের একটা চিন্তাও দলে রয়েছে। সোমবার দুপুরে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
খালেদা জিয়ার মুক্তি
ড: কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম এবং বিএনপিসহ কয়েকটি দলের এই জোট গত ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে তাদের নির্বাচিত এমপিদের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে সিদ্ধান্ত বদলানোর কোনো চিন্তা রয়েছে বলে জোটের কোনো নেতাই এখনও বলছেন না।
কিন্তু বিএনপি এখন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়কে একমাত্র ইস্যু হিসেবে নিয়ে এগুতে চাইছে। সেজন্য বিভিন্ন কৌশল নিয়ে দলে আলোচনা রয়েছে।
দলটির নেতাদের অনেকে বলেছেন, তাদের দল বার বার সংকটে পড়ছে। তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না। এমনকি তাদের দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারেও তারা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি।
তাই দলের অনেক নেতা এখন মেনেই নিচ্ছেন যে তাদের নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।
সে কারণেই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সমঝোতার প্রয়োজন হলে সেখানে বিএনপি সংসদে যোগ দিতে পারে এমন একটা চিন্তা তাদের কারো কারো মধ্যে রয়েছে।
তবে খালেদা জিয়া কোনো সমঝোতা চাইবেন কিনা, সেটি তাদের মাঝে একটা বড় প্রশ্ন।
তারা মনে করেন, খালেদা জিয়া নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। সেজন্য তার সাথেই কথা বলে বিএনপি নেতাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের সাথে তাদের দলের কারও সাথে কোনো আলোচনা, আপোষ বা সমঝোতা হচ্ছে না।
মি:আলমগীর বিবিসিকে বলেন, “উনিতো শুধু আমাদের চেয়ারপারসন নন। তিনি দেশের গণতান্ত্রিক নেত্রী। সেক্ষেত্রে তাঁর মুক্তি জরুরী। সেজন্য আমরা সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে আন্দোলনের ব্যবস্থা নিচ্ছি… আন্দোলন মানেতো শুধু হরতাল নয়।”
চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারে নাকি কেরাণীগঞ্জে কারাগারে নেয়া হবে? এই প্রশ্নে সরকার এখনও কিছু বলেনি।
তবে এবার নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয়, তখন তার ব্যহারের সব জিনিস হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত বছর এই হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল, সেসময় সব জিনিস আনা হয়নি।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, একটা যোগাযোগের ভিত্তিতেই খালেদা জিয়াকে এখন হাসপাতালে আনা হয়েছে।
এই সূত্রগুলো ধারণা করছে, কোনো সমঝোতা না হলে সরকার খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারে না নিয়ে কেরাণীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিতে পারে।
গণফোরামে মতপার্থক্য
দল এবং জোটের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের পর এখন গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খানও সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ শপথ নেয়ার সাথে সাথেই গণফোরাম তাকে দল থেকে বহিস্কার করেছিল। তবে এখন মোকাব্বির খান শপথ নেয়ার পর দলটি এখনও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
মি: খান দাবি করেছেন, তিনি দলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই শপথ নিয়েছেন। “দলের প্রেসিডিয়ামে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আমি শপথ নেবো। এর ভিত্তিতে আমি শপথ নিয়েছি।”
তবে এই বক্তব্য সঠিক নয় বলে বলছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাদের অনেকে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গণফোরাম শপথ না নেয়ার অবস্থানেই রয়েছে।
কিন্তু দলটির অন্য একাধিক নেতা বলেছেন,শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের দলের শীর্ষ নেতা ড: কামাল হোসেনের মৌন সমর্থনে আছে বলে তাদের মনে হয়েছে।
৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ড: কামাল হোসেনকে নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথা বলেছেন বিএনপির একাধিক নেতা।
এখন গণফোরামের নির্বাচিত দু’জনই শপথ নেয়ায় সেই আস্থার সংকট আরও বাড়বে বলে এই জোটের নেতাদেরই অনেকে বলছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছিলেন, বিএনপিতেও নেতৃত্বের সাথে তৃণমুলের আস্থার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
“বিএনপির হাইকমান্ডের ওপর তৃণমুলের যে পার্থক্য বা আস্থার অভাব হয়েছে। এখন তৃণমুল আরও বেশি অসন্তুষ্ট হবে।অ নেকে বলেছে যে, ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে নির্বাচনে যাওয়াটাই ভুল হয়েছে। সেই ধারণাটা তাদের মধ্যে আরও দৃঢ় হবে।”
খবর-বিবিসি